ড. জি জগন মোহন রাও
2009 সালে শিক্ষার অধিকার আইনের অধীনে ভারত সরকার ফেল না করানোর নীতি চালু করে । এই নীতির লক্ষ্য ছিল শিক্ষার্থীরা যাতে স্কুল ছেড়ে না গিয়ে কমপক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করতে পারে । 2022 সালে দ্য অ্যানুয়াল স্ট্যাটাস এডুকেশন রিপোর্ট বা এসিইআর-এ দেখা যায় গ্রামীণ ভারতের তৃতীয় শ্রেণীর মাত্র 20 শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা দ্বিতীয় শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক সাবলীলভাবে পড়তে পারে ।
ফেল না করানোর নীতি পড়ুয়া ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে অলসতা তৈরি করেছিল ৷ এর ফলে শিক্ষার মান কমে যায় । রাজ্যগুলি যাতে ফেল না করানোর নীতি বাতিল করা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তার জন্য 2019 সালে শিক্ষার অধিকার আইন সংশোধন করে কেন্দ্র ৷ তারপর দিল্লি, পঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, গুজরাত, তামিলনাড়ু এবং বেশ কিছু কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল-সহ 18টি রাজ্য এই নীতি বাতিল করে ।
কেন্দ্রীয় সরকার তার আওতাধীন স্কুলগুলিতে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ফেল না করানোর নীতি বাতিল করেছে ৷ এর মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়, জওহর নবোদয় বিদ্যালয়, সৈনিক স্কুল এবং একলব্য মডেল আবাসিক বিদ্যালয়-সহ তিন হাজারেরও বেশি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় । এখন তেলুগুভাষী রাজ্যগুলির এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা । এই প্রেক্ষাপটে, অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশে ফেল না করানোর নীতির ঐতিহাসিক বিকাশ, মূল্যায়ন পদ্ধতি, ফাঁক এবং উদীয়মান সমাধানগুলি এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে ।
স্কুলশিক্ষায় এখন যে 10+2 কাঠামো রয়েছে, তা বদল করার প্রস্তাব করা হয় জাতীয় শিক্ষা নীতি 2020-তে ৷ 3-18 বছর বয়সীদের জন্য 5+3+3+4 এর নতুন শিক্ষাগত এবং পাঠ্যক্রমিক কাঠামো তৈরির কথা বলা হয় সেখানে ৷ বর্তমানে 3-6 বছর বয়সী শিশুদের 10+2 কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি ৷ কারণ, প্রথম শ্রেণি 6 বছর বয়সে শুরু হয় ।
নয়া শিক্ষানীতিতে প্রথমস্তর দু’টি অংশ নিয়ে গঠিত ৷ সেখানে অঙ্গনওয়াড়ি বা প্রাক-বিদ্যালয় এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিকে রাখা হয়েছে ৷ এর মধ্যে 3-8 (3-5 অঙ্গনওয়াড়ি বা প্রাক-বিদ্যালয় এবং 6-8 প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) বছর বয়সীদের রাখা হয়েছে ৷
এর পর হল প্রস্তুতিমূলক পর্যায় ৷ এখানে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিকে রাখা হয়েছে ৷ এই পর্যায়ে 8-11 বছর বয়সীরা পড়বে ৷ এর পর মধ্যম পর্যায় ৷ এখানে রাখা হয়েছে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম (11-14 বছর) শ্রেণির পড়ুয়াদের ৷ এর পর মাধ্যমিক পর্যায় ৷ এখানে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিকে দু’টি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে ৷ প্রথম - নবম ও দশম এবং দ্বিতীয় - একাদশ ও দ্বাদশ ৷ এখানে 14-18 বছর বয়সীরা পড়বে ৷
এই নীতিতে শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নের জন্য মূল্যায়ন পদ্ধতির রূপান্তরের কথা বলা হয়েছে । যদিও দশম শ্রেণি (এসএসসি) এবং দ্বাদশ শ্রেণি (ইন্টারমিডিয়েট)-এর বোর্ড পরীক্ষা অব্যাহত থাকবে ৷ শুধুমাত্র দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির শেষে নয়, বরং ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক, অধ্যক্ষ এবং সমগ্র স্কুল ব্যবস্থার সুবিধার্থে তৃতীয়, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বোর্ডের পরীক্ষা চালু করা হবে ৷
জাতীয়স্তরের মূল্যায়ন সমীক্ষাগুলিতে সামনে আসে যে রূপান্তর পর্যায়ে থাকা শিক্ষার্থীদের সাফল্যের স্তর প্রত্যাশিতস্তরের চেয়ে অনেক কম । অষ্টম শ্রেণির শেষে সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থীর কেবল প্রত্যাশিত দক্ষতা থাকে ৷ অন্যদিকে বিপুল সংখ্যক পড়ুয়ার সাক্ষরতা এবং সংখ্যাতত্ত্বে দক্ষতা থাকে না । সাফল্যের স্তরের ব্যবধানের জন্য অকার্যকর পাঠ্যক্রম ও পাশ-ফেল তুলে দেওয়াই দায়ী ৷ এই প্রেক্ষাপটে কিছু পরিবর্তন-সহ পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে ।
1966 সালে কোঠারি কমিশনের রিপোর্টে ইঙ্গিত দেওয়া হয় যে স্কুলস্তরে পাশ-ফেল ধীরে ধীরে তুলে দেওয়া উচিত ৷ এর পরিবর্তে শ্রেণীকক্ষে নির্দেশনা ও মূল্যায়নের একটি নতুন ধরন গ্রহণ করা উচিত, যা স্কুলস্তরে পাশ-ফেল পদ্ধতিকে সত্যিই অপ্রাসঙ্গিক ও অপ্রয়োজনীয় করে তুলবে । যদিও কোঠারি কমিশন এই বিষয়ে বেশ সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে প্রথম শ্রেণীতে ফেল না করানোর পক্ষে পরামর্শ দিয়েছিল ৷ এক্ষেত্রে আর্থিক, সমাজতাত্ত্বিক ও অ্যাকাডেমিক ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে স্থবিরতা ও অপচয়ের ঘটনা সবচেয়ে তীব্র ছিল ।
অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার আরও অনেক এগিয়ে গিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার দু’টি স্তর ছাড়া বাকিগুলিতে পাশ-ফেল প্রথা তুলে দেওয়া হয় ৷ এখানে সপ্তম শ্রেণিকে প্রাথমিকের শেষ পর্যায় ও দশম শ্রেণিকে মাধ্যমিকস্তরের শেষ পর্যায় হিসেবে রাখা হয় ৷ আর এই দুই স্তরে রেখে দেওয়া পাশ-ফেল পদ্ধতি ৷
স্থবিরতা ও অপচয়ের সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নতুন বিবর্তন নীতি প্রবর্তন করে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার । 1971 সালের 27 নভেম্বর এই নীতি চালু করার নির্দেশ (সরকারি আদেশের নম্বর 1781) দেওয়া হয় ৷ সপ্তম ও দশম শ্রেণি ছাড়া সব শ্রেণিতে ফেল করানোর ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয় ৷ ধারাবাহিক ও ব্যাপক শিক্ষার একটি নতুন নীতি প্রবর্তন করা হয় । নতুন পদ্ধতিতে জড়িত বিস্তৃত পদ্ধতি নীচে দেওয়া হল ।
শিক্ষার প্রাথমিকস্তর (প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি)
নতুন নীতি অনুসারে, শিক্ষকদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে মৌখিক, লিখিত এবং ব্যবহারিক দিকগুলি অন্তর্ভুক্ত করে পরীক্ষা প্রস্তুত করতে হবে । ফলাফলগুলি দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডে পদ্ধতিগতভাবে প্রবেশ করাতে হবে ৷ সেগুলি হল - প্রগ্রেস কার্ড ও কিউমমুলেটিভ রেকর্ড ৷ মূল্যায়নের একটি অংশ হিসাবে হোম অ্যাসাইনমেন্ট এবং ক্লাস ওয়ার্ককেও বিবেচনা করা উচিত ।
উচ্চ প্রাথমিকস্তরের শিক্ষা (পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণি)
বছরের পুরো পাঠ্যক্রমটি সুবিধাজনক ইউনিটে বিভক্ত করা হয়েছে । এগুলির উপর ভিত্তি করে, ইউনিট টেস্ট পরিচালিত হয় । শিক্ষকের নেওয়া এই পরীক্ষার ফলাফল প্রগ্রেস কার্ডে তুলতে হবে ৷ ইউনিট টেস্টের পাশাপাশি ত্রৈমাসিক, অর্ধ-বার্ষিক এবং বার্ষিক পরীক্ষাও নিতে হবে ৷ এর পর সামগ্রিক মূল্যায়ন গ্রেড আকারে কিউমুলেটিভ রেকর্ডে রাখতে হবে ৷
উচ্চ প্রাথমিকস্তরের শেষে জেলা পর্যায়ে একটি সাধারণ পদোন্নতি পরীক্ষা পরিচালনা করতে হবে । জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাধারণ পরীক্ষা পরিচালনা এবং উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়ার শংসাপত্র প্রদানের ক্ষমতা রাখেন । বিভিন্ন পরীক্ষার গুরুত্ব নিম্নরূপ :
ত্রৈমাসিক এবং অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার গুরুত্ব 25 শতাংশ ও বার্ষিক পরীক্ষার গুরুত্ব 50 শতাংশ ৷
উপস্থিতি
প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য ন্যূনতম উপস্থিতি জরুরি ৷ প্রাথমিকস্তরের জন্য ন্যূনতম উপস্থিতি 80 শতাংশ এবং মাধ্যমিকস্তরের জন্য 90 শতাংশ ৷ অনিবার্য কারণে বিশেষ ক্ষেত্রে উপস্থিতির ক্ষেত্রে 10 শতাংশ ছাড় দেওয়ার ক্ষমতা শিক্ষকের কাছে দেওয়া থাকে ৷ বিভিন্ন পরীক্ষায় উপস্থিতি বাধ্যতামূলক ও অনিবার্য কারণে কিছু পড়ুয়া ব্যর্থ হলে পরীক্ষা পুনরায় নেওয়া হয় । যদি সমস্ত পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর পারফরম্যান্স সন্তোষজনক হয়, তাহলে উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা 60 শতাংশ হতে পারে ।
প্রত্যাশিত পদ্ধতি হিসেবে মূল্যায়ন পদ্ধতির বর্তমান পরিস্থিতি সংক্ষেপে দেওয়া হল:
পঞ্চম শ্রেণির শেষে ব্লকস্তরের (বর্তমানে মণ্ডল) পরীক্ষা অনেক আগেই বাতিল করা হয়েছে । জেলা পর্যায়ে পরিচালিত সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষাও কিছু বাস্তবিক অসুবিধার কারণে বাতিল করা হয়েছে । দশম শ্রেণির শেষে অর্থাৎ এসএসসিতে বোর্ডের পরীক্ষা পরিচালিত হয় । এসএসসি-স্তরে গৃহীত মূল্যায়ন পদ্ধতি আরও খারাপ হয়ে গিয়েছে ।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো আশঙ্কা এড়াতে বোর্ড একটি অত্যন্ত জটিল পদ্ধতি গ্রহণ করেছে । জেলা পর্যায়ে মান নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা, ডিইও, পরীক্ষা পরিচালনা এবং স্পট মূল্যায়নে উপস্থিত থাকার জন্য আরও বেশি সময় ব্যয় করতে হয় । দুর্ভাগ্যবশত, এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মান মূল্যায়নের সূচক হয়ে উঠেছে ।
এই বিষয়টি মাথায় রেখে বেসরকারি স্কুলগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য স্কুলশিক্ষা কর্মকর্তারা স্কুলগুলির লক্ষ্য নির্ধারণ করে । ফলস্বরূপ, স্কুলগুলি লক্ষ্য অর্জনের জন্য অন্যায্য উপায় অবলম্বন করছে । 2024 সালের মার্চ মাসে এসএসসির পাশের হার 91.31 শতাংশ হলেও, ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে পাশের হার 60.01 শতাংশ ৷ দশম শ্রেণিতে বোর্ডের পরীক্ষার জন্য গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে 80 শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের জন্য গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে 20 শতাংশ ৷
পাশ নম্বর 35 শতাংশ । অর্থাৎ, যদি কোনও শিক্ষার্থী বোর্ডের পরীক্ষায় 28 নম্বর পায়, তবে সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে । বোর্ডে পরীক্ষায় পড়ুয়া যে 28 নম্বর পায়, তা তার প্রকৃত পারফরম্যান্স হিসেবে ধরা যায় না ৷ জানা গিয়েছে যে পরীক্ষা কেন্দ্রে টোকাটুকি আটকাতে কঠোর পদক্ষেপ করা হয়েছে ৷ তার পরও এই ধরনের অনেক ঘটনার খবর পাওয়া গিয়েছে ৷ উত্তরপত্র মূল্যায়নেও কারচুপি উড়িয়ে দেওয়া যায় না । সুতরাং, এসএসসিতে প্রাপ্ত নম্বর শিক্ষার্থীর প্রকৃত যোগ্যতা ও কর্মক্ষমতাকে প্রতিফলিত করে না ।
মূল্যায়ন পদ্ধতি:
স্কুল পর্যায়ে গঠনমূলক ও সমষ্টিগত মূল্যায়ন গ্রহণ করা হয় । গঠনমূলক মূল্যায়নের জন্য 20 নম্বর এবং সমষ্টিগত মূল্যায়নের জন্য 80 নম্বর নির্ধারণ করা হয় । প্রতিটি ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের শেখার ফলাফল পরীক্ষা করার জন্য যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয় । প্রজেক্ট দেওয়া হয় । প্রাপ্ত নম্বর প্রগ্রেস রেকর্ডে লিপিবদ্ধ করা হয় । পরীক্ষা পদ্ধতি ও তা রিপোর্ট করার ব্যবস্থা বিজ্ঞানসম্মত মনে হলেও, কিন্তু যে পদ্ধতিতে তা করা হয়, সেটা জটিল বলে মনে হয় । সরকারি বিদ্যালয়ে অভিভাবক বা শিক্ষার্থী কেউই পরীক্ষার দিকে মনোযোগ দেন না । জানা গিয়েছে যে পরীক্ষা পরিচালনা শিক্ষকদের জন্য একটি কঠিন কাজ হয়ে উঠেছে । এর সঙ্গে শিক্ষকদের জন্য স্ব-মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে, যা পড়ুয়াদের কর্মক্ষমতার উপর ভিত্তি করে করা হয় । পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষমতা শিক্ষকদের দক্ষতা এবং প্রতিশ্রুতি মূল্যায়নের সূচক হয়ে উঠেছে ।
উপসংহার
ফেল না করানোর নীতি শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের মধ্যে আত্মতুষ্টি তৈরি করে, যার ফলে শিক্ষার মান কমে যায় ৷ নিম্নমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা ছাড়াই স্বয়ংক্রিয় পদোন্নতি হয়েছে ৷ এর ফলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ব্যর্থতার হার বেড়েছে । এই নীতি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে জবাবদিহি করার দায় কমিয়েছে ৷ কারণ, পড়ুয়ারা তাদের কর্মক্ষমতা নির্বিশেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত হয় ।
এই নীতি দুর্বল শিক্ষার ফলাফল, অপর্যাপ্ত শিক্ষক প্রশিক্ষণ, পরিকাঠামোর অভাব, নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধান এবং আর্থ-সামাজিক কারণগুলির মূল কারণগুলিকে সমাধান করে না । মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি এমন শংসাপত্র প্রদানের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে, যা শেখার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে নয়, বরং কেবল স্কুলে যাওয়ার উপর ভিত্তি করে দেওয়া হয় । এগুলি জাল শংসাপত্রের মতোই । শিক্ষার লক্ষ্য শিশুর ক্ষমতায়ন করা ।
ক্ষমতায়ন তখনই ঘটে, যখন পড়ুয়ারা যোগ্যতা অর্জন করে । যখন যোগ্যতা অর্জন করা যায় না, তখন শিক্ষার ব্যবহার কী ? এই সার্টিফিকেটের মূল্য কী ? মাধ্যমিক স্তরে কম সাফল্য প্রাথমিক স্তরে কম সাফল্যের ফলাফল । অতএব, প্রাথমিক শিক্ষা, যা ভিত্তি স্তর, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
জাতীয় শিক্ষা নীতি 2020-তে প্রাক-প্রাথমিক বিভাগকে প্রাথমিকের সঙ্গে এক করে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয় ৷ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকরা যদিও ডিআইইটি-তে প্রশিক্ষিত, তার পরও তাঁদের প্রাক-প্রাথমিক ক্লাস পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত দক্ষতা নেই ৷ অতএব, প্রাক-প্রাথমিকে প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ করা প্রয়োজন ৷ অন্যদিকে অঙ্গনওয়াড়িগুলি তিন বছর বয়সী শিশুদের যত্ন নেয় ।
প্রাথমিক স্তরে, লেখাপড়ার কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত শেখার মাধ্য়মে পড়া । শিশুরা সহজাত ক্ষমতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে । তাই প্রাথমিক স্তরে শিক্ষককে স্ব-শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, যার ফলে শেখার বিষয়টি চিরকাল অব্যাহত থাকে । যদি প্রাথমিক স্তরে শ্রেণিকক্ষের কার্যক্রম শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়, তাহলে শেখার বিষয়টি কার্যকরী ও স্বয়ংক্রিয় হয়ে ওঠে । এইভাবে শিশু কেবল দক্ষতা অর্জন করে না, বরং স্কুলে পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ তৈরি হয় । যদি এটার যত্ন নেওয়া হয়, তাহলে ঝরে পড়ার প্রশ্নই উঠবে না ।
পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে একটি পাশ-ফেল ব্যবস্থা চালু করলে মান বজায় থাকবে । এই ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের সঠিক পথে রাখবে ৷ পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে, যার ফলে শ্রেণিকক্ষের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে ও পরীক্ষাগুলিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করবে ছাত্র-ছাত্রীরা । সুতরাং, যদি প্রাথমিক স্তরে ভালো মান বজায় রাখা হয়, তাহলে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা অবশ্যই শেখার ফলাফল পাবে ।
শিক্ষার প্রতি জনগণের মধ্যে প্রচুর সচেতনতা রয়েছে । দরিদ্রতম থেকে দরিদ্রতম ব্যক্তিরাও শিক্ষার মূল্য বুঝতে পেরেছেন এবং তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন । যদি শ্রেণিকক্ষের কার্যক্রম আকর্ষণীয় হয়, যদি শিশুর শেখার ফলাফল ধীরে ধীরে বোঝা যায়, আচরণগত পরিবর্তন আসে এবং কোনও অভিভাবকই শিশুকে স্কুল থেকে যদি প্রত্যাহার করেন না, তাহলে পাশ-ফেলা চালু করার বিরুদ্ধে যে যুক্তিগুলি সামনে আসছে, তা কাল্পনিক ।
বলা হয়েছে যে দেশের 18টি রাজ্য ইতিমধ্যেই পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল চালু করেছে ৷ এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি দ্বারা পরিচালিত স্কুলগুলিও রয়েছে ৷ স্পষ্টতই তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্য সরকারের পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল ফেরানোর নীতির প্রস্তাব গ্রহণ করা এবং প্রাথমিক শিক্ষার উপর যথাযথ মনোযোগ দিয়ে এর বাস্তবায়ন করা ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই ।
(এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব । এখানে প্রকাশিত তথ্য এবং মতামত ইটিভি ভারত-এর মতামতকে প্রতিফলিত করে না ৷)