ব্যারাকপুর, 20 জুলাই: বেলঘরিয়া শুটআউট-কাণ্ডে অবশেষে বিহারের গ্যাংস্টার সুবোধ সিংকে নিজেদের হেফাজতে পেল পুলিশ । শনিবার কড়া নিরাপত্তায় এই গ্যাংস্টারকে পেশ করা হয় ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে । এ দিন পুলিশের তরফে জেলবন্দি সুবোধকে দশ দিনের হেফাজত চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল আদালতের কাছে । পালটা, এর বিরোধিতা করে সুবোধের আইনজীবী তাঁর মক্কেলের পুলিশি হেফাজতের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন । দু'পক্ষের সওয়াল-জবাব পর্ব শেষে বিচারক গ্যাংস্টার সুবোধ সিংয়ের সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন । আদালতে প্রবেশের সময় এ দিন সুবোধের শরীরী ভাষা ছিল যথেষ্টই ফুরফুরে । মুখেও ছিল মিষ্ট হাসি । তবে, সংবাদ মাধ্যমের কোনও প্রশ্নেরই উত্তর এ দিন দিতে দেখা যায়নি গ্যাংস্টার সুবোধকে ।
বেলঘরিয়া শুটআউট-কাণ্ডে অভিযুক্ত গ্যাংস্টার সুবোধ সিংয়ের 7 দিনের পুলিশি হেফাজত (ইটিভি ভারত) পুলিশ সূত্রে খবর, গত 15 জুন বেলঘরিয়ায় ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডলের গাড়ি লক্ষ্য করে যে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছিল । তাতে প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে বিহারের এই গ্যাংস্টারের । বিহারের বেউর জেলে বসেই সে গোটা ঘটনার ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করেছিল বলে একপ্রকার নিশ্চিত তদন্তকারীরা । শুধু তাই নয়, শুটআউটের ঘটনার পরপরই ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডলের কাছে টাকা চেয়ে যে হুমকি ফোন এসেছিল, তাতেও কিন্তু নাম জড়িয়েছে সুবোধের ।
ঘটনার পর ওই ব্যবসায়ী মুখেই শোনা গিয়েছিল এই গ্যাংস্টারের নাম । শুটআউট-কাণ্ডে ইতিমধ্যে পুলিশের জালে ধরা পড়েছে পাঁচ অভিযুক্ত । তদন্তের অগ্রগতির স্বার্থে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের একটি স্পেশাল টিম বিহারেও যায় । সেখান থেকে সুবোধ ঘনিষ্ঠ কুখ্যাত দুষ্কৃতী রৌশন যাদব ওরফে তাঁতিয়া-কে এরাজ্যে নিয়ে আসে পুলিশ । তাঁকেও ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নেয় ব্যারাকপুর কমিশনারেট ।
কিন্তু, এতকিছুর পরেও ঘটনার মূল চক্রী সুবোধ সিং-কে নিজেদের হেফাজতে পাচ্ছিল না পুলিশ । সেই সুযোগ তৈরি করে দেয় রানিগঞ্জ ডাকাতির মামলায় সুবোধকে সিআইডি এরাজ্যে নিয়ে আসায় । তারপর থেকেই ব্যারাকপুর কমিশনারেট উঠেপড়ে লাগে, সেখানকার একাধিক অপরাধের ঘটনায় সুবোধকে নিজেদের হেফাজতে নিতে । অবশেষে শনিবার তাঁকে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে আসানসোল সংশোধনাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে নিয়ে আসা হয় ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে ।
এদিকে, সুবোধকে আপাতত বেলঘরিয়া শুটআউট-কাণ্ডে পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিলেও পরবর্তীতে তাঁকে ব্যারাকপুরের অন্যান্য অপরাধের ঘটনাতেও হেফাজতে নেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্রে । পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁর বিরুদ্ধে টিটাগড়ে বিজেপি নেতা মনীশ শুক্লা খুনের অভিযোগ যেমন রয়েছে, তেমনই ডানলপে বেসরকারি ঋণ সংস্থার অফিসে ডাকাতি, আনন্দপুরীতে ডাকাতি করতে এসে সোনার দোকান মালিকের ছেলেকে গুলি করে খুন-সহ নানা দুষ্কর্মের অভিযোগও রয়েছে । বিহারের এই গ্যাংস্টারের দাপটে একসময় রাতের ঘুম উড়েছিল পুলিশ-প্রশাসনের । পরবর্তীতে বিহারের অন্য একটি মামলায় তাঁকে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেলে যেতে হয় । যদিও, বিহারের জেলে বসেই সুবোধ তাঁর অপরাধের সাম্রাজ্যের নেটওয়ার্ক সামলাতেন বলে অভিযোগ ।
এই বিষয়ে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (সাউথ) অনুপম সিংয়ের যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেলঘরিয়ায় শুটআউটের মামলার তদন্ত করা হবে । এই ঘটনার সঙ্গে আর কারোর যোগ রয়েছে কি না, তাও জানার চেষ্টা করা হবে । শুটআউট-কাণ্ডে ধৃতদের বয়ানের সঙ্গেও সুবোধের বয়ান যাচাই করা হবে ।"
অন্যদিকে, এই বিষয়ে সুবোধের আইনজীবী কমলজিৎ সিং বলেন, "সুবোধ সিং সাত বছর ধরে বিহারের বেউর জেলে রয়েছে । সেখানে বসে কিভাবে সে অপরাধ করবে ? সম্প্রতি তাঁকে 14 দিনের হেফাজতে নিয়েছিল সিআইডি । আবার বেলঘরিয়ায় শুটআউটের ঘটনাতে 10 দিনের হেফাজতে চেয়েছে পুলিশ । যদিও সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক । এটুকু বলতে পারি, মিথ্যা মামলায় আমার মক্কেলকে ফাঁসানো হচ্ছে ।"