নয়াদিল্লি, 26 ডিসেম্বর: প্রয়াত হলেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। 92 বছর বয়সে বৃহস্পতিবার রাত 9টা 51 মিনিটে তাঁর জীবনাবসান হয়। এদিনই সন্ধ্যায় তাঁকে দিল্লির এইমস হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। এদিন শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানেই তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। তাঁর অসুস্থতার খবর পেতেই একে একে হাসপাতালে আসতে শুরু করেন কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন দলের নেতা-নেত্রীরা। তাঁর প্রয়াণের খবরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যপাধ্যায় শোক জ্ঞাপন করেন।
India mourns the loss of one of its most distinguished leaders, Dr. Manmohan Singh Ji. Rising from humble origins, he rose to become a respected economist. He served in various government positions as well, including as Finance Minister, leaving a strong imprint on our economic… pic.twitter.com/clW00Yv6oP
— Narendra Modi (@narendramodi) December 26, 2024
প্রধানমন্ত্রী এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, "দেশের একজন বিশিষ্ট নেতা ছিলেন ডঃ মনমোহন সিংজি ৷ তিনি একজন প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ হয়ে ওঠেন ৷ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী-সহ সরকারের বিভিন্ন দায়িত্ব সামলেছেন তিনি ৷ আমাদের অর্থনীতিতে তাঁর অবদান রয়ে যাবে ৷ সংসদে তাঁর কার্যকলাপও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিল ৷ আমাদের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি মানুষের জীবনে উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলেন ৷ তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময় আমি মাঝেমধ্যেই তাঁর সমালোচনা করতাম ৷ সে সময় আমি ছিলাম গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ৷ প্রশাসন সংক্রান্ত নানাবিধ বিষয়ে আমাদের মধ্যে বিস্তারিত কথোপকথন হত ৷ তাঁর জ্ঞান এবং নম্র সবসময় চোখে পড়ত ৷ এই শোকের সময় ডঃ মনমোহন সিংজির পরিবার, বন্ধু এবং অগণিত ভক্তদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল ৷ ওম শান্তি ৷"
Profoundly stunned and saddened by the sudden demise of our former Prime Minister Manmohan Singh ji.
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) December 26, 2024
I had worked with him and saw him from very close quarters in the Union Cabinet. His erudition and wisdom were unquestionable, and the depth of the financial reforms ushered in…
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, "আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংজির আকস্মিক মৃত্যুতে হতবাক এবং শোকাচ্ছন্ন ৷ আমি তাঁর সঙ্গে কাজ করেছি ৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখেছি ৷ তাঁর প্রশ্নাতীত পাণ্ডিত্য এবং দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারে তাঁর গভীরতা সর্বত্র সমাদৃত ৷ তাঁর নেতৃত্বের অভাব বোধ করবে এই দেশ ৷ আমি তাঁর স্নেহ থেকে বঞ্চিত হলাম ৷ তাঁর পরিবার, বন্ধু এবং অনুগামীদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল ৷
অন্যদিকে, হাসপাতালের তরফে এক লিখিত বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। এদিন তিনি বাড়িতেই সংজ্ঞা হারান। শুরু হয় চিকিৎসা। পরে পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে তাঁকে রাত 8টা 6 মিনিটে হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। শুরু হয় চিকিৎসা। সব প্রচেষ্টা স্বত্তেও রাত 9টা 51 মিনিটে তিনি প্রয়াত হন।
তাঁর অসুস্থতার খবর পেতেই হাসপাতালে এসে পৌঁছন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা থেকে শুরু করে প্রিয়াঙ্কা গান্ধি। এখন কর্ণাটকে বেলাগাভিতে কংগ্রেসের দলীয় কর্মসূচি চলছে। সেখান থেকে দিল্লি ফিরছেন মল্লিকার্জুন খাড়গে ও রাহুল গান্ধি। কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছে আপাতত বেলাগাভির সমস্ত কর্মসূচি স্থগিত থাকছে।
অর্থনীতির এই উজ্জল ছাত্র কর্মজীবনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন। সাতের দশক থেকেই আমলা হিসেবে ভারতীয় রাজনীতি এবং ক্ষমতার অলিন্দে তাঁর অবাধ বিচরণ ছিল। ভারত সরকারের অর্থ মন্ত্রকের উপদেষ্টা ছিলেন দীর্ঘদিন। পরে আরবিআইয়ের গর্ভনরও হয়েছিলেন। আরও পরে ইউজিসির চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন ।
Former Prime Minister Manmohan Singh aged 92 passed away at AIIMS Delhi after he was admitted here for treatment pic.twitter.com/OTbJzbXlkv
— ANI (@ANI) December 26, 2024
সেখান থেকেই সরাসরি ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ মনমোহন সিংয়ের। জটিল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে 1991 সালে প্রধানমন্ত্রী হন নরসিমা রাও। তিনিই অর্থমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেন মনমোহনকে। এর ঠিক পরের বছরটি ভারতীয় অর্থনীতির জন্য় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । 1992 সালে উদার অর্থনীতির পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। কেন্দ্রীয় বাজেটে সেই ঘোষণা করেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিং।
2004 সালে কংগ্রেসের নেতৃত্বে তৈরি হয় প্রথম ইউপিএ সরকার। সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহনকেই বেছে নেয় কংগ্রেস-সহ শরিক দলগুলি । 10 বছর প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মনমোহন। তবে তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বকে ঘিরে বিতর্কও কম হয়নি। একাধিক দুর্নীতিরও অভিযোগ উঠেছিল।