মালদা, 26 অক্টোবর: প্রথমে হচ্ছে জ্বর ৷ ওষুধ খেলে দু'তিনদিনের মধ্যে সেরেও যাচ্ছে ৷ কিন্তু জ্বরের সঙ্গে শুরু হওয়া গোটা শরীরে ব্যথা থেকে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ৷ দু'মাসেও সেই ব্যথা সারছে না ৷ গ্রামবাসীরা স্থানীয় চিকিৎসককে দেখিয়েছেন, হাসপাতালে গিয়েছেন ৷ সব জায়গা থেকে ওষুধ দেওয়া হলেও ব্যথার উপশম নেই ৷
দু'একজন নয়, গ্রামের 80 শতাংশেরও বেশি মানুষ এই অসুখে আক্রান্ত ৷ বিষয়টি জানতে পেরে জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে গ্রামে মেডিক্যাল ক্যাম্প করা হয়েছে ৷ অসুস্থদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে ৷ তার রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি ৷ কিন্তু এই জ্বর যে ডেঙ্গি কিংবা ম্যালেরিয়া নয়, তা নিয়ে নিশ্চিত স্বাস্থ্য দফতর ৷ স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করছেন, হবিবপুর ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কলাইবাড়ি গ্রামে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে ৷
চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব বলে সন্দেহ স্বাস্থ্য দফতরের (ইটিভি ভারত) কলাইবাড়ি গ্রামের চারটি পাড়ায় হাজার পাঁচেক মানুষের বসবাস ৷ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বর্ধিষ্ণু গ্রাম ৷ মাস তিনেক ধরে এই গ্রামেই হানা দিয়েছে জ্বর ৷ গ্রামের বাসিন্দা অসিত সরকার বলছেন, "মাস দুয়েক আগে হঠাৎ সামান্য জ্বর হয় ৷ স্থানীয় চিকিৎসকের ওষুধ তিনদিন খাওয়ার পর জ্বর কমে যায় ৷ কিন্তু এখনও ব্যথা ঠিক হয়নি ৷ শরীরের প্রতিটা গিটে ব্যথা ৷ পায়ের ব্যথায় বসতে কিংবা উঠতে পারি না ৷ ব্যথা সারাতে বুলবুলচণ্ডীর এক চিকিৎসককেও দেখাই ৷ তিনি ওষুধ দেন ৷ কিন্তু সেই ওষুধ খেয়েও ব্যথা কমেনি ৷ ব্যথার জন্য শৌচাগারেও বসতে পারি না ৷ দেওয়াল ধরে বসতে হয় ৷ ওঠার সময় বালতিতে ভর দিয়ে উঠতে হয় ৷ গ্রামের অধিকাংশই এই জ্বর আর ব্যথায় ভুগছে ৷ আমরা ব্লকে রিপোর্ট করার পর গত পরশু ডাক্তাররা এসেছিলেন ৷ ওষুধপত্র দিয়ে গিয়েছেন ৷ কিন্তু ওই প্যারাসিটামলে কোনও কাজ হবে না ৷"
একই উপসর্গ গ্রামের বিষ্ণুপদ সরকারের ৷ তাঁর কথায়, "দু'তিনদিন জ্বরের পরেই শুরু হচ্ছে প্রবল ব্যথা ৷ সমস্ত গিটে ব্যথা ৷ ব্যথার জন্য বুলবুলচণ্ডী হাসপাতালের ডাক্তারকে দু'তিনবার ভিজিট দিয়ে দেখিয়েছি ৷ ওষুধ খেলে একটু ভালো থাকি, ওষুধ শেষ হলে ফের ব্যথা ৷ রক্ত পরীক্ষা করেও কোনও দোষ পাওয়া যায়নি ৷ ডেঙ্গি কিংবা ম্যালেরিয়া হয়নি ৷ ব্লাড সুগারও নেই ৷ গতকাল বুলবুলচণ্ডী থেকে একজন ডাক্তার এসেছিলেন ৷ তিনি নাকি দু'একজনের রক্ত নিয়ে গিয়েছেন ৷ আমি ঠিক জানি না ৷"
জ্বর ও ব্যথায় কাবু মালদার গ্রাম (নিজস্ব চিত্র) জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ্ত ভাদুড়ি বলেন, "আমরা ঘটনাটি পর্যবেক্ষণে রেখেছি ৷ আক্রান্ত 50 জনের রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে ৷ তার রিপোর্ট এখনও আসেনি ৷ রিপোর্ট আসলে জ্বরের কারণ সঠিকভাবে জানা যাবে ৷ তবে রোগের যে উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে এটা চিকুনগুনিয়া ৷ ওখানে কিছু এডিস মশাও পাওয়া গিয়েছে ৷ ওই গ্রামে অনেকদিন ধরেই মেডিক্যাল ক্যাম্প চলছে ৷ মূলত বড়রাই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ৷ তবে রোগটি জটিল কিছু নয় ৷"