জলপাইগুড়ি, 27 ডিসেম্বর: এপার বাংলার কৃষকের জমি ৷ 2015 সাল থেকে দখল করে রেখেছেন ওপারের নাগরিকরা ৷ দিব্যি সেখানে চলছিল চাষাবাদ ৷ অবশেষে বিএসএফ-এর দ্বারস্থ হয়ে বাংলাদেশিদের দখল করে নেওয়া জমি ফিরে পেলেন ভারতীয় কৃষক ৷ তাও আবার বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির আবহে ৷ স্বাভাবিক ভাবেই খুশি ভারতীয় কৃষক পরিবার ৷ তারা ধন্যবাদ জানিয়েছে দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে ৷
জলপাইগুড়ি জেলার মালকানির বাসিন্দা নিরঞ্জন সরকার ও তাঁর ছেলে আনন্দ সরকারের ভরত বিওপি এলাকার সাকাতি ঝাকুয়াপাড়ায় সাড়ে তিন বিঘা জমি ছিল ৷ 2015 সাল থেকে সেই জমি দখল করে রেখেছিলেন বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার প্রধানপাড়ার লোকেরা । গোটা বিষয়টি রাধাবাড়ি সেক্টরের 93 ব্যাটেলিয়ান বিএসএফকে জানান মালকানির বাসিন্দা নিরঞ্জন ।
ভারতীয় কৃষকের জমি দখল করে চাষ করছিল বাংলাদেশিরা (নিজস্ব চিত্র) এরপরেই বিএসএফের তরফে বাংলাদেশ সরকারকে প্রোটেস্ট নোট দেওয়া হয় । ভারত ও বাংলাদেশের তরফে বিতর্কিত জমিটিতে দুই দেশ যৌথ সমীক্ষা চালায় । গত 28 নভেম্বর সার্ভে হওয়ার পর, বাংলাদেশিদের দখলে থাকা সাড়ে তিন বিঘা জমি উদ্ধার করে ভারতীয়দের মালিকদের তা ফিরিয়ে দেয় বিএসএফ ।
এই ঘটনায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে জলপাইগুড়ি জেলায় 2015 সাল থেকে চলা জমি বিবাদের স্থায়ী সমাধান করল বিএসএফ । ওপার বাংলার বর্তমান অশান্ত পরিস্থিতিতেই বিজিবি-র সহযোগিতায় বিএসএফ জমি ফিরিয়ে দিল ভারতীয় কৃষককে ৷ 93 ব্যাটেলিয়ান সুত্রে জানা যায়, 2024 সালের শেষের দিকে জলপাইগুড়ি জেলার মালকানির বাসিন্দা আনন্দ সরকার 39 ব্যাটেলিয়ান বিএসএফের কাছে অভিযোগ করেন যে, তাঁদের সাড়ে তিন বিঘা জমি বাংলাদেশের নাগরিকরা দখল করে অবৈধভাবে সেখানে চাষাবাদ করছেন । সেই অভিযোগটি পাঠানো হয় 93 ব্যাটেলিয়ান বিএসএফের বৈকুন্ঠপুরে ৷
অভিযোগ পাওয়ার পরেই 93 ব্যাটেলিয়ানের কমান্ডান্ট বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার নির্দেশ দেন স্থানীয় বিওপির কোম্পানি কমান্ডারকে । কোম্পানি কমান্ডার জিরো লাইন পেট্রোলিং করে দেখেন যে, অভিযোগটি সত্যি । কমান্ডান্টকে বিষয়টি জানানো হয় । তখন 56 ব্যাটেলিয়ান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের কমান্ডিং অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিএসএফ । এরপর বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার ও বিএসএফের ভরত বিওপির কোম্পানি কমান্ডার যৌথ ভাবে বিতর্কিত এলাকায় গিয়ে তদন্ত করেন ।
ভারতীয় জমির মালিক আনন্দ সরকার ইতিমধ্যেই জেলাশাসককে ভুমি ও ভুমি রাজস্ব দফতরের আধিকারিকদের দিয়ে জমি মাপঝোক করার জন্য আবেদন জানান । বিজিবি ও বিএসএফের জওয়ানদের উপস্থিতিতে সার্ভের টিম জমি মাপার কাজ করে । জমি মেপে দেখা যায়, বাংলাদেশের নাগরিকদের দখলে থাকা সাড়ে তিন বিঘা জমি আসলে ভারতীয়দের । এরপরই তা ফিরিয়ে দেওয়া হয় ভারতীয় কৃষককে ৷
ভারতীয় জমির মালিক মালকানির বাসিন্দা নিরঞ্জন সরকার ও আনন্দ সরকার জানান, "আমাদের সাড়ে তিন বিঘা জমি 2015 সাল থেকে বাংলাদেশের দখলে চলে যায় । কোনও ভাবেই আমাদের জমি উদ্ধার করা যাচ্ছিল না । আমরা ভেবেছিলাম জমিটা উদ্ধার করা যাবে না । বাংলাদেশের নাগরিকরা জমিতে ফসল চাষ করছিল । এবার আলু চাষ করেছে । আমরা বিএসএফের 93 ব্যাটেলিয়ানের আধিকারিক মনোজ কুমারকে জানাই । তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা নেন । 93 ব্যাটেলিয়ানের কমান্ডিং অফিসারের সহযোগিতা না-পেলে আমরা হয়তো জমি ফিরে পেতাম না । 93 ব্যাটেলিয়ানের কমান্ডান্ট-সহ পুরো টিমকে ধন্যবাদ জানাই ৷"
বিএসএফের 93 ব্যাটেলিয়ানের শীর্ষ এক আধিকারিক বলেন, "আমরা অভিযোগ পেয়েই বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করে জমি মেপে জমি উদ্ধার করেছি ।"