সুুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে ভোট বিতর্কে সুকান্ত মজুমদার ও শান্তনু সেনের বক্তব্য৷ শিলিগুড়ি, 19 মার্চ: সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে লোকসভা নির্বাচনের দাবি করেছেন ডেরেক ও’ব্রায়েন । এই নিয়ে তাঁকে পালটা জবাব দিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার । মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, "ডেরেক ও’ব্রায়েনের এতো ঝামেলা করার দরকার নেই । বাজার থেকে একটা মোটা জাবদা খাতা কিনে উনি মুখ্যমন্ত্রীকে দিন । উনি (মুখ্যমন্ত্রী) নতুন সংবিধান রচনা করুন । উনি যেটা লিখবেন ওটাই সংবিধান হবে ভারতবর্ষের । মুখ্যমন্ত্রী বাংলায় লিখবেন আর ডেরেকবাবু ওটার কারেকশন (সংশোধন) করবেন । ইংরেজিতে ট্রান্সলেশন (অনুবাদ) করবেন ।"
প্রসঙ্গত, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে ভোটের দাবি জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস । মঙ্গলবার সকালে সোশাল মিডিয়ায় এই নিয়ে একটি পোস্ট করেন তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র তথা রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেতা ডেরেক ও'ব্রায়েন । সেখানেই তিনি এই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়ে জানিয়েছেন, দেশের শীর্ষ আদালতের নজরদারিতে লোকসভা ভোট করানো হোক । তাঁর অভিযোগ, ‘‘যেভাবে নির্বাচিত রাজ্য সরকারের আধিকারিকদের বদল করা হচ্ছে, তাতে বলতেই হয় বিজেপি কি নির্বাচন কমিশনকেও হিজ মাস্টার্স ভয়েসে রূপান্তরিত করতে চাইছে ।"
শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষের বাড়িতে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার৷ উল্লেখ্য, এদিন শিলিগুড়িতে শঙ্কর ঘোষের বাড়িতে যান বিজেপির রাজ্য সভাপতি । শঙ্কর ঘোষের মা প্রয়াত হয়েছেন ৷ সেই কারণেই বিজেপি বিধায়কের বাড়িতে তিনি গিয়েছিলেন ৷ তার আগেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ডেরেক ও’ব্রায়েনের সমালোচনা করেন ৷ পাশাপাশি গার্ডেনরিচে নির্মীয়মান বহুতল ভেঙে পড়া নিয়েও মন্তব্য করেছেন ৷ ওই ঘটনায় ধৃত প্রমোটার ওয়াসিমের সঙ্গে কাউন্সিলর শামস ইকবালের ছবি প্রকাশ্যে আসায় নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে । আর সেই বিষয়েও এ দিন তোপ দাগেন সুকান্ত মজুমদার ।
শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষের বাড়িতে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার৷ তিনি বলেন, "তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বরা সব জানে । মিথ্যা কথা বলছে । কাউন্সিলরদের স্কোয়ার ফিটে টাকা ঠিক করা আছে । ফিরহাদ হাকিম সব জানতেন । ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে সামিম ইকবালের সম্পর্ক আছে । তিন চারদিন আগে শামস ইকবাল তিন কোটির গাড়ি কিনেছে । যে গাড়ি কেনার কথা আমরা জীবনেও ভাবতে পারবো না । কলকাতার কাউন্সিলর কর্পোরেটারদের টাকা দেখলে আপনার মাথা খারাপ হয়ে যাবে ।"
শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষের বাড়িতে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার৷ এছাড়াও এ দিন লোকসভা নির্বাচনে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা বিমল গুরুংয়ের উপরই আস্থা রাখতে দেখা গেল সুকান্ত মজুমদারকে । তিনি জানান, অনিত থাপা কোনও ফ্যাক্টরই নয় । বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে । কাজেই তৃণমূলের পাহাড় জয়ের কোনও সম্ভাবনাই নেই ।
দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের জয়ের প্রসঙ্গ টেনে সুকান্ত বলেন , "পাহাড়ের তৃণমূলের বিন্দুমাত্র জেতার কোনও সম্ভাবনা নেই । অনিতের থেকেও অনেক পুরনো নেতা বিমল গুরুং । কাজেই আমার মনে হয় অনিত কোনও ফ্যাক্টরই নয় । পাহাড়ের মানুষের আবেগ বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে । আমাদের জয় নিশ্চিত ।"
শিলিগুড়িতে সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায় । আর সেই প্রসঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে সুকান্ত বলেন, "যদি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একদিনও জয়ন্ত রায়ের থেকে নিজের সাংসদ এলাকায় বেশিদিন ঘুরেছেন প্রমাণ করতে পারেন, তবে জলপাইগুড়ি আসনে বিজেপি কোনও প্রার্থী দেবে না ।"
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে ভোট নিয়ে মুখ খোলেন শান্তনু সেনও ৷ মঙ্গলবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূলের এই মুখপাত্র বলেন, ‘‘1950 সালে সংবিধান রচনার পর 1952 সালে প্রথম লোকসভা নির্বাচন হয়েছিল । তারপর থেকে আজ পর্যন্ত দেশের মানুষ এমন করুন পরিস্থিতির সামনাসামনি কখনও হয়নি । ইতিমধ্যেই এটা প্রমাণিত বর্তমানে কেন্দ্রের শাসক দল সমস্ত স্বসাসিত সংস্থার রাজনীতিকরণ করে সেই প্রতিষ্ঠানগুলিকে গৈরিকীকরণ করে তাদের করায়ত্ত করেছে ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন দেশের অন্যতম শক্তিশালী সংস্থা, যার উপর দেশের 140-145 কোটি মানুষ তাকিয়ে থাকেন । যে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নিজের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করে দেশের সরকার নির্বাচন করা হয়, সেটাকে এভাবে করায়ত্ত করা যায়, দেশের মানুষ তা কখনও ভাবেনি । কোনোদিন দেখা যায়নি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাশে বসিয়ে তিনজন নির্বাচন কমিশনার কে কে হবেন, তা ঠিক করছেন । তারপরে দেখা যাচ্ছে এই নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রের শাসকদলের হিজ মাস্টার্স ভয়েজে পরিণত হয়েছে ।’’
তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘নির্বাচিত রাজ্যের সরকারের কাজকে ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে । মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন ঘোষণার সময় বলেছিলেন যেকোনও জায়গায় যদি তিন বছরের বেশি কোনও সরকারি অফিসার থাকে, তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হবে । কিন্তু আমরা দেখলাম পশ্চিমবঙ্গের ডিজি, তাঁর তিন বছর না হওয়া সত্ত্বেও শুধু বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল ।’’
শান্তনু সেন বলেন, ‘‘আমরা আতঙ্কিত আগামিদিনেও নির্বাচনের প্রতিটা ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন বিজেপির হয়ে কাজ করবে । নির্বাচন ঘোষণার প্রথম তিনদিনের মধ্যেই নির্বাচনের কমিশনের ভূমিকা বিজেপির পক্ষে এত প্রকট হয়ে গেল যে আমরা আতঙ্কিত এই নির্বাচন কখনও নিরপেক্ষ হতে পারে না আর সে কারণেই সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে আমরা 24-এর লোকসভা নির্বাচন চাইছি ।’’
আরও পড়ুন:
- সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে ভোট চাইছে তৃণমূল
- প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ তৃণমূলের, কমিশনকে চিঠি সাকেতের
- এক নেতা-এক ধর্মে নয়; মানুষের রায় হোক বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি রক্ষায়: সাগরিকা ঘোষ