আইনি গেরোয় আটকে এনওসি, রাজপথ থেকে উধাত্ত হতে পারে অ্যাপ বাইক ট্যাক্সি - BIKE TAXI SERVICE
ব্যক্তিগত বাইক থেকে বাণিজ্যিক বাইক ট্যাক্সিতে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে একাধিক সমস্যায় পড়ছেন চালক ও মালিক উভয়ই । একাধিক আইনি জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছেন তাঁরা ৷
রাস্তা থেকে উধাত্ত হতে পারে অ্যাপ বাইক ট্যাক্সি (নিজস্ব চিত্র)
কলকাতা, 24 ফেব্রুয়ারি: আগামী 1 এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে কমতে পারে অ্যাপ বাইক ট্যাক্সির সংখ্যা ! ব্যক্তিগত মোটর বাইক থেকে বাণিজ্যিক বাইক ট্যাক্সিতে রূপান্তরিত করার জন্য প্রয়োজন পারমিট ৷ পরিবর্তনের শেষ তারিখ আগামী 31 মার্চ ৷ আর তা করতেই একাধিক আইনি সমস্যায় পড়ছেন চালক ও মালিকরা ।
বাড়িতে খাবার ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হোক, কিংবা শহরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যাত্রী পৌঁছে দেওয়া ৷ বর্তমানের ব্যস্ত সময়ে অ্যাপ বাইক ট্যাক্সি বহু মানুষের একমাত্র ভরসা ৷ নিঃসন্দেহে দু'চাকার বাইক ট্যাক্সি নাগরিক জীবনকে অনেকটাই সুবিধাজনক করে তুলেছে । তবে, 31 মার্চের মধ্যে সাদা নম্বর প্লেটকে হলুদ বাণিজ্যিক নম্বর প্লেটে রূপান্তরিত করা এবং বাণিজ্যিক পারিমিট পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে মালিক ও চালকদের ।
ব্যাঙ্ক ঋণের মাধ্যমে কেনা বাইকের ক্ষেত্রে কমার্শিয়াল নম্বর প্লেটে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে প্রয়োজন ফাইন্যান্স সংস্থা 'নো অবজেকশন সার্টিফিকেট' বা এনওসি ৷ কিন্তু, সেই সার্টিফিকেট দিতে নারাজ আর্থিক সংস্থাগুলি । এনওসি ছাড়া নম্বর প্লেটের জন্য পরিবহণ দফতরে আবেদন করা যাবে না । রাজ্য সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, আগামী 31 মার্চে মধ্য়ে ব্যক্তিগত নম্বর প্লেটের বাইককে বাণিজ্যিক কাজে জন্য ব্যবহার করলে এবং পুলিশের হাতে ধরা পড়লে মোটর ভেহিক্যাল আইনের 39/192 ধারায় প্রথমবার পাঁচ হাজার টাকা আর্থিক মাশুল দিতে হবে । আবার 15 দিন পর ধরা পড়লে জরিমানার অঙ্ক বেড়ে হবে 10 হাজার টাকা । ফলে, কাজে বেরোতে পারছেন না বাইক ট্যাক্সির বহু মালিক ও চালক ৷
এই প্রসঙ্গে, AIUTUC অনুমোদিত কলকাতা সাবার্বার্ন বাইক ট্যাক্সি অপারেটরস ইউনিয়নের সভাপতি শান্তি ঘোষ জানান, বাণিজ্যিক হলুদ নম্বর প্লেটে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে সরকারের সদর্থক ভূমিকার অভাব রয়েছে । তাই এই পেশার সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন । ইউনিয়নের সহ সম্পাদক শুভব্রত দাস বলেন, "পরিবহণ দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী, সমস্ত আরটিওগুলিতে বাইক ট্যাক্সির বাণিজ্যিক নথিভুক্তকরণের (কমার্শিয়ালাইজেশন) কাজ চলছে । অথচ, বেশ কিছু আরটিওতে এই কাজের গতি খুবই ধীর । পরিবহণ দফতরের দেওয়া মডেল প্রফর্মা ফাইন্যান্স সংস্থাগুলির কাছে ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে ৷ তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের তরফে ঠিকঠাক উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না ৷ ফলে, সবদিক থেকে বাইক ট্যাক্সি চালকরা হয়রান হচ্ছেন ।"
পরিবহণ দফতর সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যেজুড়ে প্রায় 1 লক্ষ বাইক ট্যাক্সি রয়েছে, যার মধ্যে কেবলমাত্র আনুমানিক 700টি বাইক ট্যাক্সি বাণিজ্যিক পারমিট পেয়েছে । এই বিষয়ে বাইক ট্যাক্সি চালক শঙ্খদীপ দত্ত বলেন, "বিষয়টি এখন শাঁখের করাতের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে । ইতিমধ্যেই লক্ষ লক্ষ মানুষ এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজেদের মত করে কর্মসংস্থান করে নিয়েছে । এই টাকার উপরেই অনেকের সংসার চলে । ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও এই সরকার ও ফাইন্যান্স সংস্থাগুলির টানাপোড়েনে বহু যুবক-যুবতী ব্যক্তিগত মোটরবাইককে বাণিজ্যিকীকরণ করাতে পারছে না । আবার সময়ের মধ্যে তা করাতে না পারলে আর্থিক মাশুল দিতে হবে ৷ এই আবহে অনেকেই বাইক নিয়ে পথে নামতে ভয় পাচ্ছেন ।"
পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, "মোটর ভেহিক্যাল অ্যাক্ট 1988 অনুযায়ী, ফাইন্যান্স সংস্থাগুলির থেকে এনওসি না পেলে পরিবহণ দফতরের কিছুই করার থাকে না । কারণ, ঋণের টাকা শোধ না হওয়া পর্যন্ত, গাড়ির বৈধ মালিক হল ফাইন্যান্স সংস্থা । সুতরাং, একটি বাইকের বাণিজ্যিকীকরণ করানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ফাইন্যান্স সংস্থার এনওসি থাকা বাধ্যতামূলক ।"