নদিয়া ও মেদিনীপুর, 26 অক্টোবর: ঘূর্ণিঝড় দানা’র তাণ্ডবে বিপর্যয়ের মুখে নদিয়া জেলার একাধিক কৃষক। বিশেষ করে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে চাষের জমি জলের তলায় চলে যাওয়ায় বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তাঁরা ৷ কৃষকরা জানাচ্ছেন, সবজি চাষের জন্য যে ঋণ নিয়েছিলেন, তা শোধ করা নিয়েই এখন দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা ৷
এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধান, পটল, বেগুন, পালং শাক-সহ বিভিন্ন ধরনের চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই বিঘার পর বিঘা জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পাকা ফসল মাঠেই নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা আর্থিক সংকটে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কৃষকরা সরকারের থেকে সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, ঋণ মকুব বা সাহায্য ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনও উপায় নেই। সরকারি সহযোগিতা না-পেলে অনেক কৃষকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে ।
বিপুল ক্ষতির মুখে কৃষকরা (ইটিভি ভারত)
যদিও দানায় যাঁদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের পাশে সরকার আছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এই মুহূর্তে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করার নির্দেশের পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখে পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ।
দুই মেদিনীপুরেও তাণ্ডব দানার...
ইতিমধ্যেই ত্রাণ শিবিরে নিয়ে আসা হয়েছে দুর্গতদের ৷ চাষের ক্ষেত্রে কতটা ক্ষতি হয়েছে তাও খতিয়ে দেখছে জেলা প্রশাসন । মূলত ভারী বৃষ্টির ফলে জলমগ্ন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার 15টি বিধানসভা ৷ শালবনী, গড়বেতা, দাসপুর, ঘাটাল, কেশপুর, চন্দ্রকোনা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার জমি জলের তলায় ।
বৃষ্টির জলে ডুবেছে এলাকার বিঘের পর বিঘে চাষ জমি ৷ ফলে চরম ক্ষতির সম্মুখীন কৃষকরা ৷ জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরী এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে । গড়বেতা, শালবনী, নারায়ণগড়, পিংলা, ঘাটালের বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক ফসলের ক্ষতি হয়েছে ।এখনও জলের তলায় ডুবে রয়েছে ধান জমি ।’’
অন্যদিকে খেজুরি বিধানসভা এলাকার বারাতলা, বটতলা, পাঁশকুড়া, মন্দারমণি, নন্দীগ্রামে প্রায় 100টি বাড়িঘর ও ঘরের চালা ভেঙেছে । সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ধানজমিতে জল জমে বহু ধান নষ্ট হয়েছে । প্রশাসন সূত্রে খবর, ক্ষতিগ্রস্তদের ইতিমধ্যে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ৷ পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি বলেন, ‘‘আজকেও বৃষ্টি হচ্ছে । এক-দু’দিনের মধ্যে কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার পরিমাণ জানা যাবে ।’’
জলে ডুবে চাষজমি (ইটিভি ভারত)
বিধ্বস্ত দক্ষিণ 24 পরগনা...
ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে দক্ষিণ 24 পরগনা জেলায় শীতকালীন সবজি চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুশ্চিন্তায় মাথায় হাত কৃষকদের । কোথাও সবজি ক্ষেতে জল, আবার কোথাও সবজি গাছ নুইয়ে পড়েছে। এর ফলে পচন ধরতে পারে সবজিতেও। সেজন্য ঝড় ও বৃষ্টির পর সবজি ক্ষেতের পরিচর্যা খুবই জরুরি । কারণ জমিতে অতিরিক্ত জল জমলে শিকড় পচার ঝুঁকি বাড়ে। আর্দ্র পরিবেশে ছত্রাকের আক্রমণও বৃদ্ধি পায়। তা গাছের ক্ষতি করে ৷ সঠিক যত্ন না-নিলে ফসলের উৎপাদন কমে যেতে পারে । তাই এ সময়ে উৎপাদন বাড়াতে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে । এ বিষয়ে বিশেষ পরামর্শ দিলেন নিমপীঠ কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের কৃষি বিজ্ঞানী ।
কী পরামর্শ দিলেন তিনি ?
প্রথমেই বৃষ্টির পর জমিতে জল জমে থাকলে তা দ্রুত সরিয়ে ফেলুন ৷ শিকড়ের আশেপাশের ভিজে মাটি আলগা করে দিন । এরপর হেলে পড়া সবজির চারা বা গাছ সোজা করে দিন এবং গাছের নীচের দিকের পাতা ও অপ্রয়োজনীয় ডাল ছাঁটাই করে ফেলুন ৷
বৃষ্টির পর মাটির পুষ্টি কমে যেতে পারে ৷ তাই জমিতে সঠিক পরিমাণে জৈব বা রাসায়নিক সার প্রয়োগ করুন । বেগুন, লংকা, টমেটোতে ঢলে পড়া রোগ প্রতিরোধে কপার হাইড্রক্সাইড গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করুন । জল জমে থাকায় আগাম বায়োডার্মা পাউডার বাড়ি ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে পারেন । বৃষ্টির পর অতিরিক্ত স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ফাঙ্গাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে । তাই এসময় সবজির জমিতে জমে থাকা জল বের করে দিয়ে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করুন ।