কলকাতা, 20 মার্চ:কলকাতা হাইকোর্টেবিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার শুনানি আজ শেষ হল । বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শাব্বার রাশিদির ডিভিশন বেঞ্চে বেশ কয়েকটি দিক এই শুনানিতে উঠে এসেছে ৷
এই মামলায় উঠে আসা দিকগুলি হল,
এক, নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঠিক মূল্যায়ন করা বা পূর্নমূল্যায়ন করা
দুই, এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি রয়েছে তাকে মান্যতা দিয়ে মামলার পরবর্তীকালে যে আবেদনগুলি জমা পড়েছে তা বাতিল করা
তিন, সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুনভাবে নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া । স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফেও সেই প্রস্তাব আদালতে দেওয়া হয়েছিল । তবে সবটাই আদালতের নির্দেশের উপর নির্ভর করবে বলে জানিয়েছিল কমিশন ।
গত 9 নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কলকাতা হাইকোর্টে গঠিত হয় বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শাব্বার রাশিদির ডিভিশন বেঞ্চ । এই বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চে এসএসসি মামলার শুনানি শুরু হয় গত ডিসেম্বর মাস থেকে । ছয় মাসের মধ্যে মামলার প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট । মামলাকারী, তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই, স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ-সহ সব পক্ষের কথা শুনে আজ মামলার শুনানি পর্ব শেষ করল বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ । আপাতত রায়দান স্থগিত রয়েছে । কবে রায়দান হবে তা পরবর্তীতে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক । অবশ্য রায়দানের পর সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার রাস্তাও খোলা থাকবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে বিচারপতি ।
আজ মামলাকারীদের পক্ষ থেকে আদালতে তথ্য দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্যানেল তৈরির একাধিক নথি জমা দেওয়া হয় । নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গোটা সিস্টেমটাই দুর্নীতিতে ভরা বলে দাবি করেন মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য । মামলাকারীর আইনজীবীদের অভিযোগ, সুপার নিউমুরারি পোস্ট (অতিরিক্ত) পদ তৈরি করে বেআইনিভাবে চাকরিপ্রাপ্তদের স্বার্থ রক্ষা করতে চেয়েছে রাজ্য ৷ এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির কথা মেনে নেন বিচারপতিও । এসএসসি নিয়োগে বহু ক্ষেত্রে আইনি বৈধতা লংঘন করা হয়েছে, যা এই শুনানি পর্বে সামনে এসেছে বলেও জানিয়েছেন বিচারপতি । সে ক্ষেত্রে শুনানি পর্ব শেষে এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ কোন পথে এগোয় এখন তারই অপেক্ষা চাকরিপ্রাপক ও চাকরিপ্রার্থীদের ।
বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এ দিনও বলেন, এটা স্পষ্ট যে, নিয়োগের বাছাই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে দুর্নীতিতে ভরা । তাহলে আদালতকে এমন শিক্ষা দিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের পদক্ষেপ না করা হয় । হয় নিয়োগ প্রক্রিয়া পুরোপুরি বাতিল করতে হবে, নাহলে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দিক আদালত ।
20 ডিসেম্বর স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী হলফনামা দিয়ে আদালতে জানিয়েছিলেন, সিবিআই যে ওএমআর শিট দিয়েছে, তার সত্যতা নিয়ে তাঁরা কোনও প্রশ্ন তুলছেন না । তার মানে তাঁরা এটাকে গ্রহণ করে নিয়েছেন । পুরো নিয়োগ বাতিল করে নতুন করে মূল্যায়ন করা যেতে পারে । সিবিআইয়ের দেওয়া ওএমআরের ভিত্তিতে স্কুল সার্ভিস কমিশন সেটা করতে পারে ।
যদিও বোর্ডের আইনজীবী বলেন, সিবিআইয়ের থেকে যে ওএমআর পাওয়া গিয়েছে তা ভুলে ভরা । এক্ষেত্রে পুনর্মূল্যায়ন করা যেতে পারে কিন্তু বোর্ডকে দোষারোপ করা ঠিক নয় । বোর্ডের কাছে কোনও ওএমআর ছিল না ।
বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, সুপার নিউমোররি পোস্ট তৈরি করে চালাকি করেছে রাজ্য । বেআইনিভাবে চাকরিপ্রাপ্তদের স্বার্থ বজায় থাকবে আবার যাঁরা বিক্ষুব্ধ তাঁদেরও সুযোগ দেওয়া যাবে । গোটা সিস্টেমটাই দুর্নীতিতে ভরা । আপাতত ডিভিশন বেঞ্চ কী নির্দেশ দেয় সেদিকে নজর থাকবে সব পক্ষের ।
আরও পড়ুন:
- নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রতিদিন সময় চাইছে এসএসসি, বেজায় চটলেন বিচারপতি
- নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রয়োজনীয় নথি দিয়ে সহযোগিতা করতে পারছে না এসএসসি, ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট
- তথ্য না দিলে এসএসসি-পর্ষদের দফতরে তালা ঝুলিয়ে দিন, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মত হাইকোর্টের; সিবিআই তদন্তের নির্দেশ