পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / opinion

2024-25 অর্থবর্ষের প্রতিরক্ষা বাজেটে বড়সড় বদলের সম্ভাবনা - Defence Budget Of 2024

Defence Budget Of 2024: আগামী 23 জুলাই কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ৷ যেখানে প্রতিরক্ষা খাতে বদল আসতে পারে বলে মনে করছেন এই প্রতিবেদনের লেখক ডা: রাভেলা ভানু কৃষ্ণা কিরণ ৷ যা পুরোপুরি কেন্দ্রীয় বাজেটের অন্তর্ভুক্ত ৷

ETV BHARAT
প্রতীকী ছবি ৷ (ইটিভি ভারত)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jul 22, 2024, 4:51 PM IST

গত চার বছরে ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেটের বরাদ্দ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ 2020 সালে 4.71 লক্ষ কোটি টাকা ৷ 2021 সালে 4.78 লক্ষ কোটি, 2022 সালে 5.25 লক্ষ কোটি এবং 2023 সালে 5.94 লক্ষ কোটি টাকা ছিল প্রতিরক্ষা খাতের বাজেট ৷ সেখানে গত 1 ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রের বিদায়ী সরকার যে অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করেছিল, সেখানে 6 লক্ষ 21 হাজার 540 দশমিক 85 কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছিল ৷ গত অর্থবর্ষের তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি করা হয়েছিল বাজেট বরাদ্দে ৷ 2023-24 অর্থবর্ষের তুলনায় যা মাত্র 4.7 শতাংশ বেশি ৷

মূল বরাদ্দের মধ্যে রয়েছে মূলধন অধিগ্রহণ (72 লক্ষ কোটি টাকা) ৷ যার মধ্যে রয়েছে, বেতন ব্যতীত সশস্ত্র বাহিনীর জন্য বাজেট (92,088 কোটি টাকা), পেনশন (1.41 লক্ষ কোটি টাকা), সীমান্ত পরিকাঠামো (6,500 কোটি টাকা), ভারতীয় উপকূল রক্ষীবাহিনী (7,651.80 কোটি টাকা) এবং ডিআরডিও (23,855 কোটি টাকা) ৷

যেহেতু, 23 জুলাইয়ের কেন্দ্রীয় বাজেট, অন্তর্বর্তী বাজেটের একটি সম্প্রসারণ বলে মনে করা হচ্ছে, ফলে এই প্রতিরক্ষা বরাদ্দে বদল হতে পারে ৷ মঙ্গলবার পেশ হতে যাওয়া বাজেটে প্রতিরক্ষা বাজেট 7-9% বৃদ্ধি পেতে পারে বলে উচ্চতর প্রত্যাশা রয়েছে ৷ প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং শিল্প ক্ষেত্রগুলি 'মেক ইন ইন্ডিয়া', প্রতিরক্ষা উৎপাদন ও রফতানি, আধুনিকীকরণ, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং অগ্নিপথ প্রকল্পের সমালোচনার মধ্যেও, অতিরিক্ত বরাদ্দের আশায় রয়েছে ৷

প্রতিরক্ষা খাতে মোট বরাদ্দের অন্ততপক্ষে 25 শতাংশ ভাগের আশায় রয়েছে ভারতীয় সেনার সশস্ত্রবাহিনী ৷ চিন ও পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় প্রতিরক্ষা সক্ষমতা এবং প্রস্তুতি বাড়ানো অপরিহার্য ৷ যদিও, পাকিস্তান কোনও বড় উদ্বেগের কারণ নয় ৷ তা সত্ত্বেও, পাকিস্তান সীমান্তে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন ও তার জন্য খরচ, অবশ্যই জরুরি ৷ অপরদিকে, চিনের সঙ্গে চলা অস্থির পরিস্থিতির জন্য অবশ্যই পরিকাঠামো ক্ষেত্রে প্রচুর বিনিয়োগ ও নতুন সামরিক সরঞ্জাম কেনা জরুরি ৷

চিনের পরিকাঠামোর সঙ্গে পাল্লা দিতে হলে, সীমান্তের কাছাকাছি রাস্তা, সেতু এবং টানেল নির্মাণের জন্য সীমান্ত সড়ক সংস্থাকে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে ৷ সঙ্গে আসন্ন বাজেটে অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনার জন্য একটি পৃথক নিয়ম অন্তর্ভুক্ত করাও জরুরি ৷ অন্তর্বর্তী বাজেটে (2024-25), বরাদ্দকৃত 75 বিলিয়ন ডলার চিনের মোকাবিলা করার জন্য পর্যাপ্ত নয় ৷ যেখানে 2024-এর জন্য চিনের প্রতিরক্ষা বাজেট হবে প্রায় 231.4 বিলিয়ন ডলার ৷ যদিও চিনের তুলনায় ভারতের অর্থনীতিতে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে ৷ ভারত সরকার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নজরকাড়া ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে, অপর্যাপ্ত বরাদ্দ পূরণ করতে বাধ্য ৷

'আত্মনির্ভরতা' ('মেক ইন ইন্ডিয়া')-র পরিকল্পনায় আভ্যন্তরীণ খরচকে বাদ দিয়ে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বাজেটের অংশ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ৷ সিআরআইএসআইএল-এর পুষণ শর্মার মতে, 2022-23 অর্থবর্ষে এটি 68 শতাংশ থেকে বেড়ে 2025 সাল পর্যন্ত 75 শতাংশ করা হয়েছে ৷ যেখানে 25 শতাংশ বেসরকারি ক্ষেত্রগুলির জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে ৷

বেসরকারি সংস্থারগুলির 26 হাজার 506 কোটি বিনিয়োগ মিলিয়ে 2024 সালে ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে উৎপাদন 1 লক্ষ 26 হাজার 887 কোটি টাকা ছুঁয়েছে ৷ অর্থাৎ, মোট উৎপাদনের 21 শতাংশ খরচ বেসরকারি ক্ষেত্রে হয়েছে ৷ 2028-29 অর্থবর্ষে যা 3 লক্ষ কোটি টাকা ছোঁয়ার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের ৷ প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্প পূরণ করতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক গত তিনটি অর্থবর্ষে মোট 122টি চুক্তি সই করেছে ৷ উল্লেখযোগ্যভাবে, এই চুক্তিগুলির মধ্যে 100টি, অর্থাৎ, মোট চুক্তি মূল্যের 87 শতাংশ ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সই করা হয়েছে ৷

এই প্রেক্ষাপটে, বার্ষিক বাজেটের বাইরে, প্রতিরক্ষায় আত্মনির্ভরশীলতা লাভ করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে ডিফেন্স মিনিস্ট্রি ৷ যেখানে গত 16 জুলাই প্রতিরক্ষা মন্ত্রক কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ 346টি জিনিসকে একত্রিত করে পঞ্চম 'পজিটিভ ইনডিজেনিসেশন লিস্ট'-এর সামিল করেছে ৷

2023-24 সালে ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদন ছিল 74,739 কোটি টাকা ৷ যেখানে 2022-2023 সালে টাকা হিসেবে খরচের পরিমাণ ছিল 1.09 ট্রিলিয়ন ৷ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে রফতানি 2023-24 সালে রেকর্ড 21,083 কোটি টাকা ছুঁয়েছে ৷ ফেব্রুয়ারিতে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন যে, ভারতের বার্ষিক প্রতিরক্ষা উৎপাদন 2028-29 সালের মধ্যে 3 ট্রিলিয়ন ছুঁয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে ৷ যেখানে সামরিক হার্ডওয়্যার রফতানি 50,000 কোটি টাকায় পৌঁছতে পারে ৷

2023-24 সালে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির একটি বড় অংশে প্রাইভেট কোম্পানিগুলির অবদান ছিল ৷ যা তার আগের আট বছরে নির্ধারণ করা হয়েছিল ৷ এর ভিত্তিতে আসন্ন বাজেটে, শিল্পক্ষেত্রগুলি আশাব্যঞ্জক সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছে ৷ কারণ, ভারতের প্রতিরক্ষা মূলধন অধিগ্রহণ বাজেট আগামী পাঁচ বছরে বার্ষিক 25 শতাংশ হারে বাড়াতে হবে ৷ যা শুরুটা 2024-25 বাজেটে করতে হবে ৷ তবে,অ 2028-29 অর্থবর্ষে প্রতিরক্ষা মূলধন 3 ট্রিলিয়নে পৌঁছাবে ৷

প্রতিরক্ষা বাজেটের বর্ধিত অংশে প্রত্যাশা, উন্নত প্রযুক্তি ও অস্ত্র ভান্ডার তৈরি, অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান সংগ্রহে রাখা, Su-30’র ফ্লিট আপগ্রেড করা ৷ LCA-তেজস এমকে-1 জেট কনফিগারেশনের এর মতো প্রকল্পগুলির ছাড়পত্র ৷ এর পাশাপাশি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীর বিভিন্ন উদ্যোগ এবং বিশেষ করে 'মেক ইন ইন্ডিয়া'-এর অধীনে দেশীয় প্রতিরক্ষা প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো ৷ এছাড়াও, 'মেক ইন ইন্ডিয়া'-র মাধ্যমে ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞান শিল্পে আরও বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে ৷

ইতিমধ্যে, জাহাজ নির্মাণ সেক্টর প্রত্যাশা করছে যে, মেরিটাইম ইন্ডিয়া ভিশন 2030 অনুযায়ী. প্রতিরক্ষা বাজেটের মাধ্য়মে দেশের সেরা 10টি জাহাজ নির্মাণের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে বাড়াবে ৷ সেই সঙ্গে 2047 সালের মধ্যে বিশ্বের সেরা পাঁচটি দেশের মধ্যে চলে আসবে ভারতের জাহাজ নির্মাণ সেক্টর ৷ এর পাশাপাশি শিল্পপতিদের প্রত্যাশা ছিল, 2024-25 অর্থবর্ষে ডিআরডিও-র কিছু ল্যাব বেসরকারীকরণ করা হবে ৷ প্রযুক্তিগত শক্তিবৃদ্ধির উদ্দেশে 10 শতাংস বরাদ্দ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট ক্ষেত্রে বাড়ানো হবে ৷

অগ্নিপথ প্রকল্প, ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বেতন এবং পেনশন খরচ কমানোর লক্ষ্যে আনা হয়েছে বলে, কংগ্রেস ও তার মিত্র দল এবং বিজেপির কিছু মিত্র শক্তি এর নিন্দা করছে ৷ এমনকি সেনার প্রবীণ সদস্যদের একাংশও এর নিন্দায় সরব হয়েছে ৷ তাদের মতে, পেনশন খরচ কমানোর প্রস্তাব থাকা এই প্রকল্পের জেরে, সেনার যুদ্ধ প্রস্তুতির সঙ্গেও আপস হতে পারে ৷

এই প্রকল্পের এত ব্যাপক সমালোচনার কারণে, জেএনইউ-র স্পেশাল সেন্টার ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের অধ্যাপক ডক্টর অমিত সিং পরামর্শ দিয়েছেন, "সরকার ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে দেওয়ার সংস্কারের প্রস্তাবগুলি গ্রহণ করুক ৷ সেই মতো প্রকল্পে থাকা প্রস্তাবগুলি সংশোধন করতে পারে ৷ যেখানে চাকরির মেয়াদ প্রথমধাপে চার থেকে বাড়িয়ে আট বছর করার কথা বলা হয়েছে ৷ সেই সঙ্গে প্রযুক্তিগত পরিষেবাগুলির জন্য নিয়োগের বয়স বাড়িয়ে 23 বছর করার প্রস্তাব দিয়েছে সেনা ৷"

অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, একজন অগ্নিবীরের জন্য সরকারকে, পূর্ণ সময়ের নিয়োগের তুলনায় বার্ষিক 1.75 লক্ষ টাকা কম খরচ করতে হবে ৷ 60,000 অগ্নিবীরদের একটি ব্যাচের জন্য, বেতনের মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ হবে 1,054 কোটি টাকা ৷ 2022 সালের সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর, প্রয়োজনীয় মূলধন ব্যয়ের বরাদ্দ 2022-23 সালে 1.43 ট্রিলিয়ন টাকা অর্থাৎ, মোটের 24.9 শতাংশ বেড়ে 1.72 ট্রিলিয়ন টাকা হয়েছে ৷ অর্থাৎ, 2024-25 সালে তা 27.7 শতাংশ হবে ৷ এই পটভূমিতে, প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা সমালোচনার জেরে, প্রতিরক্ষা বাজেটে স্কিমের কোনও পরিবর্তন হয় কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ৷ যা 23 জুলাই সবার সামনে আসবে ৷ তেমনটা হলে, তা ভারতীয় সেনার আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টাকে প্রভাবিত করতে পারে ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details