পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / opinion

জম্মু ও কাশ্মীরে ভোট ঘোষণা করে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে নির্বাচন কমিশন - Elections in Jammu and Kashmir - ELECTIONS IN JAMMU AND KASHMIR

Elections in Jammu and Kashmir: ভারতের নির্বাচন কমিশন 18 সেপ্টেম্বর থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে তিন দফায় বিধানসভা নির্বাচন করার কথা ঘোষণা করেছে । দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার ভোট হবে 25 সেপ্টেম্বর ও 1 অক্টোবর ৷ 4 অক্টোবর ভোট গণনা অনুষ্ঠিত হবে ।

Elections in Jammu and Kashmir
লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ পর্বে জম্মু ও কাশ্মীরে ভোট দেওয়ার আগে ভোটারদের তরফে ভোটের নথি দেখানোর ফাইল ছবি৷ (এএনআই)

By Major General Harsha Kakar

Published : Aug 21, 2024, 8:52 PM IST

আগামী সেপ্টেম্বরে তিন দফায় ভোটগ্রহণ করা হবে জম্মু ও কাশ্মীরে ৷ ভোটগ্রহণের এই ঘোষণাকে সমস্ত রাজনৈতিক দল স্বাগত জানিয়েছে । নির্বাচনের পর জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ ভোট ঘোষণার ফলে ভূস্বর্গে প্রায় এক দশক ধরে সুপ্ত থাকা রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ফের গতি পেয়েছে ৷ সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে এই অঞ্চলে 55 শতাংশেরও বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন এবং সেই সময় কোনও হিংসার ঘটনাও ঘটেনি ৷ এটাই নির্বাচন কমিশনের কাছে সেখানে ভোট ঘোষণার জন্য অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে ৷

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বলেছেন, ‘‘জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ বুলেট ও বয়কটের পরিবর্তে ব্যালটকে বেছে নিয়েছেন (সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনের সময়)। উপত্যকা একটি নতুন শিখরে পৌঁছেছে, যা 2019 সালের চেয়ে 30 শতাংশ বেশি মানুষের ভোটে অংশগ্রহণ করার সাক্ষী থেকেছে ৷’’ তিনি জুন মাসে এই অঞ্চল পরিদর্শন করার সময় দ্রুত ভোট করানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন ৷ সুপ্রিম কোর্টও আদেশ দিয়েছিল যে জম্মু ও কাশ্মীরে নির্বাচন 30 সেপ্টেম্বরের আগে করাতে হবে ।

কাশ্মীরের রাস্তার দৃশ্য (এপি)

সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতি হেরে গিয়েছেন । জেলে বন্দী প্রার্থী ইঞ্জিনিয়র রশিদ জয় পেয়েছেন সন্তানদের নিরর্থক প্রচার সত্ত্বেও ৷ এই ঘটনা প্রমাণ করে যে জনগণ প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছে । এতে বোঝা যাচ্ছে যে সরকার জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান করছে এবং জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে চাইছে ।

লোকসভা নির্বাচন পরিচালনার মধ্যে এবং বর্তমানে জম্মু এলাকার পীর পঞ্জালের দক্ষিণে জঙ্গি কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে । একই সঙ্গে অমরনাথ ও মাচাইল মাতা যাত্রা বাড়তি সুরক্ষার মাধ্যমে চলেছে ৷ নির্বাচনে জনগণের স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ ও ভোটের উচ্চ শতাংশ পাকিস্তানকে বিচলিত করেছে ৷ কারণ, তারা বুঝতে পেরেছে যে কাশ্মীরে তাদের ভারতবিরোধী এজেন্ডা অতীত হয়ে গিয়েছে ।

কেউ কেউ মনে করেন যে জঙ্গি কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি নির্বাচন পরিচালনার জন্য অনুকূল নয় । অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান জেনারেল বেদ মালিক বলেছেন, ‘‘সেপ্টেম্বরের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাড়াহুড়ো করবেন না । কাশ্মীর থেকে আরও লাভ আনার দিকে মনোনিবেশ করুন । জম্মুতে কয়েকটি জঙ্গি হামলায় সাফল্য উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদকে আরও উস্কে দিতে পারে । 2024 সালের সেপ্টেম্বরে বিধানসভা নির্বাচনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা । নির্বাচন এক বছর স্থগিত করা উচিত ।’’

জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অতন্দ্র প্রহরা৷ (এপি)

জেনারেল মালিকের দৃষ্টিভঙ্গি একটি রক্ষণাত্মক এবং ভুল বার্তা পাঠায় যে ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের জঙ্গি কার্যকলাপ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে । রাজনৈতিক দলগুলিও এই নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছিল ৷ তারা মনে করে সন্ত্রাসবাদের সমস্যার জন্য নির্বাচন স্থগিত করা উচিত নয় ।

অতীতে যেমন এক সংখ্যার ভোট পড়ত, হিংসা ছড়াত এবং প্রতিবাদের যে ছবি ভোটের সময় দেখতে অভ্যস্ত ছিল সারা বিশ্ব ৷ তা এবারের লোকসভা নির্বাচনে উচ্চ ভোটের হার ও শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি অতীতের স্মৃতি মুছে দিয়েছে । অনুচ্ছেদ 370 বাতিল করার সরকারের সিদ্ধান্তকেও মানুষ সমর্থন করেছে । যদিও এখনও কিছু অংশ ধর্মীয় ভিত্তিতে পাকিস্তানকে পছন্দ করে ৷ কিন্তু অধিকাংশই অনুচ্ছেদ 370 বাতিলের পরে উন্নয়ন বৃদ্ধির জেরে ও কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি থেকে উপকৃত হয়েছে ।

শিক্ষা ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান খোলার পাশাপাশি বড় আকারের বিনিয়োগ উপত্যকার চরিত্রকে বদলে দিচ্ছে । রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের আগমনের ফলে অর্থনীতিতে উন্নতি হচ্ছে । এগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার ইতিবাচক সূচক । পাথর ছোড়া ও বনধ এখন ইতিহাস ।

রাতের কাশ্মীর (এপি)

অন্যদিকে পাকিস্তানের অধীকৃত কাশ্মীরে বিক্ষোভ ও হিংসা নিত্যদিনের ঘটনা । কাশ্মীর আনন্দের সঙ্গে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেছে ৷ পাক-অধীকৃত কাশ্মীর থেকে বয়কটের আহ্বান ছিল । সেখানকার জনগণ এখন ইসলামাবাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে ভারতের সঙ্গে একীভূত হওয়ার দাবি জানাচ্ছে । এটা দেখায় যে কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের বিতর্কিত ব্যাখ্যায় ইতি ঘটেছে ৷

রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজোলিউশনের ভিত্তিতে কাশ্মীরের সমাধানের দাবি করা একটি বিজোড় দেশ ছাড়াও, কোনও গ্রহণকারী নেই । পাকিস্তান এখন এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদকে পুনরায় সক্রিয় করার জন্য প্রচণ্ডভাবে কাজ করছে ৷ তাই তারা দাবি করছে যে যারা নিহত হচ্ছে তারা সন্ত্রাসী নয় ৷ এভাবে স্থানীয় কাশ্মীরি জনগণের মধ্যে ক্ষোভ উস্কে দেওয়ার আশা করছে, যারা পাকিস্তানের খেলা অনেকাংশে দেখেছে ।

গত সপ্তাহে একাধিক এনকাউন্টারে চার জঙ্গি নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানের বিদেশ দফতরের মুখপাত্র উল্লেখ করেন, ‘‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জম্মু ও কাশ্মীরে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ভারতকে জবাবদিহি করতে এবং পদক্ষেপ করার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি । কাশ্মীরি জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা করুন ।’’

তাদের মতবাদ সরে যাচ্ছে, সেই কারণে নিরাপত্তা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তান জঙ্গি কার্যকলাপ বৃদ্ধি করতে বাধ্য হচ্ছে৷ নিরাপত্তা বাহিনীর পরিমাণ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ শীঘ্রই হ্রাস পাবে । ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী বিজয়ী হবে । অনুপ্রবেশকারী সন্ত্রাসীদের ফেরার কোনও বিকল্প নেই । নিহত হওয়ার আগে তারা যতদিন সম্ভব বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে ।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার আগে নিরাপত্তা পরিস্থিতি যাচাই-বাছাই করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছ থেকে ইনপুট নেওয়া হবে । নিরাপত্তা সংস্থাগুলির আস্থা এই সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলবে । ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার জন্য কড়া নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হবে ৷ বর্তমান মোতায়েন থাকা জওয়ানদের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখবে ৷ ভোটারদের মধ্যে আস্থা তৈরি করবে ও নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাহীনভাবে চালিয়ে যেতে সক্ষম করবে ।

কাশ্মীরের একটি ব্যস্ত বাজার (এপি)

যদিও নিরাপত্তা বাহিনী অভ্যন্তরীণ পরিবেশ পরিচালনা করবে ৷ তবে উদ্বেগের বিষয় থাকবে সীমান্তের ওপার থেকে আসা ভুল তথ্য । পাকিস্তান ও চিন উপত্যকায় বৈষম্য সৃষ্টি এবং সামাজিক কাঠামো ভাঙার জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে । এসব প্রতিহত করা দরকার । স্পষ্টতই, নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দূষিত পোস্টের প্রবাহ বহুগুণ বেড়ে যাবে । একই সঙ্গে, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর নিরাপত্তা বাড়ানো দরকার, যা নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ঘটতে বাধ্য ।

লোকসভা নির্বাচনে যেমন স্পষ্ট হয়েছিল যে সরকার জনগণের রায় মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছে ৷ এর সঙ্গে স্থানীয় আস্থা ও অংশগ্রহণের ইচ্ছা যুক্ত হয়েছে । তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সঠিক পরিবেশ তৈরি করা অপরিহার্য । এর জন্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং কেন্দ্রের সমস্ত সংস্থাকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে ।

(এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের ৷ এখানে প্রকাশিত তথ্য ও মতামত ইটিভি ভারত-এর মতামতকে প্রতিফলিত করে না ৷)

ABOUT THE AUTHOR

...view details