ব্যারাকপুর, 23 জুলাই: দিলীপ ঘোষের পর অর্জুন সিং। লোকসভা ভোটে দলের বিপর্যয় নিয়ে এবার পার্টির সমালোচনায় মুখর হলেন ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ ও বিজেপি নেতা অর্জুন সিং। বললেন,"বাংলায় ভোট হয় না। ভোট করাতে হয়। ভোট করাতে পারবে, এমন অভিজ্ঞ লোক বিজেপিতে দরকার। বিরোধী হলেও তাঁদের (শাসকদল) থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। দিলীপ দা অনেক সিনিয়র নেতা। পরে হলেও উনি তা বুঝতে পেরেছেন। এজন্য ওনাকে ধন্যবাদ।"
প্রসঙ্গত, রবিবারই দলীয় এক কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে দলের সমালোচনার সুর শোনা গিয়েছিল বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের গলাতে।তাঁর কথায়, "আমরা সংগঠন জানি। আন্দোলন জানি। কিন্তু,ভোট করাতে জানিনা ।" যার প্রত্যুত্তরে বিজেপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, "মায়ের পেট থেকে জন্ম নিয়েই কেউ শিখে যায়না । আস্তে আস্তে সবকিছু শেখে সবাই ।"
দিলীপের সুরেই সুর মেলাতে দেখা গেল ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদকে । সোমবার ভাটপাড়ায় নিজের বাসভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি নেতা অর্জুন সিং বলেন, "দিলীপ দা যে কথা গতকাল বলেছেন । সেই কথা আমি গত কয়েকদিন ধরেই বলে আসছি । আমি নিজেই তা অনুভব করতে পেরেছি । বাংলায় ভোট হয়না, ভোট করাতে হয়। এনিয়ে দলকে একেবারে নিচুস্তর থেকেই ভাবতে হবে । সংগঠনের দায়িত্ব কার হাতে দিতে হবে। কাজের লোক কে! সেই নিয়ে বিশ্লেষণ করার সময় এসেছে। কাজের লোককে সংগঠনের দায়িত্ব দিলে তাতে লাভ হবে বিজেপিরই।"
এরপরই উদাহরণ টেনে ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ বলেন, "আমি কাউকে ছোট করছি না। তবে তৃণমূলের ইউনিয়নের অধীনে কোনও টোটো চালক যদি বিজেপির মণ্ডল সভাপতি, বুথ সভাপতি বা শক্তি প্রমুখ হন। তাহলে তো কোনও দিনই সে সংগঠনে কাজ করতে পারবেনা । তার তো সবসময় ভয় থাকবে,এই বুঝি তৃণমূলের লোকজন তার টোটো বন্ধ দিল । আমি এমনও মণ্ডল সভাপতি দেখেছি, যিনি অটো চালাচ্ছেন, অথচ অটোর পিছনে তৃণমূলের প্রচারের ব্যানার লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন । ভোটের দিন তার দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। দিলীপদা অনেক পরে বুঝলেন । তাও ভালো, ওনার মত লোক যদি সরব হন তাতে বিজেপির নিচুস্তরে সাংগঠনিক যে ত্রুটি আছে আমরা তা ঠিক করতে পারব ।"
এদিকে,লোকসভা ভোটে নিজের পরাজয় নিয়েও সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই দায়ী করেছেন অর্জুন। তাঁর দাবি, "আমাকে তো সেই পরিকাঠামোতে দাঁড়িয়ে ভোট করতে হয়েছিল । পার্টি পরিকাঠামোতে টোটো চালক, অটোচালক রয়েছে । সে কি আর ভোট বুঝবে ? তাঁদের দিয়েই ভোট করাতে হয়েছে । আর ভোটের দিন তাদের কাউকেই দেখা যায়নি । মণ্ডল সভাপতিও উধাও ছিলেন ।" ক্ষোভ উগড়ে তিনি আরও জানান, এখানে যে নিজেকে বিজেপির নেতা বলে সে আসলে তৃণমূলের কন্ট্রাক্টার। বিজেপির কোনও বড় নেতা যে পুরসভায় চাকরি করছে তাকে সরাচ্ছে না।"
অন্যদিকে,সংগঠনের কাজে অভিজ্ঞ, এমন গরিব মানুষকে বুথের সংগঠন থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন বিজেপি নেতা অর্জুন সিং। তাঁর মতে, "যাঁরা মাইক্রো লেভেলে এই অবজারভেশন করতে পারে তাঁদের দায়িত্ব দিতে হবে । কাগজে কলমে বাড়িতে বসে কাজ করলে হবে না । এই রকম ফেক সিস্টেমের উপর দাঁড়িয়ে পার্টি ভোট করালে হবে না ।" সিপিএম, তৃণমূলের বি-টিম হয়ে কাজ করায় অনেক সিটে বিজেপি হেরেছে বলেও এদিন দাবি করেছেন ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ।