দুর্গাপুর, 10 মে:ভূ-রাজনৈতিক দিক দিয়ে বৈচিত্রপূর্ণ বর্ধমান-দুর্গাপুর আসন ৷ 2009 সালে পুনর্বিন্যাসের ফলে অবিভক্ত বর্ধমান জেলায় এই লোকসভা কেন্দ্রটি তৈরি হয় ৷ ফলে এর মধ্যে 'ধানের গোলা' পূর্ব বর্ধমানের পাঁচটি বিধানসভা রয়েছে ৷ অন্য়দিকে শিল্পাঞ্চল পশ্চিম বর্ধমানের দু'টি ৷ তাই এখানে প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ কৃষক ও শ্রমিক- দুই শ্রেণির ভোটার ৷ একসময় অবিভক্ত বর্ধমানে সিপিএমের দাপট ছিল ৷ জেলা ভেঙে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান হয় ৷ রাজ্যজুড়ে পালাবদলের হাওয়ায় এই কেন্দ্রের রঙও বদলায় ৷
প্রায় নতুন এই কেন্দ্রে মোটে তিনবার লোকসভা ভোট হয়েছে ৷ প্রথমবার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন সিপিআই(এম) প্রার্থী সাইদুল হক ৷ 2014 সালে তৃণমূল প্রার্থী ডাঃ মমতাজ সংঘমিতা এই কেন্দ্রে প্রথমবার ঘাসফুল ফোটান ৷ কিন্তু পরের বার সামান্য ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী ৷ আর এই জয়ে বড় ভূমিকা ছিল শিল্পাঞ্চলের ৷ প্রথমবার লোকসভা ভোটে তৃতীয় স্থানে থাকা বিজেপি জয়ী হয় ৷ আর সিপিএম নেমে যায় তৃতীয় স্থানে ৷
এবার এই কেন্দ্রের অন্যতম হেভিওয়েট প্রার্থী বিজেপির দিলীপ ঘোষ ৷ বিজেপির প্রাক্তন এই রাজ্য সভাপতির নেতৃত্ব রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠেছে ভারতীয় জনতা পার্টি ৷ সেই দিলীপ ঘোষ কি কেন্দ্রের শ্রমিক-কৃষক সমীকরণে চাল মাত করবেন? ইতিমধ্যে প্রচারে অ-কথা, কু-কথা বলে 'খ্যাতি অর্জন' করেছেন রাজ্য বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা ৷
এদিকে বর্ধমান-দুর্গাপুরের 7টি বিধানসভার মধ্যে বর্ধমান দক্ষিণ, মন্তেশ্বর, দুর্গাপুর পূর্ব, বর্ধমান উত্তর, ভাতার, গলসি, পূর্ব বর্ধমানের অন্তর্গত ৷ এর প্রতিটি বিধানসভা তৃণমূলের দখলে ৷ আর দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিম বিধানসভা দু'টি শিল্পতালুক পশ্চিম বর্ধমানে ৷ এখানে দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভাতেও তৃণমূল ৷ শুধু পশ্চিম দুর্গাপুর বিধানসভার বিধায়ক বিজেপির ৷ বাকি ছ'টি বিধানসভায় দাপট তৃণমূলের ৷ তবে লোকসভা ভোটে তিনবার, এমনকী এবারও তৃণমূলের স্থানীয় কাউকে প্রার্থী করেনি ৷
2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে মাত্র পাঁচ বছরে শেষ হয় তৃণমূল জমানা ৷ সেবার একটুর জন্য হাতছাড়া হয় এই কেন্দ্রটি ৷ লোকসভা নির্বাচনের মাত্র 15 দিন আগে বিজেপি প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়েছিল ৷ ওই কয়েকদিনের প্রস্তুতিতে বিজেপির দার্জিলিং ফেরত এসএস আলুওয়ালিয়া ঘাসফুল প্রার্থী ডাঃ মমতাজ সংঘমিতাকে মাত্র 2 হাজার 439 ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন ৷ আর সেই জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল দুর্গাপুর পূর্ব ও দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভার ভোটারদের ৷ এই দুই কেন্দ্র থেকে প্রায় 74 হাজার ভোটে লিড পান এসএস আলুওয়ালিয়া ৷ তবে এই কেন্দ্রের বাকি পাঁচটি অর্থাৎ পূর্ব বর্ধমানের গলসি, বর্ধমান উত্তর, বর্ধমান দক্ষিণ, মন্তেশ্বর এবং ভাতার থেকে ভালো ভোট পেয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ডাঃ মমতাজ সংঘমিতা ৷
গত নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট হয়নি ৷ এবার কিন্তু দু'দলের মধ্যে আসন সমঝোতা হয়েছে ৷ গতবার বিজেপি প্রার্থীর সমর্থনে 12 শতাংশ ভোট সুইং করেছিল ৷ বামেদের দাবি, তারা এবার এই কেন্দ্র থেকে অনেক বেশি মানুষের সমর্থন পাবেন ৷ 2019 সালের ভোটে লোকসভা নির্বাচনে শহর দুর্গাপুর থেকে 74 হাজার ভোটের যে লিড বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন, সেটাই তাঁর জয়ের সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হয়েছিল ৷
আগামী 13 মে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনে ভোট ৷ তৃণমূল এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে জাতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদকে ৷ তাঁর একটা পরিচয় 1983 সালের বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় অলরাউন্ডার ৷ এছাড়া তাঁর অন্য পরিচয় তিনি প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ ৷ 2014 সালের লোকসভা ভোটে বিহারের দ্বারভাঙা থেকে কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হন ৷ পরে দল বদল করে 2021 সালের নভেম্বরে তৃণমূলে যোগ দেন ৷ তাঁর ভরসা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি মনে করছেন দিদিকে দেখেই ভোট দেবেন ভোটাররা ৷ এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত ৷ প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ আজাদ বলেন, "দিদি শুধু মুখ ফুটে বলবেন ৷ ব্যস, বাংলায় খেলা আপনাআপনি শুরু হয়ে যাবে ৷"