আলিপুরদুয়ার, 12 মে: চা বাগান শ্রমিকদের নানা দুর্দশা নিয়ে যখন রাজনীতির টানাপোড়েন অব্যাহত তখন তাঁদের ঘরে শিক্ষার আলো নতুন চলার পথ দেখায় ৷ ঠিক যেমন শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে বাবা-মাকে সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন দীপশিখা লামা ৷ আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি ব্লকের গাঙ্গুটিয়া চা বাগানের গুম্ফা লাইনের বাসিন্দা দীপশিখা সংসারের হাল ফেরাতে পাখির চোখ করেছে সরকারি চাকরিকেই ৷
কালচিনি হিন্দি হাইস্কুলের ছাত্রী দীপশিখা লামা ৷ চলতি বছর উচ্চমাধ্যমিকে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর 438 ৷ সংসারের হাল ধরতে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন বাবা, মা চা বাগানের শ্রমিক। ফলে সংসারের কাজে হাত লাগানো, বাগানে কাজ করার পড়াশোনাতেও কঠিন পরিশ্রম করেছেন দীপশিখা ৷ পরীক্ষায় ভাল ফল করার উদ্দেশ্য ছিল একটাই পলিটিক্যাল সাইন্সে অনার্স করে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি আমলা হতে চান তিনি ৷
দীপশিখা লামা বলেন, "মা বাগানে কাজে যাওয়ায় ঘরের কাজ করতে হয়। ফলে নিয়মিত সময় করে পড়াশোনা করা হতো না। তবে পরীক্ষার কয়েক মাস আগে থেকে সব ভুলে কয়েকঘণ্টা পড়াশোনা করেছি ৷ তারই ফল হয়তো আমার এই নম্বর।পরিবারের সদস্যরা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সহায়তায় এই অর্জন আমার।" দীপশিখার মা শ্যামনা লামা জানান, দুই মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য আমরা কষ্ট করছি। ঘর সামলানোর পাশাপাশি দীপশিখা যে এত ভালো ফল করবে তা আমরা সত্যি ভাবিনি। সে যতদূর পড়াশোনা করতে চায় আমরা করাবো ।
চা বাগানের মেয়ে পরীক্ষায় ভালো ফল করায় খুশি এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও। রবিবার দীপশিখার বাড়ি এসে তাঁকে এবং তাঁর মাকে সংবর্ধনা জানান স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি সদস্য মিনা নাগ। তিনি বলেন, "চা বলয়ের মেয়েরাও এখন সবক্ষেত্রে আগে রয়েছে। দীপশিখার এরূপ ফলাফলে আমরা সকলেও খুব খুশি।" উচ্চমাধ্যমিকে দীপশিখা লামা পেয়েছে মোট 438 নম্বর। যার মধ্যে হিন্দিতে পেয়েছে 85, ইংরেজিতে 90, ভূগোলে 85, ইতিহাসে 84 এবং পলিটিক্যাল সাইন্সে 94 নম্বর পেয়েছেন দীপশিখা ।