রানিগঞ্জ, 20 ফেব্রুয়ারি: থামা চলবে না, থেমে যাওয়া মানেই যেন মরণ ৷ একজন অ্যাথেলিটের জীবনে এটাই যেন শেষ মন্ত্র ৷ আর তাই মারণরোগ ব্রেন টিউমারের কাছেও হেরে যাননি, থেমে যাননি রানিগঞ্জের বাসিন্দা বাংলার অ্যাথেলিট শ্যামলী সিং ৷ বরং ব্রেন টিউমারের জটিল অস্ত্রোপচারের পরেও মনের জোরে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি, ট্র্যাকে ফিরেছেন ৷ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া মুম্বই ম্যারাথনে 42 কিলোমিটার দৌড়ে 33 বছরের শ্যামলী সিং ব্রোঞ্জ জয় করে ফিরেছেন ৷
পশ্চিম মেদিনীপুরের দরিদ্র আদিবাসী পরিবারের মেয়ে শ্যামলী ৷ ছোট থেকেই ছুটতেন ৷ জেলা ও রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতাগুলিতে বরাবর সফল হওয়ায়, সবার নজরে আসেন শ্যামলী ৷ কিন্তু, দরিদ্র আদিবাসী পরিবারের মেয়ে হওয়ায় তেমনভাবে কোচিং বা ডায়েট কিছুই পাননি ৷ এরই মাঝে তাঁর আলাপ হয় আরেক অ্যাথেলিট সন্তোষ সিংয়ের সঙ্গে ৷ সন্তোষ তাঁর কোচ হয়ে ওঠেন ৷ তবে, শুধু ট্র্যাকের নয় ৷ জীবন যুদ্ধেও পাশে পান সন্তোষকে ৷ প্রথমে প্রণয়, তারপর বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন দু’জন ৷ স্ত্রীকে সফল অ্যাথেলিট করতে নিজে প্রতিযোগিতায় নামা ছেড়ে দেন সন্তোষ ৷
বর্তমানে সন্তোষ এবং শ্যামলী রানিগঞ্জের কুনুস্তরিয়ার কাঁটামোড় এলাকার বাসিন্দা ৷ সাধারণ এক চিলতে বাড়ি ৷ স্বামীর কোচিং থেকে সামান্য কিছু আয় ৷ আর নিজের জেতা পুরস্কারের অর্থে চলে সংসার ৷ আর সঙ্গে চলছে অনুশীলন ৷ কিন্তু, অনুশীলনের জন্য ভালো মাঠ নেই ৷ রানিগঞ্জ থেকে বেশ খানিকটা দূরে মেজিয়া, শুশুনিয়া পাহাড় এলাকায় অনুশীলন করেন অ্যাথলিট শ্যামলী সিং ৷ আর তাঁর এই একাগ্র চিত্তে দৌড় এনে দিয়েছে একাধিক সফলতা ৷
কলকাতা ম্যারাথনে প্রথম হয়েছিলেন ৷ মুম্বই, ওড়িশা-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ম্যারাথন দৌড়ে প্রথম তিনের মধ্যে স্থান ছিনিয়ে নিয়েছেন তিনি ৷ আন্তর্জাতিক স্তরে থাইল্যান্ডেও প্রথম দশে উঠে এসেছেন শ্যামলী ৷ সবকিছুই ঠিকঠাক ভাবে চলছিল। একচিলতে বাড়িতে জমছিল পদকের পাহাড়। কিন্তু হঠাৎ অন্ধকার। ট্র্যাকেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন শ্যামলী।
প্রায় 4 বছর আগে মুম্বইয়ে 42 কিলোমিটার টাটা ম্যারাথনে অংশ নিয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন শ্যামলী ৷ ট্র্যাকেই বমি করতে শুরু করেন ৷ তবুও হাল ছাড়েননি ৷ দৌড় শেষ করেন ৷ তারপর থেকে দৌড়াতে গেলেই বমি পেত তাঁর, মাথা ঘুরত ৷ 2020 সালের সেপ্টেম্বরে ধরা পড়ে তাঁর ব্রেন টিউমার ৷ সাধারণ নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে এই রোগের চিকিৎসার খরচ শুনেই চোখ কপালে ওঠে ৷