কলকাতা, 2 ডিসেম্বর: নবান্নের পর বিধানসভায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর নিয়ে বৈঠকে আরও একবার কড়া বার্তা দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েকদিন আগেই নবান্নে বৈঠকে সার্ভে না-করে ডিপিআর তৈরি করা নিয়ে একদল ঠিকাদারের ভূমিকায় উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দফতরের ঢিলেঢালা চাল নিয়েও ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন মমতা। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল, ব্যক্তিগত স্বার্থচরিতার্থ করতে সরকারি পাইপলাইন কেটে দেওয়া হচ্ছে। এবার তা নিয়ে সরাসরি গ্রেফতারির নিদান দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
পাশাপাশি, যে সংস্থাগুলি টেন্ডার নেওয়ার পরেও পারফরম্যান্স করছে না, তাদের সরাসরি ব্ল্যাক লিস্ট করে পেনাল্টি ধার্য করার কথাও বললেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ ছিল আগের দিনের বৈঠকের রিভিউ বা পর্যালোচনা। বৈঠকের শুরুতেই মুখ্যসচিব এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর সামনে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানিয়ে দেন। এরপর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "এখনও পর্যন্ত সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অথবা সরকারি পাইপ লাইন কেটে দিয়ে জল ব্যবহারের মোট 448টি অভিযোগ জমা পড়েছে ৷ 18,230 জায়গায় দেখা যাচ্ছে সরকারের জল অপব্যবহার হয়েছে। এমন কাজ করা বেআইনি। এটা করলে ফৌজদারি মামলা হবে। প্রয়োজনে গ্রেফতার হবে।"
এদিন মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি জেলাশাসক, বিডিও, পুলিশ সুপারদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর স্পষ্ট বার্তা, "কোনও নেতার কথা শুনবেন না। কোনও রাজনৈতিক দলের কথা শুনবেন না। কোনও পুলিশ কমপ্রোমাইজ করবেন না।" মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, দুই 24 পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর থেকে এভাবে জলের লাইনের অপব্যবহারের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে। আর সবচেয়ে কম অভিযোগ এসেছে কালিম্পং থেকে।
এদিন সরকারি আধিকারিকদের উদ্দেশেও কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তাঁর কথায়, "এই ধরনের ঘটনায় কোনও সরকারি অফিসার সমঝোতা করলে, তাঁর চাকরি আগে যাবে। সরকার সহ্য করবে না। নিজের এলাকা দেখে অন্য এলাকা বঞ্চিত করলে। সরকার কড়া ব্যবস্থা নেবে।"
এদিন কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপি বিরুদ্ধেও সমালোচনার সুর সোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। তিনি বলেন, "নির্বাচন আসলে ওরা বলে প্রত্যেক ঘরে জল ওরা দিয়েছে । কিন্তু জমি অধিগ্রহণ প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ সংযোগ ও আনুষাঙ্গিক সমস্ত বিষয়ে দেখতে হয় রাজ্যকেই। বেশ কিছু কেন্দ্রীয় সংস্থার অসহযোগিতার কারণে রাজ্যে জল প্রকল্প ধাক্কা খাচ্ছে ।" রেল, ইন্ডিয়ান অয়েল, এয়ারপোর্ট বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থা সঠিক সময়ে অনুমোদন না দেওয়ায় প্রায় 50 লক্ষ মানুষের বাড়িতে জল পৌঁছনো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এই বৈঠকে কোন সংস্থার কারণে কত পরিবারে জল পৌঁছানো যাচ্ছে না, তার একটা তালিকাও দেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলে যাতে এই সংস্থাগুলি থেকে দ্রুত অনুমোদন পাওয়া যায়, তার জন্য উদ্যোগ নিতে মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, "বাড়ি বাড়ি ফেলে রাখা পাইপে যতক্ষণ না পর্যন্ত জল যাবে, ততক্ষণ নতুন জমি অধিগ্রহণ নয়। কারণ কোটি কোটি টাকা দিয়ে জমি কিনতে হয়। ভোটের আগে বলবে ঘর ঘর কা পানি। এদিকে আমাদের টাকা দিয়ে কাজ করতে হয়। কেউ যেন না ভাবে, রাজ্য সরকার তার কেনা সম্পত্তি ।" তিনি বলেন, "নিজেদের দোষ ত্রুটি ঢেকে ফেলুন। রাজ্যে 28 লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক আছে । প্রয়োজনে তাদের কাজে লাগাও। স্থানীয় প্রশাসন মারফত এদের সঙ্গে যোগাযোগ কর। শ্রম দফতরকে এতে যুক্ত কর।"