কলকাতা, 24 ডিসেম্বর:পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ শিক্ষা দফতরের আরও চার আধিকারিকের জামিন মামলায় রায় ঘোষণা হবে আজ বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তীর এজলাসে। গত 18 ডিসেম্বর সিবিআইয়ের মামলায় এই আধিকারিকদের জামিনের আবেদনের শুনানি শেষ করেছিলেন বিচারপতি। তারপর রায়দান স্থগিত ছিল।
এর আগে গত 20 নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায় জামিনের ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করায় জামিন পাননি পার্থ-কল্যাণ সহ অন্যান্যরা। এর আগে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইডি-র মামলায় শীর্ষ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। তবে আদালত সুত্রে খবর পার্থ চট্টোপাধ্যায় যদি সিবিআইয়ের এই মামলায় জামিন পান তারপরও তাঁর জেলমুক্তি এখনই সম্ভব নয়। কারণ প্রাথমিক নিয়োগের মামলা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে ৷ যে মামলা এখনও সিবিআই বিশেষ আদালতে বিচারাধীন।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতর মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, শান্তিপ্রসাদ সিনহা, কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় ও অশোক কুমার সাহার জামিন মঞ্জুর করার নির্দেশে 20 নভেম্বর দ্বিমত পোষণ করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায় ৷
বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় মোট 9 জনের জামিন মঞ্জুর করলেও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায় পাঁচ জনের জামিন মঞ্জুর করেননি। কৌশিক ঘোষ, আলি শাহীদ ইমাম, চন্দন মণ্ডল, সুব্রত সামন্তের জামিন মঞ্জুর করেছিলেন অপূর্ব সিনহা রায়। কিন্তু বাকিদের জামিন তিনি মঞ্জুর করেননি। ফলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিত্ত্বদের জামিন মেলেনি হাইকোর্টে। এরপর মামলাটি যায় বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তীর সিঙ্গল বিচারপতির বেঞ্চে।
সিবিআইয়ের মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ অন্যান্য পাঁচ আধিকারিকের জামিনের আবেদনের শুনানিতে এরা কতটা প্রভাবশালী, সেই যুক্তিই খাড়া করার চেষ্টা করে সিবিআই ৷ প্রভাবশালী হওয়ার কারণেই এদের জামিন দিলে সাক্ষীদের প্রভাবিত করার পাশাপাশি তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হতে পারে ৷ ফলে নিয়োগ দুর্নীতিতে তদন্ত গতিপথ হারাবে বলে সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয় আদালতে।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ-ডি, গ্রুপ-সি, নবম-দশম ও একাদশ এবং দ্বাদশে দুর্নীতির অভিযোগে 2022 সালের জুলাই মাসে ইডি-র হাতে গ্রেফতার হন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পরে একে একে সিবিআই ও ইডি-র হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন সুবিরেশ ভট্টাচার্য, শান্তিপ্রসাদ সিনহা, অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায়রা। দীর্ঘ আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে জেলবন্দি রয়েছেন অনেকেই। রাজ্যের শিক্ষা দফতরের উচ্চপদস্থ এই আধিকারিকরা কেউ পেশায় ছিলেন কলেকের অধ্যাপক, কেউ বা অধ্যক্ষ আবার কেউ বা শিক্ষা দফতরের কর্মী।
কিন্তু রাজ্যের প্রাথমিক থেকে একেবারে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী নিয়োগ দুর্নীতির বড়সড় চক্র সামনে এসেছে কলকাতা হাইকোর্টের তদন্তের নির্দেশের পর। প্রথমে 2018 সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ-ডি ও গ্রুপ-সিতে কয়েকজন প্রার্থীকে প্যানেলের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে নিয়োগ করার অভিযোগ উঠেছিল। এরপর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একের পর এক সিবিআই তদন্তের নির্দেশে পর পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির ঈঙ্গিত পায় সিবিআই। পরে আর্থিক লেনদেনের ঘটনা সামনে আসায় তদন্ত যায় ইডি-র হাতে ৷
যদিও প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে অন্যান্য আধিকারিকদের অভিযোগ ছিল, সিবিআই বা ইডি এতদিনে তদন্তে কি উদ্ধার করেছে ? তদন্তের নামে বছরের পর বছর এভাবে আটকে রাখা ভারতীয় সংবিধান প্রদত্ত স্বাভাবিক ন্যাচারাল জাস্টিসের বিরোধী। অর্থাৎ ন্যায়ের পরিপন্থী। সিবিআই এদের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে চার্জশিট পেশ করলেও রাজ্যের অনুমতি না-মেলায় চার্জ ফ্রেম করে এখনও বিচারপর্ব শুরু করতে পারেনি। এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের একাধিক বেঞ্চে দীর্ঘদিন ধরে কাজিয়া চলেছে সিবিআই আর রাজ্যের মুখ্যসচিবের অনুমতি না-দেওয়া নিয়ে ৷
2022 সালের সেপ্টেম্বরে সিবিআই অনুমতি চেয়েছিল রাজ্যের কাছে নিয়োগ দুর্নীতিতে নিম্ন আদালতে চার্জ ফ্রেম করে এদের বিরুদ্ধে বিচারপর্ব শুরু করতে। কিন্তু মুখ্যসচিব সেই অনুমতি দেননি। রাজ্য দিনের পর দিন এ ব্যাপারে চুপ থেকেছে ৷ ফলে এর থেকেই অনুমান করা যায়, এরা কতটা প্রভাবশালী ৷ এমনই যুক্তি দিয়েছিল সিবিআই ৷