মালদা, 5 জুন: মধ্যে দিয়ে বইছে গঙ্গা ৷ পুণ্যতোয়ায় ভাঙন চলছে প্রতি বছর ৷ আয়তন কমছে দু’পাড়ের মুর্শিদাবাদ-মালদা জেলায় ৷ ভাঙনের তীব্রতা কি ওপারের রাজনীতিকেও প্রভাবিত করেছে ? হয়তো তাই অধীরগড়ে ভূপতিত কংগ্রেস ৷ আড়াই দশক পর সেখানে অর্ধনমিত হাতের পতাকা ৷ অল্পস্বল্প নয়, 85 হাজার 22 ভোটে বিধ্বস্ত বহরমপুরের ‘রবিনহুড’ ৷ কিন্তু গনি গড়ে এবারও সসম্মানে উত্তীর্ণ প্রয়াত নেতার উত্তরসূরী ৷ বিপুল ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, বিজেপির শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীকে শুধু পরাজিত করাই নয়, রাজ্যের শাসকদলকে এই কেন্দ্রে তৃতীয় স্থানে ঠেলে দিয়েছেন ইশা খান চৌধুরী ৷ আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ফল ঘাসফুলের কাছে যে বেশ চিন্তার, তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷
এটা ঠিক, যে সময় কোতওয়ালির খান চৌধুরী পরিবারের একের পর এক সদস্য হাত ছেড়ে ঘাসফুল ধরেছিলেন, তখনও পারিবারিক পুরনো দলের প্রতি আনুগত্য রেখে গিয়েছেন বাবা আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু) ও ছেলে ইশা খান চৌধুরী ৷ গনি খানের বাসভবনে এই ফাটলটা প্রথম তৈরি করেন প্রয়াত নেতার ভ্রাতুষ্পুত্রী শেহনাজ কাদেরি ৷ এরপর আবু নাসের খান চৌধুরী এবং সব শেষে মৌসম নুর তৃণমূলে নাম লেখান ৷ তাঁরা তিনজন তৃণমূলনেত্রীর কাছ থেকে প্রতিদানও পেয়েছেন ৷ মৌসম এখনও রাজ্যসভার সাংসদ ৷ একই বাড়িতে বসবাসকারী সদস্যরা দুই বিরোধী দলের নেতা-নেত্রী ৷ তার প্রভাব পড়েছে পারিবারিক বন্ধনেও ৷ কোতওয়ালি ভবন এখন তিন ভাগে বিভক্ত ৷ এত কিছুর পরেও কংগ্রেস ছাড়েননি ডালু-ইশা ৷
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন ইশা ৷ হেরেছিলেন সুজাপুর কেন্দ্রে ৷ সেই নির্বাচনে সেখানে আরেক গনিকে প্রার্থী করেছিলেন মমতা ৷ গনির নামেই ভোট হয়েছিল ৷ রেকর্ড ভোটে জেতেন আবদুল গনি ৷ কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তিনি ৷ সঙ্গে ওয়াকফ কমিশনের চেয়ারপার্সন ৷ মমতার ঘনিষ্ঠও ৷ সুজাপুর ভেবেছিল, এলাকায় উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাবে ৷ কিন্তু ভোটের পর সেই গনিকে আর এলাকায় দেখা যায়নি ৷ এবারের ভোট প্রচারে এসে এই নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করতে হয়েছে স্বয়ং মমতাকেও ৷
মানুষের সেই ক্ষোভকে অস্ত্র করেই বছর দুয়েক আগে থেকে ময়দানে নেমে পড়েছিলেন ইশা ৷ বয়সের ভার আর রোগে জর্জরিত সাংসদ বাবা সেভাবে এলাকায় সময় দিতে পারতেন না ৷ তাই বাবার হয়ে তিনিই চষে বেড়াতেন সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র৷ সমাজের উঁচুতলা থেকে একেবারে নিচুতলা, মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ বাড়াতে শুরু করেন তিনি ৷ এনআরসি আর সিএএ নিয়ে মানুষের ভয় কাটানোর চেষ্টা করতে থাকেন ৷ তার ফলও মিলতে শুরু করে ৷ তেইশের পঞ্চায়েত ভোটেই আভাস পাওয়া গিয়েছিল যে তৃণমূলে চলে যাওয়া সংখ্যালঘু ভোট কংগ্রেসে ফিরতে শুরু করেছে ৷ এটাই অক্সিজেন জোগায় ডালু-ইশাকে ৷ এবারও এই কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল ডালু মিয়াঁর ৷ কিন্তু অসুস্থতার জন্য তাঁকে দফায় দফায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় ৷ এমনকি ঠিকমতো হাঁটাচলাও করতে পারছিলেন না ৷ তিনি এআইসিসিকে জানান, তাঁর জায়গায় এবার ইশাকে দক্ষিণ মালদা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হোক ৷ সেই আবেদন মেনে নেয় এআইসিসি ৷ ফল হাতেগরমে ৷ গোটা রাজ্যে কংগ্রেসের বাতি জ্বালিয়ে রেখেছেন সেই ইশাই ৷