পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / lifestyle

মুঘল সেনার নজর এড়াতে যুদ্ধে নিহত রাজার কাটা মুণ্ডুর উপর প্রতিষ্ঠা হয় কালীর

রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন মুণ্ডমালার চটান থেকে মশাল জ্বেলে ফতে সিংয়ের কাটা মুণ্ডু খুঁজে তা মাটিতে পুঁতে ছিলেন ৷ এখানেই রয়েছে মুণ্ডেশ্বরী কালীর বেদি ৷

Barua Murshidabad Mundeshwari Kali
2024-এর মুণ্ডেশ্বরী প্রতিমা (ইটিভি ভারত)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 31, 2024, 7:19 PM IST

বড়ঞা (মুর্শিদাবাদ), 31 অক্টোবর: মুঘলদের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত রাজার কাটা মুণ্ডুর উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বেদি । প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে সেই বেদির উপরেই পূজিত হয়ে আসছেন বড়ঞা থানার ফতেপুরের মুন্ডেশ্বরী কালী ।

জনশ্রুতি রয়েছে, প্রায় দেড়শো বছর আগে এই বেদিতে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন তান্ত্রিক সাধক কৃষ্ণ দাস । তারপর থেকেই দেবীর মাহাত্ম্য দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে । নিত্যপুজো-সহ প্রতি শনি- মঙ্গলবার বিশেষ পুজো হয় ৷ দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে মুণ্ডেশ্বরী দেবী জাগ্রত হয়ে ওঠেন বলেই বিশ্বাস স্থানীয়দের ৷

জনশ্রুতি বলে, রাজার কাটা মুণ্ডুর উপর এই বেদি তৈরি হয়েছে (ইটিভি ভারত)

বড়ঞা ব্লক তখন ফতে পরগনার অধীন। সেখানকার রাজা ছিলেন ফতে সিং । তাঁর নাম থেকেই ফতেপুর গ্রামের নামকরণ । বর্তমান ময়ূরাক্ষী নদীর গতিপথের উপর ছিল ফতেপুর রাজবাড়ি । পুরাতত্ত্ব বিভাগের খননকার্যে তার বহু নিদর্শনও মিলেছে । প্রাসাদের পাশেই ছিল হাতি ও ঘোড়াশালা । সেই থেকেই হাতিশাল গ্রামের নামকরণ হয়েছে ।

1500 খ্রিষ্টাব্দের শেষ দিকে মুঘল সৈন্যরা রাঢ় বাংলায় হানা দেয়। ফতে সিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হওয়ায় মুঘল সেনাপতি মান সিং তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন । যুদ্ধ হয় পারশালিকা গ্রামের বিশাল ময়দানে । ফতে সিং-সহ তাঁর হাজার হাজার সৈন্য ও পরিবারের সকলেই নিহত হন সেই যুদ্ধে । ময়দান ভেসে গিয়েছিল নিহত সৈন্যদের রক্তের স্রোতে। মাঠে ভরে গিয়েছিল সৈন্যদের কাটা মুণ্ডুতে ৷ তখন থেকে ওই মাঠের নামকরণ হয় মুণ্ডমালার চটান ।

অতীতের সেই মুণ্ডমালার চটান (ইটিভি ভারত)

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন মুণ্ডমালার চটান থেকে মশাল জ্বেলে ফতে সিংয়ের কাটা মুণ্ডু খুঁজে বর্তমান কালীর বেদির নীচে সমাধিস্থ করেন । মুঘল সৈন্যদের চোখে ধুলো দিতে সমাধিস্থলে ফুল ছিটিয়ে দেওয়া হয় । তারপরই সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয় কালীমূর্তি । নাম হয় মুণ্ডেশ্বরী কালী।

বর্তমানে মন্দির ও পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন ফতেপুরের বাসিন্দা শান্তনু সেন । তাঁর কথায়, "মুণ্ডেশ্বরী মায়ের মাহাত্ম্য আজ আর নতুন করে কাউকে বলে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না । এখানকার মা যে জাগ্রত তার বহু প্রমাণ রয়েছে । মানুষের মনে সেই বিশ্বাস গেঁথে রয়েছে ।"

স্থানীয় বাসিন্দা তথা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক সুচিন্ত্য সেন জানান, মুর্শিদাবাদ সংক্রান্ত বহু ইতিহাস গ্রন্থে ফতে সিং ও মুণ্ডেশ্বরী মায়ের বর্ণনা রয়েছে । বছরের পর বছর ধরে মুণ্ডেশ্বরী মা এই গ্রামকে রক্ষা করছেন ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details