আসানসোল, 7 সেপ্টেম্বর: রাজ্য সরকারের প্রকল্প রয়েছে 'জল ধরো জল ভরো' ৷ বৃষ্টির জলকে সংরক্ষণ করার জন্য বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার ৷ বিভিন্ন ব্লক অফিসের তত্ত্বাবধানে পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে মাটির তলায় জলস্তর বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গড়ে উঠছে ৷ এছাড়াও, নতুন বাড়িঘর যারা বানাচ্ছেন, তাঁদের বিশেষ পদ্ধতিতে জলস্তর বাড়ানো কিংবা জল সংরক্ষণের জন্য প্রকল্প তৈরি করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ৷ কিন্তু, পূর্ব ভারতের প্রথম 'বৃষ্টি বাড়ি' প্রকল্প পড়ে রয়েছে অবহেলায়, আগাছায় ৷
অবহেলায় পড়ে বাম জমানায় তৈরি পূর্ব ভারতের প্রথম 'বৃষ্টিবাড়ি' (ইটিভি ভারত) 2009 সালে বাম আমলে সালানপুরে তৈরি হয়েছিল 'বৃষ্টি বাড়ি' প্রকল্পের একটি মডেল ৷ একেবারে সালানপুর বিডিও অফিসের পাশেই অসাধারণ এই মডেলটি তৈরি করা হয়েছিল ৷ হায়দরাবাদের একটি সংস্থা এই মডেলটি তৈরি করেছিল ৷ সেই সময় পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মডেল এই প্রকল্পটি পরিচালনা করতে ৷ উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় গ্রামবাসীদের মডেল প্রকল্প দিয়ে বোঝানো বাড়ি-ঘর তৈরি করার সময় কীভাবে নিজের বাড়িতেই খুব সহজে বৃষ্টি বাড়ি প্রকল্প তৈরি করা যায় ৷
বৃষ্টির জলকে কীভাবে ধরে রাখবেন তাঁরা এবং তা কীভাবে দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগানো যায় ৷ এইভাবে সচেতন করবার জন্যই এই মডেলটি হাতে-কলমে মানুষজনকে শেখানো হতো ৷ সেই সময় প্রচুর মানুষ সচেতন হয়ে নিজের বাড়িতে, বৃষ্টি বাড়ি প্রকল্প তৈরিও করেছিলেন ৷ কিন্তু, রাজ্যে পরিবর্তনের পরেই পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চকে সরিয়ে দেওয়া হয়, ওই বৃষ্টি বাড়ি প্রকল্পের পরিচালনার দায়িত্বের থেকে ৷ ফলে নতুন করে ওই প্রকল্পটি পরিচালনা করার কোনও বিশেষজ্ঞ পাওয়া যায়নি ৷ অর্থ সহায়তাও বন্ধ হয় ৷ যার ফলে বন্ধই হয়ে যায় সচেতনতা মূলক প্রচার ৷
বর্তমানে আগাছার জঙ্গলে ঢেকে রয়েছে পূর্ব ভারতের প্রথম 'বৃষ্টি বাড়ি' প্রকল্প ৷ এমনকি প্রকল্পের নামের ফলকও ঢেকেছে আগাছায় ৷ ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ইতিহাস খোঁজার স্বার্থে সেই আগাছা সরিয়ে পরিষ্কার করে ছবি তুলে নিয়ে এসেছে ৷ সেই ফলকে লেখা রয়েছে 2009 সালের 7 ফেব্রুয়ারি রাজ্যের তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন উদ্বোধন করেছিলেন পূর্ব ভারতের প্রথম এই 'বৃষ্টি বাড়ি' প্রকল্পের ৷ উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের তৎকালীন আরেক মন্ত্রী বংশগোপাল চৌধুরী ৷
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্য কমিটির সদস্য কিংশুক মুখোপাধ্যায় বলেন, "2009 সালে এই প্রকল্প তৈরি হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা এই প্রকল্পের পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ৷ তাঁরাই মানুষজনকে বোঝাতেন, কীভাবে নিজের বাড়িতে 'বৃষ্টি বাড়ি' প্রকল্প তৈরি করতে পারেন খুব সহজে ৷ সরকার বদলের পর যথারীতি আমাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ৷ কিন্তু, আমাদের কাজ আমরা করে যাচ্ছি ৷ আমরা মানুষজনকে এখনও পর্যন্ত সচেতন করছি ৷ আমার নিজের বাড়িতেও 'বৃষ্টি বাড়ি' রয়েছে ৷ এছাড়াও সোদপুর হাইস্কুল থেকে শুরু করে ফুলটি কলেজ পর্যন্ত আমরা 'বৃষ্টি বাড়ি' তৈরি করার চেষ্টা করছি ৷ আমাদের সদস্যদের বাড়িতে যেমন 'বৃষ্টি বাড়ি' হয়েছে, তেমনি সাধারণ অনেক বাড়িতে 'বৃষ্টি বাড়ি' হয়েছে ৷ কিন্তু, দুর্ভাগ্য পূর্ব ভারতের প্রথম 'বৃষ্টি বাড়ি' পড়ে রয়েছে আগাছার জঙ্গলে ৷"
বিষয়টি নিয়ে সালানপুরের বিডিও কোনও মন্তব্য করতে চাননি। যদিও পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা ওই অঞ্চলের বাসিন্দা মহম্মদ আরমান বলেন, "বিষয়টি আমরা অনেকদিন ধরেই জানি। কিন্তু বাম আমলের কোনও জিনিসই তো সফল নয়। সেই কারণে ওরা ওদের মতো করেছে। আমরা আমাদের মতো আবার তৈরি করব সেই প্রকল্প। আমাদের সরকার বলছে জল সংরক্ষণ করার কথা। আমরাও মানুষজনের কাছে সচেতনতার বার্তা পৌঁছতে আবার নতুন করে "বৃষ্টি বাড়ি" প্রকল্প তৈরি করব।