পিএইচডি পড়ুয়ারা যখন শিল্পক্ষেত্র, সরকারি বিভাগ বা মন্ত্রকের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে গবেষণার বিষয়গুলি বেছে নেন, তখন শিক্ষাঙ্গণের সীমার বাইরেও তাঁদের অনেক সুবিধার দরজা খুলে যায় । গবেষণার ক্ষেত্র এবং বাহ্যিক স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে এই ভালো সম্পর্ক এমন একটি গবেষণার পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে ব্যবহারিক প্রয়োজনের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটে বৌদ্ধিক দৃঢ়তার এবং শেষ পর্যন্ত এমন ফলাফল তৈরি হয়, যা শুধুমাত্র বৌদ্ধিকভাবে উদ্দীপকই নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবেও প্রাসঙ্গিক ।
শিল্প বা সরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে সহযোগিতা করার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সুবিধাগুলির মধ্যে অন্যতম হল, গবেষণা পরিচালনা করার জন্য সক্ষমতা, যা সরাসরি প্রযোজ্য, পাশাপাশি বাস্তব বিশ্বের সমস্যাগুলির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক । প্রায়শই এমন অভিযোগ ওঠে যে, সমাজের ব্যবহারিক চ্যালেঞ্জগুলির থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে গবেষণার পরিবেশ ৷ তবে শিক্ষার্থীরা যখন শিল্প বা সরকারি স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে জড়িত হন, তখন তাঁদের তাৎক্ষণিক প্রাসঙ্গিকতার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয় ।
উদাহরণস্বরূপ, যে পিএইচডি পড়ুয়ারা জ্বালানি কোম্পানি বা পরিবেশ মন্ত্রকের সঙ্গে পরামর্শ করে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন, তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তন, শক্তির দক্ষতা এবং স্থায়িত্ব সম্পর্কিত উদ্বেগগুলিকে সমাধান করছেন - যেগুলির জাতীয় এবং বিশ্ব নীতিতে গভীর প্রভাব রয়েছে ৷ এই ধরনের গবেষণা একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য সাধন করে, যা নীতি উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও সামাজিক কল্যাণে অবদান রাখে ।
সমাজের উপর এমন একটি বাস্তব প্রভাব তৈরি করার সুযোগ গবেষণার কাজের উদ্দেশ্যকে উদ্বুদ্ধ করে । রিসার্চ স্কলাররা যখন শিল্প বা সরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে কাজ করেন, তখন তাঁরা ব্যবহারিক জ্ঞানের অমূল্য এক্সপোজার লাভ করেন, যা তাঁদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং পেশাদার জগতের জটিলতার জন্য তাঁদের প্রস্তুত করে, যা সাধারণত অ্যাকাডেমিয়া বা শিক্ষার অঙ্গণ থেকে বেশ আলাদা ।
সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জগুলি সমাধান করার জন্য তাত্ত্বিক ধারণাগুলি কীভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে, সে সম্পর্কে গভীর ভাবে বোঝার উৎসাহ দেয় এই আন্তঃবিষয়ক সহযোগিতা । উদাহরণস্বরূপ, একটি প্রযুক্তি কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়ে গবেষণা করা একজন পড়ুয়া শুধুমাত্র মেশিন লার্নিংয়ের তাত্ত্বিক দিকগুলোই আবিষ্কার করেন না, বরং স্বায়ত্তশাসিত যানবাহন, জলবায়ু পরিবর্তন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে বাস্তব-বিশ্বের এআই অ্যাপ্লিকেশনের বিকাশেও তিনি জড়িত হতে পারেন ।
এই ধরনের হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা থিয়োরি এবং প্র্যাকটিস বা অনুশীলনের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে দেয় ৷ এর ফলে পড়ুয়ারা হস্তান্তরযোগ্য দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, যা অ্যাকাডেমিক এবং নন-অ্যাকাডেমিক উভয় ক্ষেত্রেই খুব বেশি চাওয়া হয় । তাছাড়া, অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে পাওয়া ফলাফলগুলিকে ব্যবহারিক সমাধানে ব্যবহার করার প্রক্রিয়াটিতে প্রায়শই কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ দক্ষতার প্রয়োজন হয়, কারণ সেই ফলাফল তাঁদের নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী নেতা এবং জনসাধারণ-সহ বৃহত্তর দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে হয় । এটি একজন পড়ুয়ার জটিল ধারণাগুলিকে সহজ ভাবে বোঝানোর ক্ষমতাকে উন্নত করে, এটি এমন একটি দক্ষতা যা ক্রমবর্ধমান আন্তঃবিভাগীয় এবং আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বে অমূল্য ।
এই বৌদ্ধিক এবং পেশাগত সুবিধাগুলি ছাড়াও শিল্প বা মন্ত্রকগুলির সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে গবেষণা আরও কিছু উপাদানগত সুবিধা প্রদান করে । বহিরাগত স্টেকহোল্ডারদের দ্বারা অর্থায়ন করা গবেষণায় প্রায়শই আর্থিক সহায়তা, পরিকাঠামো এবং ডেটা-সহ বিভিন্ন রিসোর্সের বর্ধিত অ্যাক্সেস মেলে । উদাহরণস্বরূপ, একজন পিএইচডি পড়ুয়া একটি হাসপাতাল নেটওয়ার্ক বা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্বে স্বাস্থ্যসেবা উদ্ভাবনে কাজ করলে ক্লিনিকাল ট্রায়াল ডেটা বা অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরির মতো সুবিধাগুলিতে অ্যাক্সেস পেতে পারেন, যা অন্যথায় অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে না । এটি শুধুমাত্র গবেষণার গুণমানকে উন্নত করে না, বরং অভিনব আবিষ্কারের পথও খুলে দেয়, যা ঐতিহ্যগত অ্যাকাডেমিক অর্থায়নের সীমিত সুযোগের মধ্যে সম্ভব নাও হতে পারে ।
প্রায়শই পিএইচডি গবেষণায় থাকে আর্থিক চাপ, বহিরাগত তহবিল সেগুলিকে চাপ কাটাতে পারে ৷ এর ফলে গবেষক পড়ুয়ারা ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক বাজেটের সীমাবদ্ধতা ছাড়াই নিজেদের কাজে ফোকাস করার স্বাধীনতা পান ৷ শিল্পক্ষেত্র বা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করে কাজ করার জন্য সম্ভবত সবচেয়ে বাধ্যতামূলক যুক্তিগুলির মধ্যে একটি হল, পড়ুয়ার পেশাগত কর্মজীবনের গতিপথের উপর এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ।
পিএইচডি পড়ুয়ারা যাঁরা শিল্প বা মন্ত্রক-স্পন্সরড গবেষণার সঙ্গে জড়িত, তাঁরা প্রায়ই তাঁদের পড়াশোনার ভিত্তিতে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতামূলক প্রান্তে এসে দাঁড়ান ৷ সহযোগিতার মাধ্যমে যাঁরা গবেষণার ব্যবহারিক প্রকৃতিতে পেশাদার নেটওয়ার্ক বিকাশ করেন, তাঁরা সম্ভাব্য নিয়োগকর্তাদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেন । উদাহরণস্বরূপ, একটি সরকারি প্রতিরক্ষা সংস্থার সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা গবেষণায় জড়িত একজন পড়ুয়া, শুধুমাত্র এমন গবেষণাই করবেন না যা জাতীয় নিরাপত্তার উদ্বেগগুলিকে মোকাবিলা করবে, প্রতিরক্ষা শিল্পের মূল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে তিনি সম্পর্কও গড়ে তুলবেন ।
এই ধরনের যোগাযোগগুলির ফলে স্নাতক হওয়ার পরে লাভজনক চাকরির অফার বা পরামর্শের সুযোগগুলি উন্মোচিত হয় । এছাড়াও যে গবেষক পড়ুয়ারা শিল্প বা সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন, তাঁরা নীতি গঠনে, বাজারের প্রবণতাকে প্রভাবিত করায় ভূমিকা নিতে পারেন বা তাঁদের নিজস্ব উদ্যোগ শুরু করতেও পারেন । শিল্প-অ্যাকাডেমিয়া সহযোগিতার সুবিধাগুলি বিস্তৃত গবেষণা ইকোসিস্টেমেও প্রসারিত ।
সহযোগিতামূলক প্রকল্পগুলি প্রায়শই যৌথ প্রকাশনা, পেটেন্ট বা উদ্ভাবনী প্রযুক্তির বিকাশের ফলে অ্যাকাডেমিক বৃত্তি ও বাণিজ্যিক অনুশীলন উভয়ের উপরই স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে । উদাহরণস্বরূপ, কোভিড-19 মহামারী চলাকালীন টিকার উন্নয়নে অ্যাকাডেমিক গবেষক এবং ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির মধ্যে অংশীদারিত্ব বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়ার দ্রুত অগ্রগতি এবং জীবন রক্ষাকারী হস্তক্ষেপ তৈরিতে সহায়ক ছিল । এই সহযোগিতাগুলি শুধুমাত্র জ্ঞানের সীমানাকে অগ্রসর করে না, বরং তাদের সামাজিক মূল্যকে সর্বাধিক করে গবেষণার ফলাফলগুলি ব্যাপক ভাবে যাতে দর্শকদের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তা নিশ্চিত করে ।
এছাড়াও এই অংশীদারিত্বগুলি অ্যাকাডেমিয়া এবং শিল্পের মধ্যে জ্ঞান স্থানান্তরের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সহায়তা করে । যখন অ্যাকাডেমিক গবেষণা বেসরকারি খাত বা সরকারের কৌশলগত প্রয়োজনের সঙ্গে একই সারিতে থাকে, তখন গবেষণার ফলাফলগুলি বাণিজ্যিক পণ্য, নীতি বা পরিষেবাগুলিতে ব্যবহার করার সম্ভাবনা বেশি থাকে ।
এই ধরনের ফলাফলগুলি অ্য়াকাডেমিয়া এবং শিল্পের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্বের উপর জোর দেয় ৷ এই সম্পর্কই নিশ্চিত করে যাতে, অত্যাধুনিক গবেষণা অ্যাকাডেমিক জার্নালে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তব জগতে বাস্তবায়িত হয় । সুতরাং, পিএইচডি পড়ুয়াদের শিল্প, সরকারি বিভাগ বা মন্ত্রকের সঙ্গে পরামর্শ করে গবেষণার বিষয়গুলি বেছে নেওয়ার সুবিধা সুদূরপ্রসারী এবং বহুমুখী ৷
এই ধরনের কোলাবরেশন শুধুমাত্র অ্যাকাডেমিক গবেষণাকে সামাজিক চাহিদার উপর নির্ভর করে তাই নয়, বরং এটি গবেষক পড়ুয়াদের একটি বৈচিত্র্যময় দক্ষতায় সমৃদ্ধ করে তোলে যা তাঁদের কেরিয়ারের সম্ভাবনা এবং পেশাদার বিকাশকে উন্নত করে । এই ধরনের কোলাবরেশন গবেষণার জন্য একটি মডেলের প্রতিনিধিত্ব করে যা, উদ্ভাবনের প্রচার করে এবং সমাজের উন্নতিতে অবদান রাখে । কে বলতে পারে, পিএইচডি রিসার্চ স্কলাররাই হয়তো 2047 সালে বিকশিত ভারত তৈরি হওয়ার জন্য ভারতের অনুসন্ধানে গবেষণা এবং উদ্ভাবনের আশ্রয়দাতা হয়ে উঠতে পারেন ।
(ডিসক্লেইমার: এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামতগুলি লেখকের । এখানে প্রকাশিত তথ্য এবং মতামত ইটিভি ভারতের মতামতকে প্রতিফলিত করে না)