কলকাতা, 10 অগস্ট: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ডাক্তারির ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে নাম জড়িয়ে গিয়েছে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের ৷ সঞ্জয় দাস নামে যে যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে, সেই যুবক সিভিক ভলান্টিয়ার বলে অভিযোগ ৷ সত্যিই কি ধৃত অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার ? শনিবার এই ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েলকে ৷ তবে এই নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানাননি কলকাতার পুলিশ কমিশনার ৷ তিনি শুধু বলেন, ‘‘ধৃত আমাদের কাছে শুধুই একজন ক্রিমিনাল ৷’’
সাংবাদিক বৈঠকে কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল (ইটিভি ভারত) আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগের চারতলায় একটি সেমিনার হলের মধ্যে থেকে শুক্রবার সকালে ডাক্তারির এই পড়ুয়ার দেহ উদ্ধার হয় ৷ তার পর থেকেই এই নিয়ে উত্তাল পরিস্থিতি ৷ এই নিয়ে এ দিন সকালে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল ৷ সঙ্গে ছিলেন কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত নগরপাল (1) মুরলিধর শর্মা ৷
সেখানে বিনীত গোয়েল বলেন, ‘‘ওই ডাক্তারি ছাত্রীর দেহের ময়নাতদন্তের সময় ভিডিয়োগ্রাফি করা হয় । ময়নাতদন্তের সময় সেখানে সাক্ষী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা । পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন । পরিবারের সদস্যরা এই বিষয় যেকোনও সাহায্য আমাদের থেকে চাইতে পারেন ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এই ঘটনায় আমরা একটা সিট গঠন করেছি । চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি । পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছি । আজও পুলিশ ঘটনাস্থলে আছে । আমরা এই ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছি ।’’
উল্লেখ্য, এই ঘটনার খবর কলকাতা পুলিশ প্রথম পায় শুক্রবার সকাল সাড়ে 10টা নাগাদ ৷ প্রথম খবর আসে টালা থানায় ৷ কারণ, ওই থানা এলাকার মধ্যেই পড়ছে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ৷ তার পরই পুলিশ গিয়ে দেহ উদ্ধার করে৷ শুরু হয় তদন্ত ৷ সেই তদন্ত ও ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে উঠে আসে একাধিক তথ্য ৷
কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড শাখা জানিয়েছে, নির্যাতিতার ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে ওই তরুণীর গলার হাড় ভাঙা ছিল । ধস্তাধস্তির প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে । ভোর 3টে থেকে 4টের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়েছে । গলায় রক্তের দাগ মিলেছে । পাশাপাশি তাঁর যৌনাঙ্গে ক্ষতচিহ্ন মিলেছে । অর্থাৎ তদন্তকারীরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত যে ওই পড়ুয়া চিকিৎসকের মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাঁর গলা টিপে ধরা হয়েছিল ।
ইতিমধ্যেই লালবাজারের তরফ থেকে শুক্রবার নিহত ডাক্তারির ছাত্রীর সহকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে ৷ তার ভিত্তিতে এবং পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে যে ওই মহিলা পড়ুয়া চিকিৎসক বৃহস্পতিবার রাতে কর্মরত অবস্থায় ছিলেন । রাত 2টোর পর তিনি রাতের খাবার খেয়ে উপরের সেমিনার হলে বিশ্রাম নিতে যান । তারপর শুক্রবার সকালে তাহলে চার তলা থেকে ওই চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয় । দেহ প্রায় বস্ত্রহীন ছিল বলেই জানা গিয়েছে ।
এখন পুলিশ খুঁজে দেখছে যে কেন ধৃত সঞ্জয় দাস এই কাজ করলেন ? তাঁর কি পুরনো কোনও শত্রুতা ছিল ওই ছাত্রীর সঙ্গে ? নাকি এর নেপথ্যে রয়েছে অন্য কোনও কারণ ? তদন্ত এগোলে নিশ্চয় এই তথ্যগুলি সামনে আসবে ৷