কলকাতা, 9 মার্চ: সবুজ মেরুন ডাগ আউটে কোচের চেয়ারে বসা আন্তেনিও লোপেজ হাবাস ধরা দিলেন দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন অবতারে। প্রথম পর্বে তিনি ছিলেন রসকসহীন কঠোর শরীরিভাষার এক কাটখোট্টা বৃদ্ধ। দ্বিতীয় পর্বে বছর সাতষট্টির বৃদ্ধ হাবাস হাসিখুশি। ভাষা সমস্যার জটিলতা সরিয়ে হাবাস অনেক বেশি মিডিয়া ফ্রেন্ডলি। ডার্বির আগে দলের সেরা ফুটবলার দিমিত্রি পেত্রাতোসকে নিয়ে এসেছিলেন। বড় ম্যাচ ঘিরে যখন বঙ্গভঙ্গের পরিস্থিতি তখনও তাঁর মুখে হাসি। একই সঙ্গে নির্লিপ্ততা ধরা পড়েছে তাঁর শরীরিভাষায়। প্রতিপক্ষ বেকায়দায় বলেই কি তিনি আত্মবিশ্বাসী? উত্তর নির্লিপ্ততার মুখোশে ঢাকা। মর্যাদার যুদ্ধের আগে নিজের দলকে এগিয়ে রাখছেন? এই প্রশ্নে পিছিয়ে এলেন হাবাস।
"এক ধাপও এগিয়ে রাখছি না নিজেদের। আমাদের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব থেকে সরে গেলে চলবে না। আমরা শীর্ষ স্থানের লক্ষ্যে ঝাঁপাব।" এমনই মন্তব্য ডার্বিতে অপরাজিত হাবাসের। সেই রেকর্ড কি রবিবারেও বজায় রাখতে পারবেন? ঘুরিয়ে হাবাসের জবাব, "আগের রেকর্ডের কথা মাথাতেই রাখছি না। পরিস্থিতিও সমান নয়। মনে রাখতে হবে ইস্টবেঙ্গলও সুপার সিক্সের জন্য লড়াই করছে। আমাদের পাখির চোখ শীর্ষ স্থান। আমরা সেই দিকেই ঝাঁপাব।" মোহনবাগান শেষ ম্যাচ খেলেছিল জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ৷ তারপর 9 দিনের বিরতি।
রবিবার ফের মাঠে নামছেন দিমিত্রি পেত্রাতসরা। অন্যদিকে, ক্লেটন সিলভারা তিন দিন আগেই এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে খেলছেন। সূচির ব্যস্ততায় ইস্টবেঙ্গল হাঁসফাঁস করছে। সবুজ মেরুন ডুবে অনুশীলনে। ম্যাচ না খেলার অভাবে ছন্দ নষ্ট হয়ে যেতে পারে কি? প্রশ্নটি 'বাপি বাড়ি যা' স্টাইলে বাইরে ফেললেন হাবাস। তাঁর সোজাসাপটা উত্তর, "আমরা কিন্তু বেশি দিন অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছি। তাই এই ব্যাপারে অতটা চিন্তিত নই ।" কার্ড সমস্যায় এই ম্যাচে নেই দীপক টাংরি।
জানুয়ারিতে সুপার কাপ জেতা ইস্টবেঙ্গল হঠাৎ করেই আইএসএলের দ্বিতীয় পর্বে ছন্দহীন হয়ে পড়েছে। এটাই কি জয়ের সেরা সুযোগ? তিন পয়েন্ট পাখির চোখ হলেও ডার্বি নিয়ে অতিরিক্ত আবেগ দেখাতে নারাজ হাবাস। তাঁর কথায়, "সবুজ-মেরুন সদস্য, সমর্থকদের আলাদা আবেগ থাকতে পারে। কিন্তু আমার কাছে এটা শুধুই একটা ম্যাচ। আর আমরা তিন পয়েন্টের জন্য ঝাঁপাব। আমরা পেশাদার। তিন পয়েন্টের বাইরে কিছু ভাবছি না।" জনি কাউকো, দিমিত্রি পেত্রাতস ছাড়া আর কেউই তেমন নজর কাড়তে পারছেন না। জেসন কামিংস, আর্মান্দো সাদিকুরা কি নিজেদের মানের প্রতি সুবিচার করতে পারছেন না। হাবাস তাঁর দলের হয়ে ঢাল ধরলেন। তিনি এত কিছু ভাবতে রাজি নন। বলেছেন, "আমি দলের পারফরম্যান্সে খুশি। ওরা গোল হয়তো সেভাবে করতে পারছে না কিন্তু দলের জন্যে যে নিজেদের সেরাটুকু উজাড় করে দিচ্ছে, এতেই আমি খুশি।"
অনেক টালবাহানার পরে অবশেষে ডার্বির জন্য সময় পাওয়া গিয়েছে আগামিকাল রাত সাড়ে আটটায়। এতে তো অনেক সমর্থকই আসতে পারবেন না। সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাবাসের বার্তা, "আমরা প্রত্যেক সবুজ-মেরুন সমর্থকদের সমর্থন চাই। কিন্তু আমরা পেশাদার। ম্যাচের সময়ের উপর আমাদের হাত নেই।" সুপার কাপে যে দলটা খোঁড়াচ্ছিল, হঠাৎ করেই সেই দলটা বিদ্যুৎ গতিতে ছুটছে? নেপথ্য কারণট কী হাবাসের মস্তিষ্ক? "আমাদের লক্ষ্য পরিষ্কার। শীর্ষ স্থানে শেষ করা। নিয়মশৃঙ্খলা ও চেষ্টার সাহায্যে আমরা যোগ্যতম হয়ে উঠতে চাই" কাঠকাঠ ভাবে শুধিয়ে দেন সবুজ মেরুন হেডস্যার।
হুগো বুমোস চলে যাওয়ার পর মাঝমাঠে জনি কাউকো এসে আবার বাগানে ফুল ফুটিয়েছেন। বলিউডের হিট সুরকার জুটি লক্ষ্মীকান্ত-প্যায়েরেলালের মতো নিমেষে সুপারহিট জুটি হয়ে উঠেছেন জনি-দিমি। এই সাফল্যের রসায়ন কী? দিমিত্রির উত্তর, "জনি দারুণ ফুটবলার। আমরা সবসময় নিজেদের ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। আশা করব, যেন ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারি।"