পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, ট্যাবকাণ্ডে জড়িত জামতাড়া গ্যাং; দাবি মমতার

পুলিশের একাংশের কড়া সমালোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ পাশাপাশি সিআইডির খোলনোলচে বদলে দেওয়ার কথাও বললেন মমতা।

CM Mamata Banerjee
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ছবি সৌজন্য: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক পেজ)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 11 hours ago

কলকাতা, 21 নভেম্বর: সাম্প্রতিক সময়ে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের মুখে পুলিশের সমালোচনা শোনা গিয়েছে ৷ নীরব ছিল নবান্ন ৷ বৃহস্পতিবার স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেই পুলিশ নিয়ে অসন্তোষ ঝরে পড়ল ৷ এদিন তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, শীঘ্রই সিআইডিতে আমূল রদবদল হতে চলেছে ৷

এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকের সময় প্রথমে সেখানে উপস্থিত ছিলেন না ডিজি রাজীব কুমার ৷ তাঁকে ডেকে এনে, পুলিশের একাংশের ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট উষ্মা প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ ডিজিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, "কিছু বিষয়ে তোমাদের সতর্ক হতে হবে ৷ হয়তো তুমি চেষ্টা করছো ৷ তবে নিচুতলার পুলিশ কর্মীরা তোমাকে সাহায্য করছেন না ৷ আমি সবাইকে বলছি না ৷" একাংশের ভূমিকায় যে তিনি যথেষ্ট ক্ষুব্ধ, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷

এই মুহূর্তে রাজ্যে ট্যাবের টাকা হাতানো নিয়ে হইচই চলছে রাজ্যে ৷ ট্যাবকাণ্ডের সঙ্গে জামতাড়া যোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কা সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে তারা এ ধরনের কাণ্ড চালাচ্ছে ৷ এরা বিরোধীদের একাংশেরও সাহায্য পাচ্ছে বলে দাবি মমতার ৷

এদিনই প্রথম এ বিষয়ে মুখ খুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, "1600 কোটি টাকা ছেলেমেয়েদের ট্যাবের জন্য দেওয়া হয়েছে ৷ তার মধ্যে 2 কোটি টাকার মতো সমস্যা হয়েছে ৷" মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, "এই জামতাড়া গ্যাং-এর লোকেরা বিভিন্ন পার্টির ছত্রচ্ছায়া থেকে আসছে ৷ বিভিন্ন মলে এসে তারা আড্ডা মারছে। কোথাও কোথাও গেস্ট হাউস ভাড়া করে তারা অপারেশন করছে ৷ এরা রাজনৈতিক দলের লোকেদের সঙ্গেও মিশছে, সাংবাদিকদের সঙ্গেও মিশছে ৷ কোনও বড় অপারেশন করতে গেলে কিছু লোককে কনফিডেন্সে তো নিতে হবে ৷ এক্ষেত্রে কখনও আপনি কখনও আমি এদের শিকার হচ্ছি ৷"

শপিংমল গুলিকে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, "কয়েকটি শপিং মলে ফেক কারেন্সি আসছে ৷" এদিন নাম না করে একটি শপিংমলের দিকে তিনি ইঙ্গিতে দেখিয়ে বলেন, "কয়েকদিন আগে একটি শপিংমলে আগুন লেগেছিল আপনারা জানেন। আমি নাম বলতে চাই না ৷ তার আগেও একবার আগুন লেগেছিল সেখানে ৷ অর্থাৎ দু'মাসে দু'বার ৷ আমরা বেশ কিছু ইনপুট পেয়েছি ৷ সব শপিংমল খারাপ নয় ৷ তবে সকলকে সতর্ক হতে অনুরোধ করছি ৷"

এদিন নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে যথেষ্ট কড়া অবস্থান নিতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে ৷ তিনি বলেন, "রাজনৈতিক নেতাদের নামে সবাই বদনাম করে বেশি ৷ নেতারা 5 টাকা খেলেই বলে দেয় চোর ৷ কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা জনগণের টাকা খাওয়ার আগে দশবার ভাবেন, এমনটা কি করা উচিত ! তাঁদের নিজস্ব দায়বদ্ধতাও থাকে ৷ কিন্তু নিচু তলার কিছু অফিসার, কিছু কর্মী, পুলিশের কিছু লোক, যারা এই সরকারকে ভালোবাসে না-তারা টাকা খায়। বালি চুরি থেকে কয়লা চুরি সব কিছুতেই যুক্ত থাকে ৷"

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, "আমি নির্দেশ দিয়েছিলাম যত বালি এবং পাথরের জায়গা আছে সেখানে টেন্ডার করে দেওয়া হোক ৷ বেআইনি কয়লা খনিগুলির খনন আটকে দাও ৷ কেন এখনও সেগুলি চলছে ? যদি সিআইএসএফ টাকা খায়, সেক্ষেত্রেও আমাদেরও তাদের ধরার অধিকার আছে ৷ বলা হবে চুরি করছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর টাকা খেয়ে চুরি করবে সিআইএসএফ ও পুলিশের একাংশ ৷ আমি এটা কোনওভাবেই মেনে নেব না ৷" রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, "যদি রাজনৈতিক দলের কেউ এসবের সঙ্গে যুক্ত থাকে তারও কলার চেপে ধরো ৷ তাকে আইনের আওতায় নিয়ে এসো ৷ এখানে কোনও অজুহাত আমি শুনব না ৷"

পুলিশকে নাকা চেকিং বাড়ানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ প্রতিবেশী বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা এখনও টালমাটাল ৷ এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের যতটা সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন ছিল তা হয়নি বলে অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, "আমি এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স নিয়ে কোনও কথা বলি না, আজও বলব না ৷ তবে আমাদের পুলিশকে বলব নাকা চেকিং বাড়াতে ৷ কারণ বর্ডার আমাদের হাতে নেই, বর্ডার কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ৷ কেন্দ্রীয় সরকারের যথেষ্ট শক্ত হওয়ার কথা ছিল ততটা হয়নি । ফেক কারেন্সি কীভাবে আসছে ? কেন এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা হচ্ছে না ?" এর আগে গতকালই লালবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পদ থেকে বদলি হয়েছেন মুরলিধর শর্মা ৷ এদিন মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, তিনি শীঘ্রই সিআইডি'র খোলনলচে বদলে দেবেন ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details