চব্বিশে আঞ্চলিক দলগুলি ভারতীয় রাজনীতিকে নতুন দিশা দিয়েছে, এর ভবিষ্যৎ কী? - REGIONAL PARTIES IN INDIAN POLITICS
2024 সালে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলির উত্থান ভারতীয় রাজনীতিতে একটি পরিবর্তনমূলক মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়, যা সংসদে দ্বি-দলীয় আধিপত্যের পতনের ইঙ্গিত দেয় ।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সংবিধান দিবস উপলক্ষ্যে একটি স্মারক মুদ্রা প্রকাশ করছেন৷ উপস্থিত রয়েছেন উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু, জেপি নাড্ডা, রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং লোকসভা দলনেতা রাহুল গান্ধি৷ 26 নভেম্বর নয়াদিল্লির সংবিধান সদনে। (এএনআই)
2024 সাল ভারতীয় রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর ছিল ৷ কারণ, আঞ্চলিক দলগুলি অভূতপূর্ব উপায়ে দেশের রাজনৈতিক পরিসরকে নতুন করে দিশা দেখিয়েছে ৷ লোকসভা নির্বাচন ও পরবর্তী বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ও কংগ্রেসের মতো জাতীয় দলগুলির আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করেছে আঞ্চলিক দলগুলি ৷ তাদের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা নিজেদের তাৎপর্যকে তুলে ধরেছে । আঞ্চলিকতার দিকে এই স্থানান্তর শুধুমাত্র নির্বাচনী গতিশীলতাকেই নতুন পথ দেখায়নি, বরং স্থানীয় সমস্যা ও উদ্বেগগুলিকে সমাধান করার গুরুত্বকে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে ৷
2024 সালের লোকসভা নির্বাচনে, উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি (সপা), পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস এবং তামিলনাড়ুতে দ্রাবিড় মুনেত্রা কাঝগম (ডিএমকে)-এর মতো আঞ্চলিক দলগুলি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে । তাদের শক্তিশালী পারফরম্যান্স থেকে বোঝা যায় যে তারা সমর্থন জোগাড় করতে এবং তৃণমূলস্তরে ভোটারদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার ক্ষেত্রে কতটা ক্ষমতাশালী ৷ সপা 37টি আসন পেয়েছে, তৃণমূল 29টি আসন জিতেছে এবং ডিএমকে জয় পেয়েছে 22টি আসনে ৷ তারা কার্যকরীভাবে বিজেপির আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং বিরোধীদের শক্তিকে মজবুত করেছে ।
ফাইল- তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন 2024 সালের সেপ্টেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় রাজ্যের জন্য বিনিয়োগ সুরক্ষিত করার জন্য একটি বৈঠকের সময়। (এএনআই)
বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে আঞ্চলিক দলগুলির উত্থান আরও জোরদারভাবে হয়েছে ৷ ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেনের নেতৃত্বে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) একটি উল্লেখযোগ্য জয় পেয়েছে ৷ কংগ্রেস ও অন্যান্য দলের সঙ্গে জোট করে তারা 81টি আসনের মধ্যে 56টিতে জিতেছে ৷ একইভাবে, অন্ধ্রপ্রদেশে, চন্দ্রবাবু নাইডুর নেতৃত্বে তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) 106টি বিধানসভা আসনে জিতে একটি অসাধারণ প্রত্যাবর্তন করেছে । এই জয়গুলি রাজ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলির সমাধান এবং তৃণমূলস্তরে ভোটারদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক দলগুলির কার্যকারিতাকে তুলে ধরে ।
ভারত যত এগিয়ে যাবে, আঞ্চলিক দলগুলির ভূমিকা আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে । 2024 সালের নির্বাচনে তাদের সাফল্য আঞ্চলিক নেতৃত্বের গুরুত্ব বৃদ্ধি করেছে ৷ জাতীয় দলগুলির যে স্থানীয় সমস্যা ও নির্বাচনী এলাকার সঙ্গে সংযোগ বৃদ্ধির প্রয়োজনীতার বিষয়টি তুলে ধরেছে চব্বিশের ভোট । ভারতীয় রাজনীতি ভবিষ্যতে সম্ভবত জোট সরকার এবং আঞ্চলিক জোটগুলির উপর বেশি জোর দেবে, আঞ্চলিক দলগুলি নীতি ও শাসন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ।
বিজেপির আধিপত্যের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ
এই পরিবর্তন বিজেপির জাতীয় আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করছে । বিহার থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ু থেকে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত, আঞ্চলিক দলগুলি কেবল তাদের অবস্থান শক্তিশালী করেনি, বরং তৃণমূলস্তরে শাসন, কল্যাণমূলক প্রকল্প এবং ফেডারেল নীতির উপর ভিত্তি করে নতুন নির্বাচনী ব্য়াখ্যাও তৈরি হয়েছে । এই পরিবর্তন ভারতের জটিল রাজনৈতিক ইকোসিস্টেমে তার প্রভাব বজায় রাখার জন্য বিজেপির কৌশল পুনর্নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেয় ।
ফাইল- আম আদমি পার্টির সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল (বাঁদিকে) সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ যাদবের সঙ্গে। (এএনআই)
2024 সালের নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল জোট রাজনীতির ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব । অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডু এবং বিহারে নীতীশ কুমারের মতো নেতারা কেন্দ্রীকরণ প্রবণতার বিরুদ্ধে সমর্থন জোগাড় করার ক্ষেত্রে তাঁদের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন এবং আঞ্চলিক দলগুলির অপরিহার্যতাকে শক্তিশালী করেছেন । বিজেপি, ঐতিহ্যগতভাবে তার কেন্দ্রীভূত দৃষ্টিভঙ্গির উপর জোর দেওয়ার সময়, এখন কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয় ক্ষেত্রেই আঞ্চলিক জোটের শরিকদের জন্য বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন এবং রাজনৈতিক স্থান দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার জন্য চাপের মুখোমুখি হয়েছে ।
একইভাবে, বিজেপিকে অবশ্যই তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং নেতৃত্বের রদবদলে নজর দিতে হবে ৷ জাতীয় শাসনের মডেল, যা 2014 সাল থেকে বারবার জয় এনেছে, তা আর যথেষ্ট নয় । আঞ্চলিক দলগুলি স্থানীয় আকাঙ্খা পূরণ করার ক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতা প্রদর্শন করে ৷ বিজেপিকে অবশ্যই একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করতে হবে, যা আঞ্চলিক চাহিদার সঙ্গে জাতীয় অগ্রাধিকারকে একত্রিত করবে । এর মধ্যে রয়েছে তার শরিকদের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে শক্তিশালী সহযোগিতা বৃদ্ধি করা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াগুলিতে শরিকদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা ।
ফাইল- প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (এএনআই)
আঞ্চলিকতার পুনরুত্থান দ্বারা চিহ্নিত একটি যুগে, বিজেপির অভিযোজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে । একটি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, যা তাদের শরিকদের স্বাধীনতাকে সম্মান করবে এবং বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে অনুরণিত হবে, তা নির্ধারণ করবে যে এই দল আগামী বছরগুলিতে ভারতের নেতৃস্থানীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে তার অবস্থান ধরে রাখতে পারবে কি না ।
আঞ্চলিক শরিকদের আলিঙ্গন করতে হবে
সপা, তৃণমূল ও ডিএমকে-র মতো আঞ্চলিক দলগুলি তাদের নিজ নিজ রাজ্যে বিজেপির প্রভাবকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করেছে । এই পরিবর্তন ইন্ডিয়া ব্লকের বৃহত্তম দল হিসেবে কংগ্রেসের কৌশল পুনর্নির্মাণ এবং আঞ্চলিক শরিকদের আরও জায়গা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয় ।
বেশ কয়েকটি রাজ্যে কংগ্রেসের পতন এবং তার নিজস্ব সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে অক্ষমতা, বিরোধীদের কৌশলে আঞ্চলিক দলগুলোর গুরুত্ব তুলে ধরে । উত্তর প্রদেশে সপার সাফল্য, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের নিজের অবস্থান ধরে রাখা এবং তামিলনাড়ুতে ডিএমকে-র আধিপত্য দেখায় যে এই দলগুলি স্থানীয় সমস্যাগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কীভাবে ভোটারদের সংগঠিত করেছে ।
ফাইল- অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও এনডিএ-র শরিক এন চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। (এএনআই)
বিজেপিকে কার্যকরভাবে চ্যালেঞ্জ করতে কংগ্রেসকে অবশ্যই ইন্ডিয়া ব্লকের মধ্যে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে । এর অর্থ হল আঞ্চলিক দলগুলির শক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়া, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া এবং নির্বাচনী কৌশলগুলিতে তাদের আরও বেশি প্রাধান্য দেওয়া । একটি সহযোগিতামূলক পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে এবং কংগ্রেসকে তার আঞ্চলিক শরিকদের অনন্য শক্তির ব্যবহার করতে হবে এবং একটি শক্তিশালী জোট গড়ে তুলতে হবে ৷ এর ফলে বিজেপির প্রভাব মোকাবিলায় বিরোধীদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে ।
রাজ্যে নির্বাচনের জন্য স্থানীয় বিষয়গুলিই চাবিকাঠি
2024 সালে আঞ্চলিক দলগুলির উত্থান ভারতের রাজনৈতিক পরিসরে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় ৷ এর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে ভবিষ্যতের রাজ্যগুলির নির্বাচন আরও স্থানীয় হবে ও জাতীয় নয় । এই পুনরুত্থান স্থানীয় সমস্যাগুলি ও প্রতিটি রাজ্যের নির্দিষ্ট চাহিদাগুলিকে মোকাবিলা করার গুরুত্বকে বোঝায়, যা আঞ্চলিক দলগুলি করতে পারদর্শী । 2024 সালের নির্বাচনে তাদের সাফল্য তৃণমূলস্তরে ভোটারদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের তাদের ক্ষমতাকে তুলে ধরে, যা ভোটারদের সঙ্গে অনুরণিত হয় এমন উপযোগী সমাধান প্রদান করে ।
মহারাষ্ট্রে, 2024 সালের বিধানসভা নির্বাচন স্থানীয় ব্যাখ্যা নজরে নিয়ে যাওয়ার একটি প্রধান উদাহরণ । বিজেপির নেতৃত্বাধীন মহায়ুতি জোট নগদ স্থানান্তর, জাতিগত গতিশীলতা এবং কৃষির দুর্দশা মোকাবিলায় নজর দিয়েছিল ৷ এটা স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে অনুরণিত হয়েছিল । মহায়ুতির মুখ্যমন্ত্রী মাঝি লাডকি বহিন যোজনা মহিলাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে ৷ এই যোজনা তাদের জয়ের একটি মূল কারণ ছিল৷ এটা স্থানীয় কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির গুরুত্বকে তুলে ধরে ৷
একইভাবে, হরিয়ানায় বিজেপির টানা তৃতীয় মেয়াদে সাফল্যের কৃতিত্ব তাদের কার্যকর মাইক্রো-ব্যবস্থাপনা এবং নির্দিষ্ট আঞ্চলিক সমস্যাগুলি সমাধানই ৷ নির্বাচনী-পর্যায়ের কৌশল, স্থানীয় নেতাদের একত্রিত করা এবং বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর চাহিদা মোকাবিলায় বিজেপির ফোকাস তাদের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে । ‘কিসান (কৃষক), নওজওয়ান (যুব), পেহেলওয়ান (কুস্তিগীর),’ নির্বাচনী প্রচারে এই তিনটি বিষয়ে নজর দিয়েছিল বিজেপি ৷ যা একেবারে স্থানীয় ইস্যুগুলির গুরুত্বকে তুলে ধরে ।
ফাইল- পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (এএনআই)
ঝাড়খণ্ডে 2024 সালের বিধানসভা নির্বাচনে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)-এর নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া ব্লক রাজ্যের প্রধানত উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর মুখোমুখি হওয়া চাপের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উল্লেখযোগ্য জয় অর্জন করেছে । জেএমএমের তৃণমূলস্তরে পৌঁছে দেওয়া কল্যাণমূলক উদ্যোগ এবং শক্তিশালী উপজাতীয় পরিচয় ভোটারদের সঙ্গে গভীরভাবে অনুরণিত হয়েছে, যা তাদের সাফল্যের দিকে নিয়ে গিয়েছে । মুখ্যমন্ত্রী মাইয়া সম্মান যোজনা, যা মহিলাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে এবং দীর্ঘমেয়াদী কৃষির প্রচারের লক্ষ্যে বিরসা হরিত গ্রাম যোজনার মতো মূল প্রকল্পগুলি ভোটারদের সমর্থন জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ।
আঞ্চলিক দলগুলি প্রাধান্য লাভ করায় রাজ্যের নির্বাচনগুলি স্থানীয় ইস্যু যেমন পরিকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং কর্মসংস্থানের উপর বেশি নজর দেবে । এই দলগুলির তাদের নির্বাচনী এলাকা সম্পর্কে গভীর ধারণা রয়েছে এবং কার্যকরভাবে নির্দিষ্ট উদ্বেগগুলিকে সমাধান করতে পারে, যা তাদের ভোটারদের আরও কাছে যেতে সাহায্য করে ৷ এই প্রবণতা জাতীয় দলগুলিকে আরও স্থানীয় পদ্ধতি অবলম্বন করতে বাধ্য করবে এবং তা নিশ্চিত করবে যে তারা রাজ্য রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থাকবে কি না !
আঞ্চলিক উদ্বেগ আধিপত্য
2024 সালে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলির উত্থান ভারতীয় রাজনীতিতে একটি পরিবর্তনমূলক মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে, যা সংসদে দ্বি-দলীয় আধিপত্যের পতনের ইঙ্গিত দেয় । এই পরিবর্তন সাম্প্রতিক অধিবেশনগুলিতে স্পষ্ট হয়েছে, বিশেষ করে শীতকালীন অধিবেশনের সময়, যেখানে বিভিন্ন অগ্রাধিকারের কারণে বিরোধীদের ঐক্য ভেঙে গিয়েছে । উদাহরণস্বরূপ, কংগ্রেস যখন আদানি ইস্যুতে সরব হতে চেয়েছিল, তখন সমাজবাদী পার্টি ও তৃণমূল কংগ্রেসের মতো আঞ্চলিক দলগুলি আঞ্চলিক উদ্বেগ নিয়ে সরব হয়েছে ৷ এর থেকে বোঝা যাচ্ছে স্থানীয় ইস্যুগুলি কতটা গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে ৷
বিজেপির প্রভাবও সমানভাবে লক্ষণীয় । ওয়াকফ বিল ও ‘এক দেশ, এক ভোট’ বিলের মতো মূল বিলগুলিকে স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে, একটি দলের জন্য একটি অস্বাভাবিক পদক্ষেপ, যা আগে এই ধরনের যাচাই-বাছাই এড়িয়ে যাওয়ার জন্য পরিচিত ছিল । এটি একটি জোট-চালিত সরকারের বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে, যেখানে আঞ্চলিক শরিকরা যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে ।
সামনের দিকে তাকালে, সংসদের ভবিষ্যত আর একক বা দ্বি-দলীয় হিসেবে ধরা যাবে না৷ পরিবর্তে, বিভিন্ন কণ্ঠস্বর এবং আঞ্চলিক অগ্রাধিকারগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে রূপ দেবে । বিজেপি এবং কংগ্রেস উভয়ের জন্যই, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠের উপর আলোকপাত করে: আঞ্চলিক উদ্বেগগুলিকে স্বীকার না করে এবং অগ্রাধিকার না দিয়ে, জাতীয় দলগুলি শাসনের জটিলতাগুলি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সংগ্রাম করবে ৷ একতরফা নিয়ন্ত্রণের যুগ শেষ যাচ্ছে, আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে সহযোগিতাকে শুধু কৌশলগত নয়, অপরিহার্য করে তুলেছে ।