বসিরহাট (উত্তর 24 পরগনা), 7 ফেব্রুয়ারি: তালিবানি কায়দায় শাসন ! আইনের তোয়াক্কা না করেই মহিলা ও তাঁর নাবালক ছেলেকে চুলের মুঠি করে প্রকাশ্যে মারধরের অভিযোগ উঠেছে গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে । চড়-থাপ্পড়ও মারা হয়েছে দু’জনকে ।
পরে পুলিশ এলেও অভিযুক্তদের কারোরই পাত্তা মেলেনি সেখানে । তার আগেই ঘটনাস্থল থেকে সরে পড়েন তাঁরা । ঘটনা ঘিরে শুক্রবার শোরগোল পড়ে গিয়েছে উত্তর 24 পরগনার ন্যাজাট থানার হারদার পাড়া এলাকায় । পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমেছে ।
কেন ওই মহিলা ও তাঁর দশ বছরের সন্তানকে মারধর করা হল ?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে ওই মহিলার দেওরের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় ঘর থেকে । দেওরের স্ত্রী কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকেন । খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশ । পুলিশ বছর বত্রিশের ওই যুবকের দেহ উদ্ধার করে বসিরহাট হাসপাতালে নিয়ে যায় । সেখানেই ওই যুবককে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা ।
অভিযোগ, শুক্রবার সকালে এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়তেই মৃতের দাদার বাড়িতে চড়াও হন গ্রামবাসীরা । মৃতের বউদি এবং তাঁর 10 বছরের নাবালক ছেলেকে ঘর থেকে টেনে বাইরে বের করে আনেন উত্তেজিত গ্রামবাসীরা । তাঁরা দাবি করতে থাকেন, কেন কাউকে না জানিয়ে রাতের অন্ধকারে দেহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ।
অভিযোগ, এরপরই প্রকাশ্য রাস্তায় ওই মহিলাকে নিগ্রহ করা হয় ৷ তাঁর চুলের মুঠি ধরে শুরু হয় মারধরও । এই দৃশ্য দেখে মাকে বাঁচাতে এলে রেহাই পায়নি সে-ও । তাঁকেও মারধর করার অভিযোগ উঠেছে গ্রামবাসীদের একাংশের বিরুদ্ধে । শুধু তাই নয়, নিগৃহীত মহিলার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে । ঘটনার জেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ওই মহিলা ।
তাঁর অভিযোগ, "রাতে কেন গ্রামবাসীদের না জানিয়ে আমার দেওরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ? এই কারণে আমাকে আর আমার বাচ্চাকে মারধর করল ওঁরা । বাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দেবে বলে হুমকি দিয়েছে ।’’ তিনি ও তাঁর পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন ওই মহিলা । পুলিশের কাছে নিরাপত্তার দাবিও করেছেন তিনি ।
এদিকে, মহিলাকে নিগৃহীত করার খবর পেয়ে ন্যাজাট থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে । ঘটনার পর কয়েক ঘণ্টা কেটে গেলেও এর সঙ্গে যুক্ত কাউকেই এখনও অবধি পুলিশ ধরতে পারেনি । যা নিয়ে কটাক্ষ করেছে গেরুয়া শিবির ।
এই বিষয়ে বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার যুব মোর্চার সভাপতি পলাশ সরকার বলেন, "সন্দেশখালিতে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, এটা তারই উদাহরণ । পুলিশের উচিত সঠিক তদন্ত করে এই ঘটনার যুক্ত সকলকেই গ্রেফতার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা । আইন কখনও নিজের হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয় ।"
স্থানীয় তৃণমূল নেতা জহরলাল মাহাতো বলেন, "ওই যুবকের মৃত্যু স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক, সেটা তদন্ত সাপেক্ষ বিষয় । ওই মহিলাকে নিগৃহীত করা উচিত হয়নি গ্রামবাসীদের । যদি তাঁদের কোনও অভিযোগ থাকত, সেটা পুলিশ-প্রশাসনকে জানাতে পারতেন । আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ঠিক নয় ।"
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে বসিরহাট জেলার পুলিশ সুপার মেহেদি হোসেন রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "যুবকের মৃত্যু এবং মহিলা ও তাঁর ছেলেকে মারধর - দু’টি বিষয়ই খতিয়ে দেখা হচ্ছে । যাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।"