মালদা, 18 জানুয়ারি: এই সময় তাঁর আসার কোনও কথাই ছিল না ৷ শুধুমাত্র আলিপুরদুয়ার সফর করার কথা ছিল ৷ হঠাৎ করেই প্রশাসনের কাছে খবর আসে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলিপুয়ারদুয়ারের আগে মালদা সফর করবেন ৷ রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের সফরের খবর পেতেই ত্রস্ত জেলা প্রশাসন ৷
প্রশাসন সূত্রে খবর, গভীর রাত পর্যন্ত চলছে বিভিন্ন দফতরের ফাইল তৈরির কাজ ৷ 22 জানুয়ারি প্রায় 400 কোটি টাকার সরকারি কাজের উদ্বোধন ও শিল্যানাস করতে পারেন তিনি ৷ তবে মুখ্যমন্ত্রী মালদা সফরের কথা শোনামাত্র জল্পনা শুরু হয়েছে মালদার পুলিশ-প্রশাসন থেকে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে ৷
তৃণমূলের একটি সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, মালদা জেলায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাগুলিতে রীতিমতো বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী ৷ তাঁর নির্দেশে ইতিমধ্যে জেলায় ঘুরে গিয়েছেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে গৌতম দেব, এমনকি রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব কুমার ৷ দেখা করেছেন নিহত তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার ওরফে বাবলার স্ত্রী চৈতালি ঘোষ সরকারের সঙ্গে ৷
এদিকে দুলাল সরকার খুনের রেশ কাটতে না কাটতেই কালিয়াচকে তৃণমূল নেতা হাসা শেখ খুন হয়ে যান ৷ পরদিন রতুয়ার সামসীতে খুন হন এক বৃদ্ধ ৷ এই পরিস্থিতিতে পুলিশ-প্রশাসন থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের অনেকের অনুমান, মালদায় বড়সড় কোনও ঘোষণা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ বড়সড় রদবদল করতে পারেন পুলিশ কিংবা প্রশাসনিক স্তরে ৷ দলীয় স্তরেও একই পদক্ষেপ করতে পারেন তিনি ৷
যদিও শুক্রবারই মালদায় এসে জেলা পুলিশকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন ডিজি রাজীব কুমার ৷ জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক দু’টি ঘটনায় জেলা পুলিশ সঠিকভাবেই তদন্ত করছে ৷ তার পরও কি পুলিশে বড় রদবদল হবে ? এই প্রশ্ন নিয়েও চর্চা চলছে ৷
এক পুলিশকর্তার কথায়, “প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা সব দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত করছি৷ দুলাল সরকার খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ পলাতক তিন অভিযুক্তর সন্ধান পেতে সবরকমের চেষ্টা চালানো হচ্ছে ৷ আশা করছি, দ্রুত তাদের সন্ধান মিলবে ৷ আর কালিয়াচকের খুন কাণ্ডের মূল মাথা জাকির শেখকেও গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ সামসী হাটে বৃদ্ধ খুনের মামলাতেও মূল অভিযুক্তকে ধরা হয়েছে ৷ 21 জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী কী পদক্ষেপ করবেন জানা নেই ৷ তবে তাঁর যেকোনও পদক্ষেপ মেনে চলতে আমরা বাধ্য ৷”
মুখ্যমন্ত্রীর মালদা সফর নিয়ে এখনও পর্যন্ত জেলাশাসক কিংবা পুলিশ সুপারের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি ৷ তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি বলেন, “এটা মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি সফর ৷ এই সফর নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই ৷ যা বলার প্রশাসন বলবে ৷”
প্রশাসনের কাছে এখনও পর্যন্ত খবর, 20 জানুয়ারি বেলা দু’টো নাগাদ হেলিকপ্টারে মুখ্যমন্ত্রী মালদায় আসবেন ৷ হেলিপ্যাড থেকে চলে যাবেন পুরাতন মালদার মঙ্গলবাড়ি ৷ সেখানে সেচ দফতরের অতিথিশালা মহানন্দা ভবনে উঠবেন তিনি ৷ সেখানেই তাঁর রাত্রিবাস ৷ পরদিন বেলা 12টা থেকে মালদা জেলা ক্রীড়া সংস্থার ময়দানে তিনি সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন ৷ ওই মঞ্চ থেকে বেশ কিছু মানুষের হাতে সরকারি সহায়ক প্রকল্পের সুবিধে তুলে দেবেন ৷ সেখান থেকে চপারযোগে সোজা চলে যাবেন আলিপুরদুয়ার ৷
তাঁর অনুষ্ঠানের জন্য ডিএসএ ময়দানে হ্যাঙ্গার ও মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে ৷ তৈরি করা হচ্ছে তিনটি হ্যাঙ্গার ৷ পাশের মাঠেই তৈরি হচ্ছে অস্থায়ী হেলিপ্যাড ৷ প্রতি মুহূর্তে এই দু’টি জায়গা পরিদর্শন করছেন জেলা প্রশাসন ও পুলিশের কর্তারা ৷
জেলার রাজনৈতিক মহলের অনুমান, মালদায় এসে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর অনুগত, নিহত দুলাল সরকারের স্ত্রী চৈতালি ঘোষ সরকারের সঙ্গে দেখা করতে পারেন ৷ চৈতালিকে বড় কোনও পদও দিতে পারেন তিনি ৷ ঢুঁ মারতে পারেন জেলা বইমেলা প্রাঙ্গনেও ৷ তবে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বইমেলা পরিদর্শন নাও করতে পারেন তিনি ৷ একই কারণে দুলাল সরকারের বাড়ি না গিয়ে চৈতালিকে ডেকে পাঠাতে পারেন তিনি ৷ তবে তিনি আদপে কী করবেন, একমাত্র তিনিই জানেন ৷