কলকাতা, 14 নভেম্বর: '12টায় অফিস আসি 2টোয় টিফিন... 4টেই চলে আসি বাড়ি, আমি সরকারি কর্মচারী' ৷ সরকারি কর্মচারীদের হাজিরা নিয়ে বিবরণ এভাবেই তুলে ধরেছিলেন গায়ক নচিকেতা।
বাম আমলে সরকারি কর্মীদের হাজিরা নিয়ে এই গান সে সময় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। এমনকী সরকারী কর্মচারীদের গলাতেও শোনা যেত এই গান ৷ রাজ্যে সরকার বদল হলেও হাজিরার ছবি যে বদলায়নি, তা বোঝা গিয়েছে অর্থ দফতরের লিখিত বিজ্ঞপ্তি জারিতে ৷ গত সোমবার সরকারী কর্মীদের হাজিরা সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেছেন রাজ্যের ডেপুটি সেক্রেটারি নাভেদ আখতার। নির্দেশে বলা হয়েছে, এতদিন বায়োমেট্রিকের পাশাপাশি খাতায় সই করার সুবিধা থাকলেও তা এ থেকে তা বন্ধ করা যাচ্ছে ৷
সরকারি কর্মচারীদের নির্দিষ্ট নিয়মের বেড়াজালে বাঁধতে বেসরকারি অফিসের মতোই 2023 সালের মে মাসে অর্থ দফতর নবান্নে বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি চালু করে ৷ তবে, পাশাপাশি খাতায় সইয়ের পুরনো ব্যবস্থাও রেখে দেওয়া হয়েছিল। গত বছর শেষের দিকে সংসদের স্মোক অ্যাটাকের পর নবান্নের প্রতিটি ফ্লোরেও ফেস রেকগনিশন ক্যামেরা বসেছিল ৷ কিন্তু এরপরেও সরকারি কর্মচারীরা বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স ঠিক মতো মানছেন না। এ নিয়েই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর নির্দেশিকা জারি করল অর্থ দফতর ৷
বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীরা নির্দেশ মেনে ঠিক মতো তাদের বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স দিচ্ছে না। শুধুই খাতায় সই করছেন। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, নবান্নে অর্থ দফতরের সব বিভাগ ও শাখার সর্বস্তরের কর্মীদের জন্য এবার থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরাই একমাত্র গ্রহণযোগ্য হবে। বায়োমেট্রিক ছাড়া কোন ধরনের অ্যাটেন্ডেন্স গৃহীত হবে না। পদোন্নতি বা বদলি হয়ে যাঁরা নবান্ন আসবেন, কাজে যোগ দেওয়ার দিনই তাঁদের বায়োমেট্রিক সংক্রান্ত কাজ করে নিতে হবে। একই ভাবে যাঁরা নবান্ন থেকে অন্য কোনও দফতরে চলে যাবেন, তাঁদের বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা বন্ধ করার কথা আগাম জানাতে হবে।
এ প্রসঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের এক আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গত বছর সংসদে স্মোক অ্যাটাকের পর থেকেই নবান্নের নিরাপত্তা নিশ্চিদ্র করার জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরা আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ফেস রেকগনিশন ক্যামেরায় হাজিরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এরপর এই বিজ্ঞপ্তি প্রমাণ করছে বায়োমেট্রিক হাজিরা নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের রাজ্য সরকারের নির্দেশ মানছেন না।
এও দেখা গিয়েছে যে, অন্য কোনও দফতর থেকে যাঁরা বদলি হয়ে নবান্নে এসেছেন, তাঁরা অনেকেই বায়োমেট্রিক পদ্ধতির জন্য প্রয়োজনীয় ‘ডেটা’ দফতরকে দেননি। ফলে তাঁদের বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালুই হয়নি ! যাঁরা পদোন্নতির কারণে নবান্নে এসেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও এমন দেখা গিয়েছে। আর সে কারণেই এদিন বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছে, নবান্নে অর্থ দফতরের সব বিভাগ এবং শাখার সর্বস্তরের কর্মীদের একমাত্র বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা দিতে হবে। অন্য কোন হাজিরা গ্রহণযোগ্য নয়।