মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টিমের সদস্যদের বেশিরভাগই চিনের কড়া সমালোচক। তার মধ্যে বিদেশ সচিব মার্ক রুবিও অন্যতম। সেনটর থাকার সময় থেকেই বেজিংকে তিনি নিয়মিত নিশানা করতেন। চিনের মানবাধিকার নিয়ে তাঁর আক্রমণ সর্বজনবিদিত। অতীতে তাঁর উপর দু'বার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চিন। এখনও চিনে প্রবেশাধিকার নেই তাঁর।
চিনকে আমেরিকার সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে অভিহিত করে রুবিও অতীতে বলেছেন, "আমাদের কাজের পদ্ধতিতে বদল আনা দরকার। নইলে এমন একটা দিন আসবে যেদিন আমাদের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য় সংক্রান্ত বিষয়ে চিনের উপর নির্ভর করতে হবে। প্রয়োজনের জিনিসটা ঠিক সময়ে পাব কিনা সেটা নির্ভর করবে চিন আমাদের সেটা দিতে চায় কি চায় না তার উপর।" রুবিও-র বিদেশ সচিব হওয়া নিয়ে চিনের মুখপাত্র কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। পাশাপাশি রুবিও-র উপর থাকা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে কি না সেটাও তিনি বলেননি।
আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালটজও চিনের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত। তাঁরও মতে, আমেরিকার জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা চিন। ওয়ালটজ অবশ্য ভারতের সঙ্গে কৌশলী অংশিদারিত্বের পক্ষে। অতীতে ভারত-আমেরিকার যৌথ স্বার্থ রক্ষার জন্য তৈরি একটি সংস্থার গুরুদায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। পাশাপাশি আমেরিকা প্রশান্ত মহাসাগর এবং তার আশপাশের এলাকায় কী ধরনের নীতি নেবে সেটাও ঠিক করার ক্ষেত্রে তাঁর বড় ভূমিকা আছে। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, আমেরিকা চিনকে বার্তা দিতে তাইওয়ানকে অস্ত্র বিক্রি চালিয়ে যাবে।
প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ চিন সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য দু'বার তুলে ধরেছেন। মার্কিন প্রশাসনে এই ধরনের অতি-গুরুত্বপূর্ণ পদে কে আসবেন তা নির্ণয় করতে কনফার্মেশন হিয়ারিং হয়ে থাকে। সেখানে চিন নিয়ে তাঁর মনোভাব স্পষ্ট করেছেন। পরে দেশের সেনা বাহিনীকে দেওয়া বার্তাতেও চিন নিয়ে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, "মাটি থেকে আকাশ সর্বত্র আমাদের মাতৃভূমিকে রক্ষা করব। আমাদের মিত্র দেশগুলিকে সঙ্গে নিয়ে কমিউনিস্ট চিনের আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য কাজ করব। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চলতে থাকা সংঘাত শেষ করব।"
আমেরিকার এই নতুন দলটি জানে চিনকে মোকাবিলা করার একমাত্র উপায় ভারতকে সঙ্গে নিয়ে চলা। সেনেটর থাকার সময় রুবিও মার্কিন সংসদে একটি বিশেষ দাবি পেশ করেছিলেন। তিনি জানান, জাপান, ইজরায়েল, কোরিয়া এবং ন্যাটোয় থাকা মিত্র দেশগুলির সঙ্গে আমেরিকার বিশেষ আচরণ করে । সেই একই আচরণ ভারতের সঙ্গেও করা উচিত। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব আবার ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংকে জানিছেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের আগ্রাসন রুখতে যা যা করা দরকার তা আমেরিকা করবে ।
এই তালিকার নবতম সংযোজন পল কাপুর। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত এই অতিরিক্ত বিদেশ সচিব কার্যত ঘোষিত পাকিস্তান-বিরোধী। তাঁর আগে এই দায়িত্বে ছিলেন, ডোনাল্ড লু। পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অতীতে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য সক্রিয় হয়েছিলেন লু। পাশাপাশি তাঁকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের নায়ক বলে মনে করা হয়। তাঁর জায়গায় দায়িত্বে আসা পল ভারত-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার পাশাপাশি ভারত-আমেরিকার কৌশলী আলোচনার অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা। তাছাড়া পারমাণবিক অস্ত্র নিয়েও তাঁর বিস্তর পড়াশুনো আছে।
ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প জানিয়েছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। যুদ্ধ শেষ করা নিয়ে আশার কথাও শুনিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে অনাবশ্যক যুদ্ধটিকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অর্থহীনভাবে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ধ্বংসলীলা চলছে। এসব বন্ধ হওয়া দরকার। পাশাপাশি তিনি এও জানান, পুতিনের সঙ্গে দুবাইতে তাঁর দেখা হতে পারে।