কলকাতা, 5 ফেব্রুয়ারি: আইনি লড়াইয়ের জেরে রাজ্যের টেবিল টেনিস খেলোয়াড়দের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কার মেঘ জমতে শুরু করেছে ৷ হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের নির্দেশে আপাতত স্থগিত হয়ে গেল টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন ৷ ফুটবল- ক্রিকেটের পর টেবিল টেনিসের মতো খেলা নিয়ে অনেকেরই আগ্রহ থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে টেবিল টেনিসে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক স্তরে যত সাফল্য এসেছে, তা বাংলায় আর কোনও খেলায় নেই ৷ অথচ এবার সেই টেবিল টেনিসের নিয়ামক সংস্থাকে ঘিরেই জটিলতা তৈরি হল ৷
প্রশাসনিক পদের নির্বাচন ঘিরে লড়াইয়ে আদতে খেলাটাই ব্যাকফুটে চলে যাওয়ার উপক্রম ৷ ফলে খেলোয়াড়দের পরিস্থিতিও ভালো নয় ৷ টেবিল টেনিসের রাজ্য সংস্থা বিএসটিটিএ চার বছর আগে যাত্রা শুরু করে এখন অশান্তির ঠিকানায় পরিণত হয়েছে ৷ চ্যাপ্টার ওয়ান বনাম চ্যাপ্টার টু এর প্রশাসনিক ক্ষমতার লক্ষণরেখা স্থির করা নিয়ে তৈরি বিবাদ পুরোটাই চলে গিয়েছে আদালতে ৷ ফলে 7 ফেব্রুয়ারি বিএসটিটিএ-র নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও, তা আপাতত স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে সার্কিট বেঞ্চ ৷
এক রাজ্য, এক সংস্থা নীতি নিয়ে বেঙ্গল স্টেট টেবিল টেনিস সংস্থার পথ চলা শুরু ৷ আগের দু’টি সংস্থাকে এক ছাতার তলায় নিয়ে এসে খেলোয়াড়দের সার্বিক উন্নতির কথা মাথায় রেখেই এই পথচলা শুরু হয় ৷ শুরুতে একআত্মা একপ্রাণ মনোভাব থাকলেও, সময় যত গড়িয়েছে ততই পুরানো ক্ষতের কারণে ব্যবধান বেড়েছে ৷ চ্যাপ্টার ওয়ান এবং চ্যাপ্টার টু এই ভাগের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া তলানিতে ঠেকেছে ৷ অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতা এবং দায়িত্বের মধ্যে যে সূক্ষ্ম সীমারেখা রয়েছে তা উভয়পক্ষই ভুলে গিয়েছে ৷ উলটে শুরু হয়েছে পারস্পরিক দোষারোপের পালা ৷
যার 'এপিসেন্টার' চ্যাপ্টার টু বা উত্তরবঙ্গ ৷ অভিযোগ উঠেছে, বঞ্চনার শিকার হচ্ছে উত্তরবঙ্গ ৷ বিএসটিটিএ-র কোষাধ্যক্ষ সুব্রত রায়ের অভিযোগ, "মায়াঙ্ক জালান প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করার পর, স্থলাভিষিক্ত হন স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তারপর থেকেই সমস্যার শুরু ৷ সংবিধান অনুযায়ী যে কোনও সিদ্ধান্তে যুগ্মসচিবের স্বাক্ষর জরুরি ৷ কিন্তু, দেখা যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নিজেই স্বাক্ষর করে চিঠি দিচ্ছেন ৷ নির্বাচনের ব্যাপারে যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে তাতেও যুগ্মসচিবের স্বাক্ষর নেই ৷ এই ঘটনা প্রথম নয় ৷ যুগ্মসচিবদের অন্যতম মান্তু ঘোষের স্বাক্ষর প্রয়োজন থাকলেও, তা করানো হচ্ছে না ৷ প্রেসিডেন্ট নিজেই স্বাক্ষর করছেন ৷ বা আরেক যুগ্ম সচিব শর্মি সেনগুপ্তকে দিয়ে স্বাক্ষর করানো হচ্ছে ৷ মান্তুকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে ৷"
এই অভিযোগের পালটা জবাবও দিয়েছেন স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলছেন, "খেলোয়াড় হিসেবে মান্তুকে সম্মান করি ৷ কিন্তু, সেই সম্মান তিনি বজায় রাখতে না পারলে আমার কিছু করা নেই ৷ সংস্থার সংযুক্তির সময় মান্তু আমাদের সঙ্গে ছিলেন ৷ তারপর এখন আদালতে মামলা করছেন ৷ আমি মনে করি এটা করার অধিকার মান্তুর নেই ৷"
মান্তুকে নিয়ে অসহযোগিতার অভিযোগ চ্যাপ্টার ওয়ানেরও রয়েছে ৷ সম্প্রতি শেষ হওয়া জুনিয়র ও ইয়ুথ ন্যাশানাল প্রতিযোগিতা 9 দিন ধরে কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে চলেছে ৷ কিন্তু, মান্তু ঘোষ সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন ৷ তার আগে একাধিক মিটিংয়ে ডাকা হলেও আসেননি তিনি ৷ কেন এই এড়িয়ে চলা, তার স্পষ্ট ছবি চ্যাপ্টার ওয়ানের পদাধিকারীদের কাছেও নেই বলা হচ্ছে ৷ কার্যকরী কমিটিতে প্রতিনিধিত্বের দিক থেকে তিরিশ শতাংশ প্রতিনিধি উত্তরবঙ্গের ৷ সংখ্যায় পিছিয়ে পড়ায় দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গ গুরুত্ব পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ যা চ্যাপ্টার ওয়ানের কর্তারা মানতে রাজি নয় ৷ তারা সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানাচ্ছে ৷ তা সত্ত্বেও অসহযোগিতা করা হচ্ছে বলে পালটা অভিযোগ উঠেছে ৷