আগামী সেপ্টেম্বরে তিন দফায় ভোটগ্রহণ করা হবে জম্মু ও কাশ্মীরে ৷ ভোটগ্রহণের এই ঘোষণাকে সমস্ত রাজনৈতিক দল স্বাগত জানিয়েছে । নির্বাচনের পর জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ ভোট ঘোষণার ফলে ভূস্বর্গে প্রায় এক দশক ধরে সুপ্ত থাকা রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ফের গতি পেয়েছে ৷ সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে এই অঞ্চলে 55 শতাংশেরও বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন এবং সেই সময় কোনও হিংসার ঘটনাও ঘটেনি ৷ এটাই নির্বাচন কমিশনের কাছে সেখানে ভোট ঘোষণার জন্য অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে ৷
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বলেছেন, ‘‘জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ বুলেট ও বয়কটের পরিবর্তে ব্যালটকে বেছে নিয়েছেন (সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনের সময়)। উপত্যকা একটি নতুন শিখরে পৌঁছেছে, যা 2019 সালের চেয়ে 30 শতাংশ বেশি মানুষের ভোটে অংশগ্রহণ করার সাক্ষী থেকেছে ৷’’ তিনি জুন মাসে এই অঞ্চল পরিদর্শন করার সময় দ্রুত ভোট করানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন ৷ সুপ্রিম কোর্টও আদেশ দিয়েছিল যে জম্মু ও কাশ্মীরে নির্বাচন 30 সেপ্টেম্বরের আগে করাতে হবে ।
সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতি হেরে গিয়েছেন । জেলে বন্দী প্রার্থী ইঞ্জিনিয়র রশিদ জয় পেয়েছেন সন্তানদের নিরর্থক প্রচার সত্ত্বেও ৷ এই ঘটনা প্রমাণ করে যে জনগণ প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছে । এতে বোঝা যাচ্ছে যে সরকার জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান করছে এবং জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে চাইছে ।
লোকসভা নির্বাচন পরিচালনার মধ্যে এবং বর্তমানে জম্মু এলাকার পীর পঞ্জালের দক্ষিণে জঙ্গি কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে । একই সঙ্গে অমরনাথ ও মাচাইল মাতা যাত্রা বাড়তি সুরক্ষার মাধ্যমে চলেছে ৷ নির্বাচনে জনগণের স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ ও ভোটের উচ্চ শতাংশ পাকিস্তানকে বিচলিত করেছে ৷ কারণ, তারা বুঝতে পেরেছে যে কাশ্মীরে তাদের ভারতবিরোধী এজেন্ডা অতীত হয়ে গিয়েছে ।
কেউ কেউ মনে করেন যে জঙ্গি কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি নির্বাচন পরিচালনার জন্য অনুকূল নয় । অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান জেনারেল বেদ মালিক বলেছেন, ‘‘সেপ্টেম্বরের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাড়াহুড়ো করবেন না । কাশ্মীর থেকে আরও লাভ আনার দিকে মনোনিবেশ করুন । জম্মুতে কয়েকটি জঙ্গি হামলায় সাফল্য উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদকে আরও উস্কে দিতে পারে । 2024 সালের সেপ্টেম্বরে বিধানসভা নির্বাচনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা । নির্বাচন এক বছর স্থগিত করা উচিত ।’’
জেনারেল মালিকের দৃষ্টিভঙ্গি একটি রক্ষণাত্মক এবং ভুল বার্তা পাঠায় যে ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের জঙ্গি কার্যকলাপ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে । রাজনৈতিক দলগুলিও এই নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছিল ৷ তারা মনে করে সন্ত্রাসবাদের সমস্যার জন্য নির্বাচন স্থগিত করা উচিত নয় ।
অতীতে যেমন এক সংখ্যার ভোট পড়ত, হিংসা ছড়াত এবং প্রতিবাদের যে ছবি ভোটের সময় দেখতে অভ্যস্ত ছিল সারা বিশ্ব ৷ তা এবারের লোকসভা নির্বাচনে উচ্চ ভোটের হার ও শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি অতীতের স্মৃতি মুছে দিয়েছে । অনুচ্ছেদ 370 বাতিল করার সরকারের সিদ্ধান্তকেও মানুষ সমর্থন করেছে । যদিও এখনও কিছু অংশ ধর্মীয় ভিত্তিতে পাকিস্তানকে পছন্দ করে ৷ কিন্তু অধিকাংশই অনুচ্ছেদ 370 বাতিলের পরে উন্নয়ন বৃদ্ধির জেরে ও কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি থেকে উপকৃত হয়েছে ।
শিক্ষা ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান খোলার পাশাপাশি বড় আকারের বিনিয়োগ উপত্যকার চরিত্রকে বদলে দিচ্ছে । রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের আগমনের ফলে অর্থনীতিতে উন্নতি হচ্ছে । এগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার ইতিবাচক সূচক । পাথর ছোড়া ও বনধ এখন ইতিহাস ।