বহিষ্কৃত বিজেপি নেতা শ্যামল রায় কি তৃণমূলে? জোর জল্পনা রাজনৈতিক মহলে
2023-এর মার্চে শ্যামল রায়কে বিজেপি বহিষ্কার করে। সোমবার বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক খোকন দাসের বাড়িতে যান তিনি ৷ তারপর শুরু হয়েছে দলবদলের জল্পনা ৷
বর্ধমান, 22 অক্টোবর: বিজেপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা শ্যামল রায় কি তাহলে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন ? সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বর্ধমানের বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে। বর্ধমানের বিজেপির প্রাক্তন জেলা সহ সভাপতি শ্যামল রায়কে বিজেপি থেকে বহিষ্কার করার পরে তাঁকে সেভাবে রাজনৈতিক ময়দানে দেখা যায়নি। সোমবার বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক খোকন দাসের বাড়িতে দেখা করতে গিয়ে তার নতুন করে রাজনীতির ময়দানে পা দেওয়ার জল্পনাকে উসকে দিল।
2023 সালের মার্চ মাসে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা, বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৎকালীন বিজেপি সাংসদ এসএস আলুয়ালিয়ার বিরুদ্ধে মুখ খোলেন শ্যামল রায়। এরপর শ্যামল রায়-সহ বিজেপির ছয় কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। এর পরেই শৃঙ্খলাভঙ্গ ও দলবিরোধী কাজের জন্য শ্যামল রায়কে বিজেপি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
সেই সময় ঠিক কী ঘটেছিল?
2023 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৎকালীন জেলার বিজেপির জেলা সহ সভাপতি শ্যামল রায় সাংসদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "সাংসদের অযোগ্যতা ও ব্যর্থতার জন্য জেলায় যে ভাবে দল করা দরকার, সেটা করা যাচ্ছে না। সাংসদ তাঁর কর্তব্য ঠিকভাবে পালন না করার জন্য দলীয় কর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে ।"' এছাড়া বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা-এর বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, "জেলা সভাপতি একজন প্রমোটার । সিপিএমের পরিবার থেকে আসা ওই ব্যক্তি কোনও দিন রাস্তায় নেমে কাজ করেনি । বিজেপিতে এইভাবে সংগঠন চলে না। তার নেতৃত্ব না মেনে তাঁরা পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন।" এরপরেই দল থেকে তাঁকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নির্দেশে শ্যামল রায়কে বহিষ্কার করা হল।
রাজনৈতিক ময়দানে শ্যামল রায়ের উত্থান:
1997 সাল থেকে বিজেপির ছাত্র সংগঠন এভিবিপি করতেন শ্যামল রায়। পরে তিনি ওয়ার্ড কমিটির সদস্য হন। 2019 সাল থেকে 2022 সাল পর্যন্ত জেলা বিজেপির যুব সভাপতি ছিলেন। পরে সম্পাদক ও সহ সভাপতি হন। এছাড়া, তিনি জেলা বিজেপির বর্ধমান উত্তর, ভাতার ও আউশগ্রাম বিধানসভার পর্যবেক্ষক ছিলেন।
শ্যামল রায়ের তৃণমূল যোগের জল্পনা:
সোমবার বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক খোকন দাসের বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন শ্যামল রায় ৷ সঙ্গে ছিলেন তাঁর বেশ কিছু অনুগামী। তিনি বিধায়কের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে তার শরীরের খোঁজ খবর নেন। যদিও খোকন দাসের দাবি, এদিন রাজনৈতিক বিষয়ে কোনও কথা হয়নি।
বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভার তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক খোকন দাস বলেন, "শ্যামল রায়কে আমরা বর্ধমান শহরের সবাই চিনি। আমার নিজের শরীর খারাপ। কার্নিভালের পরে আমার একটা অপারেশন হয়েছে। তাই আমি বাড়ি থেকে বের হচ্ছি না। সেই খবর পেয়ে ও বেশ কিছু সহকর্মী নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করার পরে বিজয়া করেন। আমার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে খোঁজ খবর নেন। তবে ও তৃণমূল কংগ্রেসের যোগ দেবে কিনা, আমার জানা নেই। তাছাড়া, এখন তো তৃণমূল ছাড়া রাজ্যে আর কোনও দল নেই । বাংলায় বিজেপির কোনও ভবিষ্যৎ নেই। তাই যাঁরা বিজেপি করেন, তাদেরকে তো আমরা সবাই আহ্বান জানাই তৃণমূল কংগ্রেসের যোগ দেওয়ার জন্য। ওদের যদি ভাবনায় থাকে, তাহলে সেটা করতে পারেন। তাহলে দলের নিয়ম মেনে তাঁরা যদি আবেদন করেন, সেটা দলের কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তারপর তাঁরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। সেই অনুযায়ী তাদের যোগদান করানো হবে। আমি তাদের বলেছি বাংলার উন্নয়নের স্বার্থে তাদের উচিত বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়ে হাতে হাত রেখে কাজ করা।"
শ্যামল রায় যা জানালেন:
অন্যদিকে শ্যামল রায় বলেন, "বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব শারদীয়া, আর শারদীয়ার পরে আমরা ছোটবেলা থেকে শিখে এসেছি বিজয়া দশমীতে যে কারও কাছে যাওয়া যায়। সেই কারণেই খোকন দাসের বাড়িতে এসেছি। শুনলাম খোকন দার শরীর খারাপ। খবর নেওয়ার পাশাপাশি বিজয়া করলাম। আর না আসার তো কোনও কারণ নেই। 1996 সাল থেকে আজ পর্যন্ত যে সাত জন বিধায়ক হয়েছেন, তাদের মধ্যে আমার দেখা খোকন দাস সেরা। তার মতো কর্মদক্ষতা, মেহনত করার ক্ষমতা খুব কম মানুষের আছে। বিধায়কের কাজ দেখার পরে একজন রাজনৈতিক সচেতন মানুষ হিসাবে বিধায়কের বাড়িতে আসা উচিত বলে মনে করেছি। বিজয়ার প্রণাম ও শুভেচ্ছা জানালাম। উনি আমাকে আজ জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ।"
তাহলে বিজেপি থেকে বহিস্কার করার জন্যই কি তৃণমূল বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ?
শ্যামল রায় বলেন, "আমি বিজেপির কেউ নই। বিজেপির কারও আমার কথা ভেবে লাভ নেই। আমিও বিজেপিকে নিয়ে ভাবি না। যেটা হবে আগামী দিনে দেখা যাবে। পুজোর সময় এই প্রথম দেখলাম কোনও বিধায়ক পুজো প্যান্ডেলে ঘুরছেন। এইভাবে পুজো মন্ডপে কোনও বিধায়ককে বসে থাকতে দেখা যায় না। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে আমরা 2021 সালে একটা রাজনৈতিক দলের হয়ে লড়াই করেছিলাম। কিন্তু, তার সাফল্য নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তাই তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। যদিও তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার জন্য একাধিকবার আমায় বলেছেন। কিন্তু, আজ শুধুমাত্র তাঁর শরীর কেমন আছে, সেই সব বিষয়েই কথা হয়েছে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই ।"