দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন রেখা গুপ্তা। 8 ফেব্রুয়ারি দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার শুরু থেকেই বোঝা গিয়েছিল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পক্ষে আর বিজেপিকে রুখে দেওয়া সম্ভব নয় । 70 আসনের দিল্লি বিধানসভায় পদ্ম ফুটল। আপ-কংগ্রেসকে হেলায় হারাল বিজেপি। 2013 সাল থেকে বিজেপির মোকাবিলা করে এসেছেন কেজরি । এবার আর তা হল না। 27 বছর পর দিল্লির ক্ষমতায় বিজেপি ।
দিল্লির ফলাফল দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় বদল এনেছে। একঝলকে গেরুয়ার দাপট চোখে পড়ে এই মানচিত্রে । দেশের দক্ষিণ দিকে অবশ্য বিষয়টি আদালা। কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু এবং কেরলা বিজেপি শাসিত নয়। দক্ষিণের পর পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে বিজেপি ক্ষমতায় নেই। উত্তর ভারতের মধ্যে হিমাচল প্রদেশ,জম্মু ও কাশ্মীর এবং পঞ্জাবে ক্ষমতায় নেই বিজেপি বা তাঁর কোনও সহযোগী দল। 2026 সালে অবশ্য এই সমীকরণে বদল আনতে চাইবে বিজেপি । পশ্চিমবঙ্গ তামিলনাড়ু ও কেরলে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। ফল ভালো করতে তৎপর গেরুয়া শিবির।
কেরল এবং তামিলনাডুর জন্য বিষয়টি আলাদা। 1980 সালে কেরলে তৈরি হয়েছে লেফট ডেমক্র্যাটিক ফ্রন্ট। তারপর থেকে বামেদের এলডিএফ এবং কংগ্রেসের ইউডিএফ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ক্ষমতায় থেকেছে । জোট রাজনীতি কেরলে একেবারেই নতুন নয়। 1960 সাল থেকে কখনও বাম আবার কখনও কংগ্রেসের সরকার ছিল ভগবানের আপন দেশে। সেখানে বিজেপি বা এনডিএ কোনওদিনই প্রভাব ফেলতে পারেনি । বামেরা অবশ্য কেরলের ভোটারদের উপর প্রভাব ধরে রাখতে পেরেছে। সাধারণত পাঁচ বছর পরপর সরকার বদলায় কেরলে। প্রায় চার দশক বাদে 2016 সালে পরপর দু'বার বামেরা কেরলে ক্ষমতায় আসে। পিনরাই বিজয়নের নেতৃত্বে ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয় তারা। বিজেপি এই রাজ্যে কোনওদিন নিজের সংগঠন শক্ত করতে পারেনি।
কেরলের প্রতিবেশী রাজ্য তামিলনাড়ুর রাজনীতি সেই প্রথম দিন থেকেই রঙিন। একটা সময় কংগ্রেসের দাপট ছিল। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি কে কামরাজ ছিলেন মুখ্য়মন্ত্রী। তারপর শুরু দ্রাবিড় রাজনীতির যুগ। প্রথমে ডিএমকের প্রভাব ছিল । এরপর ডিএমকে ভেঙে এআইএডিএমকে তৈরি হয়। কামরাজের পাশাপাশি তামিলনাড়ুর আরেক প্রবাদপ্রতিম নেতা পেরিয়ারের কথা বলতেই হবে আলাদা করে । একইসঙ্গে আছেন ইভি রামস্বামী থেকে শুরু করে সিএন আন্নাদুরাইয়ের মতো নেতারাও । যাঁরা তামিল ভাবাবেগের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছেন। তামিল-রাজনীতির সঙ্গে মিশে রয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তাঁদের সঙ্গে সিনে দুনিয়ার নিবিড় যোগাযোগ। প্রথমেই বলতে হবে এমজি রামাচন্দ্রনের কথা। ডিএমকে ভাঙার পর নতুন দলের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। পরে তাঁর স্ত্রী জানকি রামাচন্দ্রনও মুখ্যমন্ত্রী হন। আরও পরে জয়ললিতার হাত ধরে আমূল বদলে যায় রাজ্য-রাজনীতি।
অন্যদিকে, করুণানিধি পেরিয়ার থেকে শুরু করে আন্নাদুরাইয়ের সময় থেকে নিজেকে তামিল রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন । তাঁকে কেন্দ্র করেই তামিল-রাজনীতি আবর্তীত হয়েছে দীর্ঘদিন । মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে এমকে স্ট্য়ালিনের হাতে আছে দলের রাশ। 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে তামিলনাডুর রাজনীতিতে নিজের প্রভাব ফেলতে শুরু করেছেন তিনি। তাঁকে সামনে রেখেই গড়ে উঠেছে সেকুলার প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (এসপিএ) । 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে যেখানে দেশের প্রায় সব জায়গায় বিজেপি দাপট দেখিয়েছিল সেখানে চমকে দেওয়া ফল করেছিলেন স্ট্যালিনরা । 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে 234টি আসনের মধ্যে এসপিএ পায় 159টি আসন ।
দ্রাবিড় রাজনীতির মধ্যে থাকা জাতীয়তাবাদকে কাজে লাগিয়ে তামিলনাড়ুতে সংগঠন বৃদ্ধির সুযোগ বিজেপির ছিল। তবে তা বাস্তবে হয়নি । গত ছ'দশক ধরে দ্রাবিড় ভাবাবেগকে নিয়ে পথ চলা রাজনৈতিক দলগুলি হিন্দি-বিরোধী তামিল জাতিয়তাবাদের কথা বলে গিয়েছে । আর তাই তামিলভূমেও বিজেপি হিন্দি বলয়ের দল হয়েই থেকে গিয়েছে। তামিল ভাবাবেগ আর বিজেপিকে একসারিতে বসাতে পারেনি তামিলনাড়ুর একটা বড় অংশ। সেই প্রেক্ষাপট ধরে বলাই যায় 2026 সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির খুব ভালো কিছু আশা করা উচিত নয়। সে রাজ্যের রাজনীতি এখন যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে তা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় শাসক বিরোধী ভোট কোনওভাবে ভাগাভাগি হলে তাতে লাভ শুধু স্ট্যালিনের। বিশিষ্ট তামিল সুপারস্টার বিজয় তামিলাগা ভেটরি কাজাঘাম (টিভিকে) নামে নতুন দল তৈরি করেছেন। এই দলও যদি স্ট্যালিন-বিরোধীদের ভোটে ভাগ বসায় তাহলে ডিএমকে লাভবান হবে ।