নয়াদিল্লি, 21 মার্চ: ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার ইস্যু নিয়ে বিজেপি ও মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হল কংগ্রেস ৷ তাদের অভিযোগ, ভোটের মুখে ষড়যন্ত্র করে কংগ্রেসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷ এই নিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে কাঠগড়ায় তুলেছেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি ৷
বৃহস্পতিবার এই ইস্যুতে সরব হওয়ার জন্যই সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিল কংগ্রেস ৷ নয়াদিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দফতরে ওই সাংবাদিক বৈঠক হয় ৷ সেখানে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, প্রাক্তন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধি, প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধি-সহ জয়রাম রমেশ, অজয় মাকেন ও কেসি বেণুগোপাল ৷ সাংবাদিক বৈঠকে সব শেষে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন রাহুল গান্ধি ৷
সেখানে তিনি বলেন, "...আমাদের সমস্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে । আমরা প্রচারের কোনও কাজ করতে পারছি না ৷ আমরা আমাদের কর্মীদের সাহায্য করতে পারছি না ৷ আমরা আমাদের প্রার্থীদের সমর্থন করতে পারি না... ৷ এটা নির্বাচনী প্রচার শুরুর দু’মাস আগে করা হয়েছে ।’’ তিনি এই নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও বিচারব্য়বস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ৷ তাঁর কথায় এই নিয়ে কেউ কিছু বলছে না ৷
রাহুল আরও বলেন, "এটি আসলে কংগ্রেসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা নয়, এটি ভারতীয় গণতন্ত্রকে ঠান্ডাঘরে পাঠানো । সবচেয়ে বড় বিরোধী দল হিসাবে আমরা কোনও পদক্ষেপ নিতে অক্ষম - আমরা বিজ্ঞাপন বুক করতে পারছি না বা আমাদের নেতাদের কোথাও পাঠাতে পারছি না । এটি একটা আক্রমণ ।’’
এর পর এই নিয়ে তিনি আক্রমণ শানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে৷ রাহুল বলেন, ‘‘এটি কংগ্রেস দলের বিরুদ্ধে একটি অপরাধমূলক পদক্ষেপ ৷ প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বারা করা একটি অপরাধমূলক পদক্ষেপ... ৷ সুতরাং, ভারত সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র, এটা একটা মিথ্যা ধারণা । ভারতে আজ কোনও গণতন্ত্র নেই । ভারতের 20 শতাংশ মানুষ আমাদের পক্ষে ভোট দেন এবং আমরা কোনও কিছুর জন্য 2 টাকা খরচ করতে পারি না । এটা আমাদের নির্বাচনে পঙ্গু করার জন্য করা হয়েছে । আজ যদি আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলি খুলেও দেওয়া হয়, তার পরও বলব ভারতীয় গণতন্ত্রের বিপুল পরিমাণ ঋণের ক্ষতি হল ।"
রাহুলের আগে এই নিয়ে সরব হন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধিও৷ তিনি বলেন, ‘‘...এই সমস্যা কেবল কংগ্রেসকে প্রভাবিত করছে না, এটা আমাদের গণতন্ত্রকেও প্রভাবিত করছে । ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রচেষ্টা চলছে । জনসাধারণের কাছ থেকে সংগৃহীত তহবিল বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে এবং আমাদের অ্যাকাউন্ট থেকে জোরপূর্বক টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এই চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতেও আমরা আমাদের নির্বাচনী প্রচারের কাজ বজায় রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি । একদিকে, নির্বাচনী বন্ড ইস্যু রয়েছে যা সুপ্রিম কোর্ট অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে । নির্বাচনী বন্ডগুলি বিজেপিকে ব্যাপকভাবে উপকৃত করেছে । অন্যদিকে, প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের টাকা আটকে দেওয়া হয়েছে ৷ আমরা সবাই বিশ্বাস করি এটা নজিরবিহীন ও অগণতান্ত্রিক ।"
ওই সাংবাদিক বৈঠক থেকে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে নির্বাচনী বন্ড নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগেন ৷ পাশাপাশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে দেখার আর্জি জানান ৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির কাছে আবেদন করছি যে যদি তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, তাহলে তাদের উচিত আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে দেওয়া ৷ কোনও রাজনৈতিক দল আয়করের আওতায় আসে না... ৷" তিনিও বিজেপির এই পদক্ষেপকে ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করেছেন ৷
আরও পড়ুন:
- বিরোধী দলের সরকার ফেলতে কাজে লেগেছে ইলেক্টোরাল বন্ডের টাকা, দাবি রাহুলের
- 'কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে রোজগার বিপ্লব', যুবদের জন্য 5 গ্যারান্টি ঘোষণা খাড়গের
- কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে সিএএ বাতিল করা হবে, দাবি পবন খেরার