পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / sports

ব্রেন টিউমার থামিয়ে দিতে পারেনি, ট্র‍্যাকে আজও দুরন্ত শ্যামলী - মুম্বই ম্যারাথন

Athlete Shyamali Singh Returns to Track: ব্রেন টিউমারকে হার মানিয়ে ফের ট্র্যাকে ফিরে মুম্বই ম্যারাথনে ব্রোঞ্জ জয় অ্যাথলিট শ্যামলী সিংয়ের ৷ শুধু ফিরলেন তা নয় ৷ জানুয়ারি মাসে মুম্বই ম্যারাথনে ব্রোঞ্জ জিতেছেন তিনি ৷ এবার ইচ্ছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে পারফর্ম্যান্স করা ৷

ETV BHARAT
ETV BHARAT

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 20, 2024, 1:49 PM IST

ব্রেন টিউমার থামাতে পারেনি শ্যামলীকে

রানিগঞ্জ, 20 ফেব্রুয়ারি: থামা চলবে না, থেমে যাওয়া মানেই যেন মরণ ৷ একজন অ্যাথেলিটের জীবনে এটাই যেন শেষ মন্ত্র ৷ আর তাই মারণরোগ ব্রেন টিউমারের কাছেও হেরে যাননি, থেমে যাননি রানিগঞ্জের বাসিন্দা বাংলার অ্যাথেলিট শ্যামলী সিং ৷ বরং ব্রেন টিউমারের জটিল অস্ত্রোপচারের পরেও মনের জোরে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি, ট্র‍্যাকে ফিরেছেন ৷ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া মুম্বই ম্যারাথনে 42 কিলোমিটার দৌড়ে 33 বছরের শ্যামলী সিং ব্রোঞ্জ জয় করে ফিরেছেন ৷

পশ্চিম মেদিনীপুরের দরিদ্র আদিবাসী পরিবারের মেয়ে শ্যামলী ৷ ছোট থেকেই ছুটতেন ৷ জেলা ও রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতাগুলিতে বরাবর সফল হওয়ায়, সবার নজরে আসেন শ্যামলী ৷ কিন্তু, দরিদ্র আদিবাসী পরিবারের মেয়ে হওয়ায় তেমনভাবে কোচিং বা ডায়েট কিছুই পাননি ৷ এরই মাঝে তাঁর আলাপ হয় আরেক অ্যাথেলিট সন্তোষ সিংয়ের সঙ্গে ৷ সন্তোষ তাঁর কোচ হয়ে ওঠেন ৷ তবে, শুধু ট্র‍্যাকের নয় ৷ জীবন যুদ্ধেও পাশে পান সন্তোষকে ৷ প্রথমে প্রণয়, তারপর বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন দু’জন ৷ স্ত্রীকে সফল অ্যাথেলিট করতে নিজে প্রতিযোগিতায় নামা ছেড়ে দেন সন্তোষ ৷

অ্যাথলিট শ্যামলী সিংয়ের জেতা পদক

বর্তমানে সন্তোষ এবং শ্যামলী রানিগঞ্জের কুনুস্তরিয়ার কাঁটামোড় এলাকার বাসিন্দা ৷ সাধারণ এক চিলতে বাড়ি ৷ স্বামীর কোচিং থেকে সামান্য কিছু আয় ৷ আর নিজের জেতা পুরস্কারের অর্থে চলে সংসার ৷ আর সঙ্গে চলছে অনুশীলন ৷ কিন্তু, অনুশীলনের জন্য ভালো মাঠ নেই ৷ রানিগঞ্জ থেকে বেশ খানিকটা দূরে মেজিয়া, শুশুনিয়া পাহাড় এলাকায় অনুশীলন করেন অ্যাথলিট শ্যামলী সিং ৷ আর তাঁর এই একাগ্র চিত্তে দৌড় এনে দিয়েছে একাধিক সফলতা ৷

কলকাতা ম্যারাথনে প্রথম হয়েছিলেন ৷ মুম্বই, ওড়িশা-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ম্যারাথন দৌড়ে প্রথম তিনের মধ্যে স্থান ছিনিয়ে নিয়েছেন তিনি ৷ আন্তর্জাতিক স্তরে থাইল্যান্ডেও প্রথম দশে উঠে এসেছেন শ্যামলী ৷ সবকিছুই ঠিকঠাক ভাবে চলছিল। একচিলতে বাড়িতে জমছিল পদকের পাহাড়। কিন্তু হঠাৎ অন্ধকার। ট্র‍্যাকেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন শ্যামলী।

অ্যাথলিট শ্যামলী সিং

প্রায় 4 বছর আগে মুম্বইয়ে 42 কিলোমিটার টাটা ম্যারাথনে অংশ নিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন শ্যামলী ৷ ট্র‍্যাকেই বমি করতে শুরু করেন ৷ তবুও হাল ছাড়েননি ৷ দৌড় শেষ করেন ৷ তারপর থেকে দৌড়াতে গেলেই বমি পেত তাঁর, মাথা ঘুরত ৷ 2020 সালের সেপ্টেম্বরে ধরা পড়ে তাঁর ব্রেন টিউমার ৷ সাধারণ নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে এই রোগের চিকিৎসার খরচ শুনেই চোখ কপালে ওঠে ৷

কিন্তু, আসানসোলের বেশ কিছু ক্লাব ও সংগঠন শ্যামলীর পাশে দাঁড়ায় ৷ চেন্নাইয়ের একটি বড় হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয় শ্যামলীর ৷ প্রায় 12 ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচার হয় শ্যামলীর মস্তিষ্কের ৷ যার ফলে স্বাভাবিক বাকশক্তি হারান তিনি ৷ কিন্তু, মনের জোরে সেই কঠিন সময়ের সঙ্গে লড়াই করে পুনরায় ট্র‍্যাকে ফেরেন শ্যামলী সিং ৷

স্বাভাবিক জীবনে পুরোপুরি ছন্দে ফিরতে তাঁর সময় লাগবে ৷ কিন্তু, দৌড়ের ছন্দে ফিরেছেন তিনি ৷ জানুয়ারি মাসের শেষদিকে মুম্বইয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া 42 কিলোমিটার ম্যারাথন দৌড়ে শ্যামলী তৃতীয় স্থানে শেষ করে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন ৷ তাঁর আগামিদিনে লক্ষ্য এশিয়ান গেমস কিংবা অলিম্পিকসে অংশগ্রহণ করা ৷ কিন্তু, শ্যামলী এবং তাঁর স্বামী সন্তোষ সিং জানিয়েছেন, এই দৌড়ের জন্য বিশেষ ডায়েট ও সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন ৷ আরও অনেক কিছু আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের প্রয়োজন ৷ তার ব্যয়ভার বহন করার মতো অর্থ তাদের কাছে নেই ৷ কোচিং করিয়ে স্বামী সন্তোষ সামান্য আয় করেন ৷ আর শ্যামলী যা পুরস্কার মূল্য পান, তাতেই অ্যাসবেস্টাসের ভাড়া বাড়িতে তাঁদের দারিদ্রতার সংসার ৷ জয়ের পদক, ট্রফি রাখার সেল্ফ তো দূরের কথা, বাড়িতে শৌচাগার পর্যন্ত নেই ৷

কীভাবে আগামিদিনে আরও বড় প্রতিযোগিতায় নামবেন, তা ভেবেই আকুল হচ্ছেন শ্যামলী এবং সন্তোষ ৷ তাই তাঁদের কাতর আহ্বান, যদি কোনও সহৃদয় মানুষ বা সংগঠন তাদের পাশে থাকেন ৷ অথবা সরকার তাঁদের সাহায্য করেন ৷ তাহলে আন্তজার্তিক স্তরে বড় প্রতিযোগিতায় দেশের জন্য সোনা জয় করে আনবেন শ্যামলী ৷

যদিও, তাঁর অসুস্থতার সময় অনেকেরই সহায়তা পেয়েছেন শ্যামলী সিং ৷ আসানসোলের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রগতি শ্যামলীর পাশে ছিল ৷ সেই প্রগতির সম্পাদক শুভব্রত ভট্টাচার্য জানালেন, "আমরা খুব খুশি যে ও আবার ট্র‍্যাকে ফিরে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে মুম্বই ম্যারাথনের মতো 42 কিলোমিটার দৌড়ে ব্রোঞ্জ জিতেছে ৷ এটা একটা বিরাট জয় ৷ আগামিদিনেও আমরা ওর পাশে থাকব ৷"

আরও পড়ুন:

  1. জাতীয় রেকর্ড গড়ে শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে 5টি সোনা আসানসোলের অভিনবর
  2. পথ দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে একটা পা, প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে দেশকে স্বর্ণপদক উপহার
  3. ইউথ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করল বঙ্গতনয়া

ABOUT THE AUTHOR

...view details