কলকাতা, 3 জানুয়ারি: গার্ডেনরিচে নির্মীয়মান বহুতল ভেঙে 13 জনের মৃত্যুর ঘটনায় কাজে ফেরানো হচ্ছে নিলম্বিত হওয়া তিন ইঞ্জিনিয়ারকে ৷ গত বছর 17 মার্চের ঘটনায় কলকাতা পুরনিগমের বিল্ডিং বিভাগের তিন ইঞ্জিনিয়ারকে কাজে গাফিলতির অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছিল ৷ 9 মাস পর তাঁদের কাজে ফেরার নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে পুরনিগম ৷
কলকাতা পুরনিগমের কমিশনার ধবল জৈনের জারি করা নির্দেশিকায় সেই তিন ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে সাসপেনশন তুলে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে ৷ সেখানে অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত ঘোষ, এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দেবাদিত্য পাল এবং সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার শুভম ভট্টাচার্যকে দ্রুত কাজে যোগ দিতে নির্দেশ নিয়েছেন কমিশনার ৷
তবে, গোটা বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে এবং এ নিয়ে বিভাগীয় তদন্তের রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়া হবে ৷ তাই পরবর্তী সময়ে আদালত যে নির্দেশ দেবে, সেই মতো ব্যবস্থা নেবে বলে জানানো হয়েছে কর্তৃপক্ষের তরফে ৷
অ্যাসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত ঘোষের সাসপেনশন প্রত্যাহারের বিজ্ঞপ্তি ৷ (ইটিভি ভারত) উল্লেখ্য, গত বছর 17 মার্চ গার্ডেনরিচ এলাকায় একটি নির্মীয়মান বহুতল ভেঙে পড়ে ৷ বহুতলে চাপা পড়ে যান অনেকে ৷ তারপর বেশ কয়েকদিন উদ্ধার কাজ চলে ৷ ওই ঘটনায় মোট 13 জনের মৃত্যু হয় ৷ এই ঘটনায় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, প্রোমোটারের এবং কলকাতা পুরনিগমের বিল্ডিং বিভাগের বিরুদ্ধে সরব হয় বিরোধী দলগুলি ৷
এই ঘটনা নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার, ঘিঞ্জি এলাকায় বেআইনিভাবে বহুতল নির্মাণ-সহ একাধিক অভিযোগ উঠে আসে ৷ কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধেও বেআইনি আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তোলে বিরোধীরা ৷ তাঁর পদত্যাগের দাবিও তোলা হয় ৷ এরপর এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আদালতের মামলাও হয় ৷
সাব-অ্যাসিসট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার শুভম ভট্টাচার্যের সাসপেনশন প্রত্যাহারের বিজ্ঞপ্তি ৷ (ইটিভি ভারত) কলকাতা পুরনিগম ও পুলিশ উভয় নিজেদের মতো তদন্ত শুরু করে ৷ সেই বিভাগীয় তদন্তে ওই বরো এলাকার বিল্ডিং বিভাগের এক এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার এবং একজন সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয় ৷ পুর কর্তৃপক্ষের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হন কেএমসি-র একাংশ ইঞ্জিনিয়ার ৷ বিল্ডিং বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ডিজি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন তাঁরা ৷
কিন্তু, তার কয়েকমাসের মধ্যেই সেই আধিকারিকের পদোন্নতি হয় এবং তিনি স্থায়ী ডিজি হিসেবে নিযুক্ত হন ৷ তারপরেই জোড়াল আন্দোলনে নামেন ইঞ্জিনিয়াররা ৷ তাঁরা অভিযোগ করেন, বিনা বিচারে তিন ইঞ্জিনিয়ারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে ৷ কেএমসি-তে এ নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল, ওয়ার্ক সাসপেনশনের মতো কর্মসূচিও নেওয়া হয় ৷ শেষমেষ নয় মাস পর কলকাতা পুরনিগমের কমিশনার নির্দেশিকা জারি করে ওই তিনজনের সাসপেনশন তুলে নিলেন ৷
এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দেবাদিত্য পালের সাসপেনশন প্রত্যাহারের বিজ্ঞপ্তি ৷ (ইটিভি ভারত) এ নিয়ে কলকাতা পুরনিগমের এক আধিকারিক বলেন, "বিভাগীয় তদন্ত চলছে ৷ কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে ৷ সেই রিপোর্ট আদালতের কাছেও দেওয়া হবে ৷ ইতিমধ্যে, চার্জ গঠন হয়েছে ৷ তাই কাজে ফেরানো হয়েছে ওই তিনজনকে ৷ এবার তদন্ত নিজের মতো চলবে ৷ গাফিলতির প্রমাণ থাকলে কর্তৃপক্ষ ও আদালত সিদ্ধান্ত নেবে ৷"
কেএমসি ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড অ্যালয়েড সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মানস সিনহা বলেন, "চার্জ গঠনের পরেও অন্যায় ভাবে সাসপেন্ড করে রাখা হয়েছিল এত মাস ৷ নিয়ম মাফিক সাসপেনশন তুলে নেওয়া দরকার ছিল ৷ সেই নিয়ে আমরা আন্দোলন করি ৷ শেষমেষ ওরা কাজে ফিরছে ৷ বিভাগীয় তদন্ত চলুক ৷ দোষী প্রমাণিত হলে আইন মেনে ব্যবস্থা নিক ৷"