গত 14 অক্টোবর ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয় ৷ কানাডার সঙ্গে ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে ভারত সেখান থেকে হাই কমিশনার-সহ সব গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় । হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ কী ছিল ? খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে পরিচিত হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যার তদন্ত ও সেই বিষয়ে দিল্লিতে কানাডিয়ান কূটনীতিকদের বহিষ্কার করা । ট্রুডো প্রশাসন এই তদন্তে কিছু ভারতীয় কূটনীতিককে ‘আগ্রহী ব্যক্তি’ হিসাবে ঘোষণা করেছে । এই পরিস্থিতির জেরে ভারত-কানাডা সম্পর্ক একেবারে তলানিতে এসে পৌঁছয় এবং আগামিদিনেও দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ৷
মূল ইস্যুটি হল কানাডার অভিযোগ, যেখানে তারা নিজ্জর হত্যায় ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ করছে ৷ যাই হোক, ভারত অবিচলভাবে এই অভিযোগগুলি অস্বীকার করেছে ৷ জোর দিয়ে জানিয়েছে যে কানাডা এখনও কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দিতে পারেনি । ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, যদি এই ধরনের কোনও প্রমাণ থাকে, তবে তা কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে ভাগ করা উচিত ছিল । পরিবর্তে, কানাডার জনসাধারণের আচরণ প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর থেকে অনুপ্রাণিত বলে মনে হচ্ছে ৷ আর তা যথেষ্ট উদ্বেগের৷ কানাডার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির স্পর্শকাতর অবস্থাও এর একটা কারণ ।
ট্রুডোর রাজনৈতিক পরিকল্পনা
যদিও পঞ্জাবের খালিস্তান আন্দোলন কয়েক দশক আগে হ্রাস পেয়েছে ৷ কিন্তু কানাডার রাজনৈতিক পরিসরে এর একটা ছাপ রয়ে গিয়েছে ৷ সেখানে শিখ সম্প্রদায়ের কিছু অংশ বিচ্ছিন্নতাবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছে । এটা প্রশ্ন তোলে: কেন এই সমস্যাটিকে এখন প্রসারিত করা হচ্ছে ? উত্তর সম্ভবত কানাডার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে রয়েছে, যেখানে ট্রুডোর লিবারেল সরকার জগমিত সিংয়ের নেতৃত্বে নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)-র সমর্থনের উপর অনেক বেশি নির্ভর করে । জগমিত সিং খালিস্তানিদের একজন সমর্থক হিসেবে পরিচিত এবং এই ইস্যুতে ভারতের সমালোচক । ট্রুডোর অনিশ্চিত রাজনৈতিক অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে এটা বলা যেতে পারে যে ক্ষমতায় তাঁর দখল বজায় রাখার জন্য ভারতের প্রতি তাঁর সরকারের ক্রমবর্ধমান বিরোধিতামূলক অবস্থানের লক্ষ্য হল এনডিপি থেকে সমর্থন কমানো ৷
বর্তমান কূটনৈতিক সঙ্কট বোঝার জন্য কানাডার রাজনীতির অবস্থা সম্পর্কে জানতে হবে । ট্রুডোর লিবারেল পার্টি, 2015 সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছে ৷ কিন্তু তাঁদের বারবার হোঁচট খেয়েই চলতে হচ্ছে ৷ তাঁর সরকার বর্তমানে সংসদে মাত্র 150-এর বেশি আসন ধরে রেখেছে এবং পিয়েরে পোইলিভরের নেতৃত্বে কনজারভেটিভ পার্টি তাঁর সরকারকে বারবার চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে । সমীক্ষা বলছে যে কনজারভেটিভ পার্টি লিবারেলদের অনেকটা পিছনে ফেলে দিয়েছে ৷ তাদের প্রতি সমর্থন এখন 45 শতাংশ ৷ আর লিবারেলদের প্রতি এখন 23 শতাংশ সমর্থন রয়েছে ৷ 2025 সালের কানাডায় নির্বাচন রয়েছে ৷ তাই ট্রুডো তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানকে স্থিতিশীল করার জন্য প্রচুর চাপের মধ্যে রয়েছেন ।
কানাডার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন যে চারটি ‘আই’ এর উপর নির্ভর করে ট্রুডোর জনপ্রিয়তা কমে যাচ্ছে ৷ সেগুলি হল - ইমিগ্রেশন (অভিবাসন), ইনকাম্বেন্সি (ক্ষমতা), আইডেনটিটি (পরিচয়) ও ইনফ্লেশন (মুদ্রাস্ফীতি) । ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি তাঁর সরকারের অর্থনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে ৷ অন্যদিকে অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন কানাডার জনবিন্যাসের পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে ৷ এক সময়, কানাডা তার উন্মুক্ত-দ্বার অভিবাসন নীতির জন্য পরিচিত ছিল ৷ কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিততে এটাকে আর লাভজনক হিসেবে দেখা হয় না ৷ ট্রুডো আন্তর্জাতিক বিতর্ক তৈরি করে এই অভ্যন্তরীণ সঙ্কট থেকে সরে আসতে চাইছেন, যা তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারকে বাঁচানোর একটি চেষ্টা হতে পারে ।
খালিস্তান ইস্যু একটি অতীত যুগের একটি অবশেষ