কলকাতা, 14 ফেব্রুয়ারি: 16টি সোনা, 13টি রুপো এবং 18টি ব্রোঞ্জ। সর্বমোট 47টি পদক নিয়ে 2025 জাতীয় গেমসে শেষ হল বাংলার সফর। অষ্টমস্থান পেয়ে খুশি বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা। গত জাতীয় গেমসের তুলনায় এবারের পারফরম্যান্স নজরকাড়া। সাঁতার থেকে লনবল, তিরন্দাজি থেকে টেবল টেনিস, যোগব্যায়াম, জিমন্যাস্টিকে বাংলার প্রতিনিধিরা চমকে দিয়েছেন উত্তরাখণ্ডে অনুষ্ঠিত গেমসে। এবারের জাতীয় গেমস যেন বাংলার প্রতিনিধিদের উত্তরণের মঞ্চ। নিম্নবিত্ত ঘর থেকে লড়াই করে উঠে আসার অভিজ্ঞান এবারের জাতীয় গেমসে বাংলার পারফরম্যান্স। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিজেকে ফিরে পাওয়ার মঞ্চও।
উত্তরাখণ্ডে জাতীয় গেমসে বুধবার বাংলা দলকে টেবল টেনিসে ব্রোঞ্জ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন প্য়াডলারদের। সোনা জিতে মিক্সড ডাবলসে বৃহস্পতিবার গেমসের শেষদিনে হতাশা ঘোচাল ঐহিকা মুখোপাধ্যায় এবং অনির্বাণ ঘোষের জুটি। কাঁধের চোটের জন্য ডাবলসের ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছিলেন নৈহাটির অনির্বাণ। কিন্তু মিক্সড ডাবলসে পদকের সম্ভাবনা থাকায় ব্যথা নিয়েও বাজিমাত করলেন শরথ কমলের ভক্ত।
নৈহাটির মেয়ে ঐহিকার সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই খেলছেন। ফলে দু’জনের মধ্যে বোঝাপড়া যথেষ্ট ভালো। যার প্রতিফলন দেখা গেল সোনাজয়ের ম্যাচে। অনির্বাণ বলছিলেন, "প্রথম দু’টি গেমে পরিকল্পনায় কিছুটা ভুল ছিল। তৃতীয় গেম থেকে পরিকল্পনায় পরিবর্তন নিয়ে আসি। তারপরে প্রতিপক্ষকে দাঁড়াতে দিইনি।" কোভিডকালে তাঁর বাবার মোবাইল সারাইয়ের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে অনির্বাণের রোজগারেই সংসার চলে। রাজ্য সরকারের ঘোষণা মতো তিন লক্ষ টাকা পুরস্কার অনেকটাই আর্থিক নিশ্চয়তা দেবে বলে মনে করছেন বঙ্গ প্যাডলার।
![NATIONAL GAMES 2025](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/14-02-2025/23541839_wb_tt.jpeg)
গত জাতীয় গেমসে দু’টি সোনা জিতেছিলেন ঐহিকা। চলতি জাতীয় গেমসে মৌমা দাসকে সঙ্গী করে ডাবলসে ব্রোঞ্জও জিতেছেন। ঐহিকার চোখ এবার চিনে অনুষ্ঠিত টেবল টেনিসের এশিয়া কাপ। শাহরুখ খানের অন্ধ ভক্ত তাঁর প্রিয় নায়কের ভাষায় বলছেন, "আমি প্রত্যেকদিন নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামি। অন্য কাউকে দেখে নয়, আমার লড়াই নিজের সঙ্গে।"
দুপুরে টেবল টেনিস বাংলাকে ভারতসেরা করে, আর সন্ধেয় জিমন্যাস্টিক্স। গেমসের শেষদিন আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্সে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করলেন ঋতু দাস। ব্যান্ডেলের মেয়ে ঋতুর বাবা সবজি বিক্রেতা। বাবার পরামর্শেই মূলত এই খেলাকে বেছে নিয়েছেন ঋতু। জিমন্যাস্ট বলছিলেন, "কোচ মৌনা কর্মকারের বাড়িতেই আমি থাকি। ওনার দেখানো পথেই আমি এগিয়ে চলেছি। ভবিষ্যতে ওনার মতোই হতে চাই।" রাজ্য সরকারের আর্থিক পুরস্কারের কথা শুনে খুশির সোনার মেয়ে। সিমোন বাইলসের ভক্তের কথায়, "শুধু বাবা-মা নয়, আমি কোচের জন্য কিছু করতে চাই। কারণ উনি না-থাকলে আমি এই জায়গায় আসতে পারতাম না ৷"
বুধবার আনইভেন বারস ইভেন্টেের পর শেষদিন নিজের প্রিয় ফ্লোর এক্সারসাইজে ফের সোনা জিতলেন প্রণতি দাস ৷ জয়নগরের মেয়ে বলছিলেন, "জাতীয় জিমন্যাস্টিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের পরে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার সময়ে দীপাদি'র অনুপ্রেরণামূলক কথাগুলোই আমাকে ফের পদক জিততে সাহায্য করেছে। তাই এই সাফল্য দীপাদিকেই উৎসর্গ করছি।" তবে কোচ টুম্পা দেবনাথের সমর্থনের কথাও স্বীকার করতে ভুললেন না প্রণতি। পরপর দু'দিনে দু'টো সোনা। কোনটা এগিয়ে? প্রণতি বলছেন, "সোনাজয়ের আনন্দই আলাদা। তাই কোনও একটি ইভেন্টকে বেছে নেওয়া খুবই কঠিন। প্রত্যেক প্রতিযোগিতায় আমি নিজের সেরাটা দিই। বাকিটা নিয়ে আর ভাবি না।"