পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / opinion

চিনকে রুখতে কী কী করতে পারেন ট্রাম্প ? - US ON CONFLICTS TO COUNTER CHINA

ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমেরিকার নতুন প্রশাসন জানে চিনকে মোকাবিলা করার একমাত্র উপায় ভারতকে সঙ্গে নিয়ে চলা।

resolving-ongoing-conflicts-to-counter-china
ট্রাম্পের নয়া প্রশাসন (ছবি: এএফপি)

By Major General Harsha Kakar

Published : Feb 18, 2025, 10:01 AM IST

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টিমের সদস্যদের বেশিরভাগই চিনের কড়া সমালোচক। তার মধ্যে বিদেশ সচিব মার্ক রুবিও অন্যতম। সেনটর থাকার সময় থেকেই বেজিংকে তিনি নিয়মিত নিশানা করতেন। চিনের মানবাধিকার নিয়ে তাঁর আক্রমণ সর্বজনবিদিত। অতীতে তাঁর উপর দু'বার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চিন। এখনও চিনে প্রবেশাধিকার নেই তাঁর।

চিনকে আমেরিকার সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে অভিহিত করে রুবিও অতীতে বলেছেন, "আমাদের কাজের পদ্ধতিতে বদল আনা দরকার। নইলে এমন একটা দিন আসবে যেদিন আমাদের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য় সংক্রান্ত বিষয়ে চিনের উপর নির্ভর করতে হবে। প্রয়োজনের জিনিসটা ঠিক সময়ে পাব কিনা সেটা নির্ভর করবে চিন আমাদের সেটা দিতে চায় কি চায় না তার উপর।" রুবিও-র বিদেশ সচিব হওয়া নিয়ে চিনের মুখপাত্র কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। পাশাপাশি রুবিও-র উপর থাকা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে কি না সেটাও তিনি বলেননি।

আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালটজও চিনের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত। তাঁরও মতে, আমেরিকার জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা চিন। ওয়ালটজ অবশ্য ভারতের সঙ্গে কৌশলী অংশিদারিত্বের পক্ষে। অতীতে ভারত-আমেরিকার যৌথ স্বার্থ রক্ষার জন্য তৈরি একটি সংস্থার গুরুদায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। পাশাপাশি আমেরিকা প্রশান্ত মহাসাগর এবং তার আশপাশের এলাকায় কী ধরনের নীতি নেবে সেটাও ঠিক করার ক্ষেত্রে তাঁর বড় ভূমিকা আছে। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, আমেরিকা চিনকে বার্তা দিতে তাইওয়ানকে অস্ত্র বিক্রি চালিয়ে যাবে।

প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ চিন সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য দু'বার তুলে ধরেছেন। মার্কিন প্রশাসনে এই ধরনের অতি-গুরুত্বপূর্ণ পদে কে আসবেন তা নির্ণয় করতে কনফার্মেশন হিয়ারিং হয়ে থাকে। সেখানে চিন নিয়ে তাঁর মনোভাব স্পষ্ট করেছেন। পরে দেশের সেনা বাহিনীকে দেওয়া বার্তাতেও চিন নিয়ে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, "মাটি থেকে আকাশ সর্বত্র আমাদের মাতৃভূমিকে রক্ষা করব। আমাদের মিত্র দেশগুলিকে সঙ্গে নিয়ে কমিউনিস্ট চিনের আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য কাজ করব। পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চলতে থাকা সংঘাত শেষ করব।"

আমেরিকার এই নতুন দলটি জানে চিনকে মোকাবিলা করার একমাত্র উপায় ভারতকে সঙ্গে নিয়ে চলা। সেনেটর থাকার সময় রুবিও মার্কিন সংসদে একটি বিশেষ দাবি পেশ করেছিলেন। তিনি জানান, জাপান, ইজরায়েল, কোরিয়া এবং ন্যাটোয় থাকা মিত্র দেশগুলির সঙ্গে আমেরিকার বিশেষ আচরণ করে । সেই একই আচরণ ভারতের সঙ্গেও করা উচিত। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব আবার ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংকে জানিছেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের আগ্রাসন রুখতে যা যা করা দরকার তা আমেরিকা করবে ।

ডোনাল্ড ট্রাম্প (ইটিভি ভারত)

এই তালিকার নবতম সংযোজন পল কাপুর। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত এই অতিরিক্ত বিদেশ সচিব কার্যত ঘোষিত পাকিস্তান-বিরোধী। তাঁর আগে এই দায়িত্বে ছিলেন, ডোনাল্ড লু। পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অতীতে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য সক্রিয় হয়েছিলেন লু। পাশাপাশি তাঁকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের নায়ক বলে মনে করা হয়। তাঁর জায়গায় দায়িত্বে আসা পল ভারত-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার পাশাপাশি ভারত-আমেরিকার কৌশলী আলোচনার অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা। তাছাড়া পারমাণবিক অস্ত্র নিয়েও তাঁর বিস্তর পড়াশুনো আছে।

ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প জানিয়েছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। যুদ্ধ শেষ করা নিয়ে আশার কথাও শুনিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে অনাবশ্যক যুদ্ধটিকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অর্থহীনভাবে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ধ্বংসলীলা চলছে। এসব বন্ধ হওয়া দরকার। পাশাপাশি তিনি এও জানান, পুতিনের সঙ্গে দুবাইতে তাঁর দেখা হতে পারে।

যুদ্ধ বন্ধ করা নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও কথা হয়েছে ট্রাম্পের। এখানেই ইউরোপ এবং ইউক্রেনের আশঙ্কা, ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করে ইউক্রেনকে বাদ রেখেই কোনও একটি সমাধান সূত্র বের করবেন । তাতে আপত্তি আছে ইউক্রেনের। প্রেসিডেন্ট নিজেই বলেছেন, আমাদের বাদ দিয়ে কোনও সমঝোতা করা যাবে না।

মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিবও জানিয়েছেন, 2014 সালের আগে ইউক্রেনের যে চেহারা ছিল সেটা ফিরে পাওয়ার আশা নেই। ইতিমধ্যেই বেশ কিছুটা এলাকা ইউক্রেনের হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। প্রতিরক্ষা সচিব আরও মনে করেন, ক্রিমিয়ার মতো এলাকা ইউক্রেনের মানচিত্র থেকে মুছে গিয়েছে। শান্তি চাইলে ইউক্রেনের এটা মেনে নেওয়া উচিত।

প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ (ইটিভি ভারত)

তিনি আরও জানান, ন্য়াটোর সদস্য ইউক্রেন হতে পারবে না। রাশিয়া সেটাই চায়। পাশাপাশি, ইউক্রেনের সামরিক নিরাপত্তা প্রয়োজন। সেটা দেবে ইউরোপের কয়েকটি দেশ । আমেরিকা তাতে অংশ নেবে না। তাঁর আরও মনে হয়েছে, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউক্রেনে বাহিনী মোতায়েনের কথা ভাবতে পারে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। তবে সেটি যে নন-ন্যাটো মিশন হতে চলেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাত তৈরি হলে আমেরিকা যে সেই বাহিনীর অংশ থাকবে না তাও জানিয়েছেন প্রতিরক্ষা সচিব পিট। একইসঙ্গে তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা, ইউরোপকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব ন্যাটোয় থাকা ইউরোপিয় দেশগুলির।

অন্য একটি প্রশ্নে প্রতিরক্ষা সচিব জানিয়েছেন, নতুন মার্কিন প্রশাসন তার নিজের মতো করে কয়েকটি বিষয়কে প্রাধান্য দিচ্ছে। তিনি মনে করেন, চিন আমেরিকার স্বার্থে আঘাত হানতে পারে । তাদের সেই ক্ষমতা আছে। ইন্দো-প্যাশিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমেরিকার কাছে সবচেয়ে জরুরি বিষয়। ওই এলাকার নিরাপত্তা আমেরিকার কাছে গভীর চিন্তার বিষয়। এখানেই তাঁর মন্তব্য ইউরোপের দেশগুলি নিজেদের মোট খরচের অন্তত 5 শতাংশ খরচ করুক প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে।

গাজার ক্ষেত্রেও আমেরিকা একই রণনীতি নিয়েছে। একদিকে, নিজের সঙ্গী দেশগুলিকে চাপ দিচ্ছে যাতে তারা তার দেওয়া শর্ত মেনে সংঘাত শেষ করতে রাজি হয়ে যায় । অন্যদিকে, সামরিক হামলার ভয়ও দেখাচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় অবশ্য অনেক বেশি সময় লাগবে। কারণ, আমেরিকার অংশগ্রহণ এখানে অনেকটাই কম।

ট্রাম্প এবং তাঁর প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের বার্তায় কোনও ধোঁয়াশা নেই । তাঁরা স্পষ্ট জানাচ্ছেন, তাঁদের মূল লক্ষ্য চিনকে পরাজিত করা। পাশাপাশি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও তাদের কাছে সবচেয়ে জরুরি বিষয়। মার্কিন সামরিক শক্তির প্রথম এবং একমাত্র লক্ষ্য চিনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। ট্রাম্পের জানা আছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনও একটি অংশে যদি চিন সামান্য হলেও সামরিক-সাফল্য পায় তাহলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমেরিকার সম্মান নষ্ট হবে ।

চিনও বুঝিয়ে দিয়েছে, তারাও নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করবে না। ট্রাম্পের করনীতির প্রতিবাদ তারা করেছে। আমেরিকার সঙ্গে সরাসরি আর্থিক-সংঘাতে যেতেও তারা তৈরি। তারা প্রথমেই জানিয়েছিল সমঝোতায় রাজি হবে না। সমঝোতার জন্য প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে আমেরিকাকেই । ট্রাম্প তাতে আগ্রহী হননি। তাইওয়ান নীতি নিয়ে আমেরিকা উৎসাহ দেখিয়েছে। বিশ্বের অন্য সমস্ত জায়গা থেকে নিজেদের সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করে সে সব ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মোতায়েন করতে চাইছে আমেরিকা। চিন যাতে কোনওভাবে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে না পারে সেটাই নিশ্চিত করতে চায় ট্রাম্প অ্যান্ড কোম্পানি।

ABOUT THE AUTHOR

...view details