কলকাতা, 25 ডিসেম্বর: ফের খবরে অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক ৷ সম্প্রতি তাঁর স্ত্রী কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন ৷ সেই সময় হাসপাতালে বিল হয়েছে 6 লক্ষ টাকা ৷ এই খবর পাওয়া গিয়েছে বিধানসভা সূত্রে ৷ এরপর থেকেই শুরু হয়েছে বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিককে নিয়ে সমালোচনা ৷
নভেম্বর মাসের গোড়ায় মা হয়েছেন উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক তথা অভিনেতা কাঞ্চন-পত্নী শ্রীময়ী চট্টরাজ ৷ দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে 2 নভেম্বর কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি ৷ এই প্রসবকালীন খরচ হিসেবে 6 লক্ষ টাকা বিল ধার্য করেছে হাসপাতাল ৷ জানা গিয়েছে, এই বিল বিধায়ক হিসেবে বিধানসভায় জমা দিতে চান কাঞ্চন ৷ তাতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক ৷
তিনি বিল জমা দিয়েছেন কি না, এ নিয়ে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের সোশাল মিডিয়া পোস্টে ৷ সেখানে তিনি লিখেছেন, "কাঞ্চন মল্লিক তাঁর সন্তান হওয়ার বিষয়ে বিধানসভায় মেডিক্যাল বিল জমা দিয়েছেন বলে ট্রোলিং চলছে ৷ এটা আপত্তিকর ৷ কাঞ্চন কোনও বিল জমা দেননি ৷ কাঞ্চন জনপ্রিয় মুখ ৷ আরও নানা কারণে সম্প্রতি খবরে ৷ সোশাল মিডিয়াতে চর্চার কেন্দ্র ৷ কিন্তু তাই বলে ঘটনা না জেনে বুঝে তাঁকে আক্রমণ-কটাক্ষ চলতে পারে না ৷"
"বিধায়করা বিধানসভা থেকে মেডিক্যাল বিল পান ৷ এটা নিয়ম বহির্ভূত নয় ৷ কাঞ্চন-শ্রীময়ীর সন্তানের জন্য ভাগীরথী নেওটিয়া হাসপাতাল দু'লক্ষ টাকা বিল করেছে ৷ ডাঃ প্রণব দাশগুপ্তর টিমের বিল চার লক্ষ টাকা ৷ এই ছ'লক্ষ টাকার বিল নিয়ে কাঞ্চন বিধানসভায় খোঁজ নিয়েছেন যে, তিনি বিলটি বিধানসভায় জমা দিতে পারেন কি না ৷ আলোচনা করেছেন ৷ নিয়ম জেনেছেন ৷ কিন্তু বিল জমা দেননি, রিপিট বিল জমা দেননি ৷ তার আগেই তিনি বিল জমা দিয়েছেন বলে সমালোচনা শুরু ৷"
"এখানে দুটো কথা। এক, যদি ডাক্তারবাবুদের বিল বেশি হয়, তাহলে কাঞ্চন বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কী করবেন ? বিধানসভায় এ সংক্রান্ত কোনও নিয়ম আছে কি ? দুই, এর আগে ওই হাসপাতাল এবং ওই ডাক্তারের টিমের ক্ষেত্রে যদি কোনও বিল জমা পড়ে থাকে, তাহলে বিধানসভা কী করেছিল ?"
"আমার বক্তব্য, আচমকা অত বেশি টাকার বিল পেয়ে বিধায়ক কাঞ্চন যদি বিধানসভায় খোঁজ নিয়ে থাকেন, দোষের নয় ৷ জমা দিলেও দোষ হত না ৷ বিধানসভা স্ক্রুটিনি করতে পারত ৷ নিয়মনীতি অনুযায়ী চলত ৷ কিন্তু কাঞ্চন বিল জমা দেননি, তাতেই এই খবর এবং কাঞ্চনকে সমালোচনায় বিদ্ধ করা অনুচিত ৷ কেন মেডিক্যাল বিল এত বেশি হবে, আলোচনাটা সেদিকে হওয়াটা জরুরি ৷"
কাঞ্চন মল্লিকের স্ত্রী শ্রীময়ী ইটিভি ভারতকে জানিয়েছেন, "এখন সামাজিক মাধ্যম কিছু মানুষের জন্য অসামাজিক মাধ্যমে পরিণত হয়েছে ৷ সরকারি চাকরি যাঁরা করেন, তাঁরা নিজেদের পদমর্যাদা অনুযায়ী চিকিৎসা ক্ষেত্রে সরকারি সুবিধা পেয়ে থাকেন ৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখন শিল্পীদেরও আর্থিক সাহায্য করে ৷ সেদিক থেকে কাঞ্চন বিধানসভায় বিল জমা দিয়ে কোনও অন্যায় করেননি ৷ দাম দিয়ে আমার সন্তানের বিচার হবে না ৷"
এই বিষয়টি নিয়ে কাঞ্চন মল্লিকের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও তাঁর কোনও বক্তব্য জানা যায়নি ৷ তবে তাঁর স্ত্রী শ্রীময়ী চট্টরাজ অবশ্য এই নিয়ে সোশাল মিডিয়ার মুখ খুলেছেন ৷ তিনি লিখেছেন, "বিধানসভায় বিল জমা দিয়েছে কি দেয়নি সেই বিষয়ে আমি উত্তর দেওয়ার কেউ নই ৷ তার কারণ আমি বিধানসভার সদস্য নই ৷ আর আমার স্বল্প অভিজ্ঞতায় যেটা বলে, যা দেখেছি এতকাল ধরে, যে কোনও সরকারি কর্মচারী, তারা তাদের মেডিক্যাল পরিষেবাটা পায় ৷ এটাই সরকারি কর্মচারীদের একটা বড় সুবিধা ৷"
এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও লিখেছেন, "এখানে আমি বা কাঞ্চন কোনও বিষয় নই, একবার ডাক্তারবাবুর দিকটা যাচাই করে, এবং ডাক্তারবাবু কে, ডাক্তারবাবুর পেশেন্ট কারা এবং ডাক্তারবাবু সম্বন্ধিত সমস্ত তথ্য যাচাই করে তারপর বিভিন্ন মন্তব্য পেশ করা উচিত বলে আমার মনে হয় । আর কে কোন ডাক্তারের কাছে যাবে, কে কোন রেস্টুরেন্টে খাবে, কে কোন জামাকাপড় পরবে, কোথা থেকে কিনবে, কার কোন নার্সিংহোমে সরকারি না বেসরকারি হসপিটালে ডেলিভারি হবে, এটা একান্ত তাদের ব্যক্তিগত মতামত, এই নিয়ে দয়া করে অনধিকার চর্চা আপনারা করবেন না। আর আমরা কোনও অপরাধমূলক কাজ করিনি, তাই আমার একটাই অনুরোধ যাঁরা এই ধরনের কথা বলছেন, তাঁদেরকে বলব যে প্লিজ অনেক কিছু নিয়ে কথা বলার, সমালোচনা করার বা চর্চা করার বিষয় রয়েছে ৷"
খুব স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে এই ছ'লক্ষ টাকা বিল নিয়ে যে বিতর্ক চলছে তাতে খুশি নন এই অভিনেত্রী দম্পতি ৷ যদিও এই বিল সম্পর্কে বিধানসভার স্পিকার এখনই কোনও মন্তব্য করতে চাননি ৷ তিনি গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলেছেন ৷ প্রয়োজনে যে নার্সিংহোম এই বিল দিয়েছেন তাঁদের সঙ্গেও তিনি কথা বলবেন বলে জানা যাচ্ছে ৷