পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

উপনির্বাচনের ফলের পুনরাবৃত্তি নাকি বিজেপি ঘরে ফেরাবে আসানসোল, সমীক্ষা কী বলছে ? - Lok Sabha Election 2024

Asansol Constituency West Bengal Lok Sabha Election 2024 Party Wise Candidates: কয়লা সমৃদ্ধ শিল্পাঞ্চলের লোকসভা আসন আসানসোল ৷ এই আসন এককালে ছিল বামদুর্গ ৷ সেই দুর্গের পতন হয় বিজেপির হাত ধরে ৷ 2019 সালেও বিজেপি এই আসন ধরে রেখেছিল ৷ কিন্তু 2022 সালে উপ-নির্বাচনে তৃণমূলের কাছে হারতে হয় বিজেপিকে ৷ 2024 এ আসানসোলের কুর্সি কার দখলে থাকবে, সেটাই খোঁজ নিল ইটিভি ভারত ৷

Asansol Constituency
আসানসোল লোকসভা (নিজস্ব চিত্র)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : May 8, 2024, 10:29 AM IST

Updated : May 8, 2024, 2:25 PM IST

আসানসোল শিল্পাঞ্চলে কুর্সি দখলের লড়াই (ইটিভি ভারত)

আসানসোল, 8 মে: বাম জমানা শেষ হওয়ার পরও বাংলার যে কয়টি আসন তৃণমূল কংগ্রেসের অধরা থেকে গিয়েছিল, তার মধ্যে একটি ছিল আসানসোল ৷ তবে বছর আড়াই আগে উপ-নির্বাচনে আসানসোল দখল করে তৃণমূল ৷ তিন লক্ষেরও বেশি ব্যবধানে জেতেন শত্রুঘ্ন সিনহা ৷ ফলে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের দিকেই সবার চোখ রয়েছে ।

অতীতেও এই কেন্দ্রটি বারবারই ব্যতিক্রমী ও বৈচিত্র্যময় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বিভিন্ন কারণে । তারকা প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়ের পরপর দু’বার জয় । তাঁর দলত্যাগ । মুনমুন সেনের মতো তারকা প্রার্থীর পরাজয় এবং শেষমেষ মুম্বইয়ের সুপারস্টার শত্রুঘ্ন সিনহার আগমন, বিজেপির হাতছাড়া আসানসোল৷

এবারের লোকসভার ফল কী হবে, সেদিকে তাকিয়ে সবাই ৷ শত্রুঘ্ন সিনহা কি তাঁর জয়ের ধারা ধরে রাখতে পারবেন, নাকি বিজেপি পুনরায় ঘরে ফেরাবে আসানসোলের আসন, নাকি বামেরা নতুন কোনও ক্যারিশমা করবে তৃণমূল আমলেও প্রাক্তন বাম বিধায়ক জাহানারা খানকে নিয়ে, সেদিকেই নজর সবার ।

আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী (ইটিভি ভারত)

2014 সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রথমবার বিজেপি আসানসোলে জয়লাভ করে । বিজেপির তারকা প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী দোলা সেনকে 70 হাজার ভোটে পরাজিত করেছিলেন । অন্যদিকে রাজ্যে পরিবর্তন হলেও আসানসোল শিল্পাঞ্চলে তখনও বামেরা অস্তমিত হয়নি । সেই সময়কালে বামেদের প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী সিপিএম প্রার্থী হয়ে 2 লক্ষ 55 হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন ।

কিন্তু সব হিসেব ওলটপালট হয়ে যায় 2019 এর লোকসভা নির্বাচনে । পুনরায় বিজেপির প্রার্থী হন বাবুল সুপ্রিয় । বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলের তারকা প্রার্থী মুনমুন সেনকে 2 লক্ষ ভোটে পরাজিত করেন । বামেদের ভোট নেমে আসে মাত্র 87 হাজারে ।

2014 সালে বাবুল সুপ্রিয় ভোট পেয়েছিলেন 4 লক্ষ 19 হাজার 983টি ভোট । অথচ 2019 সালে মুনমুন সেন ভোট পান 4 লক্ষ 35 হাজার 741 টি ভোট । অর্থাৎ 2014 সালে বিজেপি যা ভোট পেয়েছিল 2019-এ তার থেকেও বেশি ভোট পেয়ে কিন্তু পরাজিত হতে হয়েছিল মুনমুন সেনকে । কারণ, বামেদের 2014 সালে লোকসভা ভোটে পাওয়া 2 লক্ষ 55 হাজার ভোটের বেশিরভাগটাই চলে যায় বিজেপির ভোট বাক্সে ।

কিন্তু যে পরিমাণ ভোট 2019 সালে বিজেপি তার ঘরে নিয়ে আসতে পেরেছিল, 2022-এর উপ-নির্বাচনে তা প্রায় অর্ধেক হয়ে যায় । 2021 সালে বিজেপি ছাড়েন বাবুল সুপ্রিয় । তৃণমূলে যোগ দেন । স্বভাবতই আসানসোলের সাংসদ পদ থেকেও তাঁকে ইস্তফা দিতে হয় । আর এরপরে 2022 সালে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । আসানসোলে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে আসেন তারকা শত্রুঘ্ন সিনহা । বিজেপির প্রার্থী হন আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল । সমস্ত হিসেব-নিকেশকে ভুল প্রমাণ করে শত্রুঘ্ন সিনহা 3 লক্ষের বেশি ভোটে অগ্নিমিত্রা পালকে পরাজিত করেন ।

2022 উপনির্বাচনের ফলাফল (ইটিভি ভারত)

যদি 2022-এর উপ-নির্বাচনের ভোটবাক্সের দিকে দেখা যায় তাহলে শত্রুঘ্ন সিনহা, তৃণমূলের 2019-এ প্রাপ্ত ভোট 4 লক্ষ 35 হাজার 741 থেকে 2 লক্ষ 20 হাজার ভোট বেশী পেয়েছিলেন । আর অগ্নিমিত্রা 2019 এর বিজেপির প্রাপ্ত ভোট থেকে 2 লক্ষ 80 হাজার ভোট কম পেয়েছিলেন । বামেরা 2019-এর মতোই প্রায় 2022-এ ভোট পায় । অর্থাৎ বিজেপির ঘরের ভোটের বিরাট অংশ চলে আসে তৃণমূলে । ফল, প্রথমবার আসানসোল লোকসভা দখল করে তৃণমূল ।

আসানসোল লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা । যার মধ্যে কুলটি এবং আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা বিজেপির দখলে । 2022-এর লোকসভার উপ-নির্বাচনে বিধানসভা ভিত্তিক ফল দেখলে, সাতটির মধ্যে ছ’টি বিধানসভায় জয়লাভ করেছিল তৃণমূল । শুধুমাত্র কুলটি বিধানসভায় সামান্য কিছু ভোটে পরাজিত হয়েছিল তৃণমূল । অন্যদিকে নিজের বিধানসভা কেন্দ্র আসানসোল দক্ষিণেও কিন্তু হেরে গিয়েছিলেন বিজেপির লোকসভার প্রার্থী অগ্নিমিত্র পাল ।

সামনে 2024-এর লোকসভা নির্বাচন । কী ফলাফল হতে পারে, তার সমীক্ষা করল ইটিভি ভারত । শত্রুঘ্ন সিনহা 3 লক্ষ ভোটে উপ-নির্বাচনে জিতেছেন, সে দিক দিয়ে তাঁর আত্মবিশ্বাস প্রবল । সেটা তাঁর পজিটিভ দিক হলেও, তাঁকে সাংসদ হিসেবে আসানসোল তেমন পায়নি বলেই বিরোধীদের দাবি ।

তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, আসানসোলের হয়ে একটিও সওয়াল করেননি তিনি সংসদে । আসানসোলের কোনও সমস্যা সমাধানে তিনি উদ্যোগী হননি । ধস পুনর্বাসন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ বা খনির বেসরকারিকরণ ঠেকাতে বা খনি এলাকার জ্বলন্ত সমস্যাগুলি নিয়ে তাঁকে কোন বিতর্ক বা সওয়াল জবাবে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি সংসদে । তাই উপ-নির্বাচনের ফলের পুনরাবৃত্তি এবার নাও হতে পারে বলে খোদ তৃণমূলের অন্দরেই আশঙ্কা ।

শত্রুঘ্ন সিনহার বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছেন বিজেপির সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া । বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ। ছ’বারের সাংসদ তিনি। দার্জিলিংয়ে তারকা প্রার্থী বাইচুং ভুটিয়াকে হারিয়েছিলেন । দুর্গাপুরেও অল্প কয়েকদিনের মধ্যে এসেই জয়লাভ করেছিলেন। তাঁর হারের রেকর্ড গত কয়েক বছরে নেই । যেখানেই তিনি দাঁড়ান, তিনি নাকি জিতে যান । কিন্তু অতীতের রেকর্ডে যদি দেখা যায় তাহলে 1998 সালে এই আসানসোল লোকসভাতেই কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে গোহারা হেরেছিলেন এই সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া ।

নিজেকে ভূমিপুত্র হিসেবে দাবি করলেও তাঁর নিজের জন্মস্থান জেকে নগর নিয়েই তিনি নাকি কোনও খোঁজ খবরই রাখেন না বলে অভিযোগ । স্থানীয় কোনও সমস্যা সম্পর্কেও তার কোনও ধারণা নেই বলে অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা । অন্যদিকে দুর্গাপুরের সাংসদ থাকাকালীন তাঁকে দেখা যায়নি । তিনি কোনও কাজ করেননি বলেও দাবি করছে তৃণমূল । ফলে সেক্ষেত্রেও বাবুল সুপ্রিয়র মতো সহজে আসানসোলের বৈতরণী পার হওয়া সুরিন্দর সিং আলুয়ালিয়ার পক্ষে সম্ভব নয় বলেই অনেকের দাবি ।

যদি বিধানসভা গত ভাবে পর্যালোচনা দেখা যায়, তাহলে কুলটি বিধানসভায় যেখানে বিজেপি জয়ী হয়েছিল, সেখানকার বিধায়ক অজয় পোদ্দারের বিরুদ্ধে কুলটিবাসীর প্রচণ্ড ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে । এই লোকসভা ভোটে বিভিন্ন জায়গায় প্রচারে প্রার্থী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়ার সামনেই স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে । অন্যদিকে আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল প্রার্থী হতে চলে গিয়েছেন মেদিনীপুরে । প্রশ্ন উঠছে, তবে কি অগ্নিমিত্রা আসানসোল ছেড়ে পালাতে চাইছেন ? সবে মিলে বিজেপিরও অবস্থা তথৈবচ আসানসোলে । দলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও প্রকট ।

যদিও প্রচারের হাওয়াতে অনেকটাই এগিয়ে সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া । মিঠুন চক্রবর্তী, যোগী আদিত্যনাথ-সহ হেভিওয়েট নেতারা এসেছেন । আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-সহ আরও একঝাঁক কেন্দ্রীয় নেতা-নেত্রী । অন্যদিকে শত্রুঘ্ন সিনহার প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এলেও প্রচারে তেমন ঝড় উঠছে না বলেই আসানসোল শহরে গুঞ্জন ।

অর্থাৎ এই আসনে সহজ জয় এবার কারও পক্ষেই সম্ভব নয় বলেই মনে করা হচ্ছে । অন্যদিকে সিপিএম প্রার্থী জাহানারা খান পরিবর্তনের সময়ও বা দুর্গ জামুরিয়ায় বিধায়ক ছিলেন । অর্থাৎ বামদুর্গ হিসেবে পরিচিত রানিগঞ্জ ও জামুরিয়ার বামেদের ভোট পুনরায় বামেদের ঘরে আসছে এমনটাই মনে করা হচ্ছে । সেক্ষেত্রে জাহানারা খান জয়ী না হলেও বিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলির কাছে ভোট ভাগাভাগির ক্ষেত্রে একটি বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবেন বলে অনেকের মত ।

কার ভোট তাঁর ঘরে যায়, তার উপরেই নির্ভর করছে আসানসোলের জয় । আর তাই লড়াই হলেও সেটা কাঁটায় কাঁটায় হবে । তবে যেই জিতুক জয়ের ব্যবধান এবার বিরাট কিছু হবে না । গণতন্ত্রে অবশ্য সেটাই শ্রেয় ।

আরও পড়ুন:

  1. সেলিম ফ্যাক্টরে কি নবাবের শহরে কুর্সি টলমল শাসকের? নাকি ফুটবে পদ্ম ?
  2. রায়গঞ্জ কেন্দ্রের কুর্সি কার, কোন দলবদলু করবেন বাজিমাত ?
  3. মালদা দক্ষিণের কুর্সিতে কি ফের 'খান চৌধুরী', নাকি মানুষের নজর ঘুরবে
Last Updated : May 8, 2024, 2:25 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details