পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

ফের পদ্মে শিল্পতালুক, নাকি দুর্গাপুরের পিচে এবার নতুন কীর্তি ? - Lok Sabha Election 2024 - LOK SABHA ELECTION 2024

Bardhaman-Durgapur constituency West Bengal Lok Sabha election 2024 party wise candidates: বর্ধমান জেলা ভেঙে দু'টুকরো হওয়ার অনেক আগে জন্ম হয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের ৷ একদা লাল দুর্গে এখন পদ্মফুলের রমরমা ৷ প্রচারে পিছিয়ে নেই তৃণমূলও ৷ আবার পুরনো লাল রং ফেরাতে দায়বদ্ধ সিপিএম ৷ এখানে বাম ও রাম একে অপরকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করছে ৷ 4 জুন কুর্সি কার হবে ?

Bardhaman Durgapur Lok Sabha Election 2024
বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা ভোটে কুর্সি কার ? (ইটিভি ভারত)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : May 10, 2024, 5:25 PM IST

বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা ভোটে যুদ্ধ হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে (ইটিভি ভারত)

দুর্গাপুর, 10 মে:ভূ-রাজনৈতিক দিক দিয়ে বৈচিত্রপূর্ণ বর্ধমান-দুর্গাপুর আসন ৷ 2009 সালে পুনর্বিন্যাসের ফলে অবিভক্ত বর্ধমান জেলায় এই লোকসভা কেন্দ্রটি তৈরি হয় ৷ ফলে এর মধ্যে 'ধানের গোলা' পূর্ব বর্ধমানের পাঁচটি বিধানসভা রয়েছে ৷ অন্য়দিকে শিল্পাঞ্চল পশ্চিম বর্ধমানের দু'টি ৷ তাই এখানে প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ কৃষক ও শ্রমিক- দুই শ্রেণির ভোটার ৷ একসময় অবিভক্ত বর্ধমানে সিপিএমের দাপট ছিল ৷ জেলা ভেঙে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান হয় ৷ রাজ্যজুড়ে পালাবদলের হাওয়ায় এই কেন্দ্রের রঙও বদলায় ৷

প্রায় নতুন এই কেন্দ্রে মোটে তিনবার লোকসভা ভোট হয়েছে ৷ প্রথমবার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন সিপিআই(এম) প্রার্থী সাইদুল হক ৷ 2014 সালে তৃণমূল প্রার্থী ডাঃ মমতাজ সংঘমিতা এই কেন্দ্রে প্রথমবার ঘাসফুল ফোটান ৷ কিন্তু পরের বার সামান্য ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী ৷ আর এই জয়ে বড় ভূমিকা ছিল শিল্পাঞ্চলের ৷ প্রথমবার লোকসভা ভোটে তৃতীয় স্থানে থাকা বিজেপি জয়ী হয় ৷ আর সিপিএম নেমে যায় তৃতীয় স্থানে ৷

এবার এই কেন্দ্রের অন্যতম হেভিওয়েট প্রার্থী বিজেপির দিলীপ ঘোষ ৷ বিজেপির প্রাক্তন এই রাজ্য সভাপতির নেতৃত্ব রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠেছে ভারতীয় জনতা পার্টি ৷ সেই দিলীপ ঘোষ কি কেন্দ্রের শ্রমিক-কৃষক সমীকরণে চাল মাত করবেন? ইতিমধ্যে প্রচারে অ-কথা, কু-কথা বলে 'খ্যাতি অর্জন' করেছেন রাজ্য বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা ৷

এদিকে বর্ধমান-দুর্গাপুরের 7টি বিধানসভার মধ্যে বর্ধমান দক্ষিণ, মন্তেশ্বর, দুর্গাপুর পূর্ব, বর্ধমান উত্তর, ভাতার, গলসি, পূর্ব বর্ধমানের অন্তর্গত ৷ এর প্রতিটি বিধানসভা তৃণমূলের দখলে ৷ আর দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিম বিধানসভা দু'টি শিল্পতালুক পশ্চিম বর্ধমানে ৷ এখানে দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভাতেও তৃণমূল ৷ শুধু পশ্চিম দুর্গাপুর বিধানসভার বিধায়ক বিজেপির ৷ বাকি ছ'টি বিধানসভায় দাপট তৃণমূলের ৷ তবে লোকসভা ভোটে তিনবার, এমনকী এবারও তৃণমূলের স্থানীয় কাউকে প্রার্থী করেনি ৷

2024 সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি, তৃণমূল ও সিপিএম প্রার্থী (ইটিভি ভারত)

2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে মাত্র পাঁচ বছরে শেষ হয় তৃণমূল জমানা ৷ সেবার একটুর জন্য হাতছাড়া হয় এই কেন্দ্রটি ৷ লোকসভা নির্বাচনের মাত্র 15 দিন আগে বিজেপি প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়েছিল ৷ ওই কয়েকদিনের প্রস্তুতিতে বিজেপির দার্জিলিং ফেরত এসএস আলুওয়ালিয়া ঘাসফুল প্রার্থী ডাঃ মমতাজ সংঘমিতাকে মাত্র 2 হাজার 439 ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন ৷ আর সেই জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল দুর্গাপুর পূর্ব ও দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভার ভোটারদের ৷ এই দুই কেন্দ্র থেকে প্রায় 74 হাজার ভোটে লিড পান এসএস আলুওয়ালিয়া ৷ তবে এই কেন্দ্রের বাকি পাঁচটি অর্থাৎ পূর্ব বর্ধমানের গলসি, বর্ধমান উত্তর, বর্ধমান দক্ষিণ, মন্তেশ্বর এবং ভাতার থেকে ভালো ভোট পেয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ডাঃ মমতাজ সংঘমিতা ৷

গত নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট হয়নি ৷ এবার কিন্তু দু'দলের মধ্যে আসন সমঝোতা হয়েছে ৷ গতবার বিজেপি প্রার্থীর সমর্থনে 12 শতাংশ ভোট সুইং করেছিল ৷ বামেদের দাবি, তারা এবার এই কেন্দ্র থেকে অনেক বেশি মানুষের সমর্থন পাবেন ৷ 2019 সালের ভোটে লোকসভা নির্বাচনে শহর দুর্গাপুর থেকে 74 হাজার ভোটের যে লিড বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন, সেটাই তাঁর জয়ের সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হয়েছিল ৷

আগামী 13 মে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনে ভোট ৷ তৃণমূল এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে জাতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদকে ৷ তাঁর একটা পরিচয় 1983 সালের বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় অলরাউন্ডার ৷ এছাড়া তাঁর অন্য পরিচয় তিনি প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ ৷ 2014 সালের লোকসভা ভোটে বিহারের দ্বারভাঙা থেকে কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হন ৷ পরে দল বদল করে 2021 সালের নভেম্বরে তৃণমূলে যোগ দেন ৷ তাঁর ভরসা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি মনে করছেন দিদিকে দেখেই ভোট দেবেন ভোটাররা ৷ এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত ৷ প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ আজাদ বলেন, "দিদি শুধু মুখ ফুটে বলবেন ৷ ব্যস, বাংলায় খেলা আপনাআপনি শুরু হয়ে যাবে ৷"

2019 সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি, তৃণমূল ও সিপিএম প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট (ইটিভি ভারত)

কীর্তির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ ৷ যিনি নেতৃত্বে থাকাকালীন 2019 সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে 18টি আসনের দখল নিয়েছিল ৷ 2014 সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র 2 ৷ এবারের ভোটময়দানে তিনি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতৃপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা থেকে সম্প্রতি তৃণমূলের প্যান্ট খুলে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ৷ নির্বাচন কমিশনও তাঁকে সতর্ক করেছে ৷

ভারতীয় জনতা পার্টির প্রাক্তন সহ-সভাপতি দিলীপ গতবার লোকসভা ভোটে মেদিনীপুর আসন থেকে জিতেছিলেন ৷ এবার আসন বদলে তাঁকে বর্ধমান-দুর্গাপুরে প্রার্থী করেছে শীর্ষ নেতৃত্ব ৷ তবে এটা তাঁর কাছে কোনও চ্য়ালেঞ্জ নয় ৷ পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি বলেন, "এই কেন্দ্রে কোনও চ্যালেঞ্জ নেই ৷ আগের বার মাত্র 15 দিন সময় পেয়ে আলুওয়ালিয়াজি এখান থেকে জিতেছিলেন ৷ এবার আমরা প্রস্তুতি নিয়ে লড়ছি ৷ টিএমসি কী বলবে ? গতবারের লোকসভা ভোটে আমরা একডজন আসন ছিনিয়ে নিয়েছি ৷ ওরা ডিফেনসিভ, আমরা অফেনসিভ ৷"

তৃণমূল, বিজেপির সঙ্গে ভোটযুদ্ধে নেমেছে সিপিআই(এম) ৷ একসময় এই বর্ধমান এবং দুর্গাপুর অবিভক্ত বর্ধমান জেলার মধ্যে ছিল ৷ তখন বর্ধমানকে 'লাল দুর্গ' বলে ডাকত ৷ বামেদের অত্যন্ত শক্ত ঘাঁটি ছিল অবিভক্ত এই জেলা ৷ রাজ্যের বাকি আসনগুলির মতো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখানেও সেই রং ফিকে হয়ে গিয়েছে ৷ তবে অতীতের গৌরব ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর বামেরা ৷ এবার কীর্তি ও দিলীপের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন সিপিআই(এম)-এর ডঃ সুকৃতি ঘোষাল ৷ তিনি বর্ধমান মহিলা মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ৷

সিপিআই(এম) প্রার্থী ডঃ সুকৃতি ঘোষাল এই কেন্দ্রে বিরোধী তৃণমূলকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না ৷ দল বদলের জমানায় তাঁর প্রধান লড়াই বিজেপির বিরুদ্ধে বলে মনে করছেন প্রবীণ নেতা ৷ প্রাক্তন অধ্যক্ষ বলেন, "আমাদের লড়াই প্রধানত ও প্রথমত বিজেপির বিরুদ্ধে ৷ বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলকে আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারছি না ৷ কারণ ব্যাখ্যা করে লাভ নেই ৷ আজ যে বিজেপি, কাল পাঁচিল টপকালে সে তৃণমূল ৷ তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গেলে টিকিট পেয়ে যাচ্ছে ৷ আবার বিজেপি থেকে তৃণমূলে গেলে টিকিট পেয়ে যাচ্ছে ৷ এমনও হচ্ছে একটি দলের টিকিটে জিতল, বিজেপি তাঁকে ভাঙিয়ে নিল ৷ যেমন সাগরদিঘির বাইরন বিশ্বাস ৷ তাই এক্ষেত্রে আমরা কেন তফাৎ করব ?"

বিজেপির এই বিদায়ী সাংসদকে এই কেন্দ্রের মানুষ এলাকায় খুব বেশি পায়নি বলে অভিযোগ ৷ এমন অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল ও সিপিআই(এম) ৷ শুধু তাই নয়, দুর্গাপুরের বন্ধ রাষ্ট্রায়াত্ত্ব কারখানা খোলার দাবিতে লোকসভায় সওয়াল করা, কৃষকদের কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য বিগত পাঁচ বছর লোকসভায় কোনও আওয়াজ তোলেননি বলে প্রচার করছে দুই দল ৷ এই কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভার মধ্যে শুধুমাত্র দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে 2021 সালে বিজেপি প্রার্থী লক্ষ্মণ ঘোড়ুই জয় লাভ করেন ৷ বাকি ছ'টি আসনে তৃণমূল প্রার্থীরা জয়ী হন ৷

গত ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে পশ্চিম ও পূর্ব বর্ধমানের এই সাতটি বিধানসভা এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য দেখা গিয়েছে শাসকদলের ৷ গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের প্রায় সব আসনেই তৃণমূলের জয়জয়কার ৷ যদিও বিজেপি এবং সিপিআই(এম)-র দাবি পঞ্চায়েত নির্বাচনে নির্বাচনের নামে 'প্রহসন' হয়েছে ৷

আরও পড়ুন:

  1. অনুব্রতহীন বোলপুর! বাম-রাম-ঘাসফুলের জমজমাট লড়াইয়ে ফায়দা তুলবে কে ?
  2. অনুব্রতর গড়ে ত্রিমুখী লড়াই, বীরভূমে শতাব্দীর কুর্সি দখলে মরিয়া বিজেপি-কংগ্রেস
  3. বাজার চষে কিনলেন মাছ, গরম থেকে বাঁচতে কর্মীদের খাওয়ালেন ঠেকুয়া

ABOUT THE AUTHOR

...view details