কৃষ্ণনগর, 10 নভেম্বর: কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির জগদ্ধাত্রী 'জাগ্রত'! কথিত রয়েছে, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজো শুরু করেন ৷ ঘোড়ার উপর উপবিষ্ট কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির জগদ্ধাত্রী। ঐতিহ্য ও রীতি মেনে আজও সাড়ম্বরে পুজো হয়ে থাকে মা হৈমন্তিকার। জগদ্ধাত্রী প্রতিমাকে কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে বলা হয় 'রাজরাজেশ্বরী' ৷ নবমীর দিন সকাল হতে না হতেই দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ অঞ্জলি দিতে আসেন।
রাজবাড়ির পুজো-
কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর মূল আকর্ষণ রাজবাড়ির পুজো। এখানকার প্রতিমা দেখতে সম্পূর্ণ অন্যরকমের। মূলত ঘোড়ার পিঠে চড়ে থাকেন মা। সেই পুরনো ঐতিহ্য মেনেই আজও পূজিতা 'রাজরাজেশ্বরী'। রবিবার সকাল সাতটা থেকে শুরু হয়েছে সপ্তমীর পুজো। এরপর অষ্টমী এবং নবমীর পুজো হয় ৷ রাজবাড়ির সদস্য অমৃতা রায় জানান, মা এখানে কুমারী বেশে পূজিতা হন ৷ আর তাই অন্য পুজো থেকে রাজবাড়ির পুজো আলাদা ৷
'রাজরাজেশ্বরী'র পুজো (ইটিভি ভারত) রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পুজো
খাজনা দিতে না-পারার কারণে নবাব মীর কাশেমের হাতে বন্দি হয়েছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। তাঁকে পাঠানো হয় বিহারের মুঙ্গেরের জেলে। বন্দিদশা কাটানোর পর তিনি নদীপথে বাড়ি ফিরছিলেন। কৃষ্ণনগরে পৌঁছনোর আগে ধুবুলিয়াতে বাজনা শুনতে পান। যাঁরা নৌকা চালাচ্ছিলেন তাঁদের রাজা জিজ্ঞাসা করেন এই বাজনা কীসের ? তাঁরা উত্তর দেন, দুর্গাপুজোর বিসর্জনের বাজনা। আগে থেকেই রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজত্বে দুর্গাপুজো হয়ে আসছিল। ওই বছর তাঁর বন্দিদশার ফলে দুর্গাপুজো করতে পারেননি রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ৷
রাজবাড়ির জগদ্ধাত্রী প্রতিমা (নিজস্ব ছবি) সে বছর আর দুর্গাপুজোয় অংশ নেওয়া হল না ভেবে তখন মনে মনে খুব কষ্ট পান কৃষ্ণচন্দ্র। বাড়ি আসার পর সেই রাতেই স্বপ্নাদেশ পান। স্বপ্নে তাঁকে দেবী জানান, যেহেতু তিনি দুর্গাপুজো দিতে পারেননি, তাই মা দুর্গার আরও এক রূপ রয়েছে, সেই পুজো তিনি দিতে পারেন। রাজদরবারে এসে পণ্ডিতদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, জগদ্ধাত্রী নামে আরও এক দেবী রয়েছেন ৷ এরপর থেকে দুর্গাপুজোর নবমীর ঠিক একমাস পর কার্তিক শুক্লা নবমীতে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ৷ 265 বছর ধরে চলে আসছে এই পুজো।
জগদ্ধাত্রী পুজো বিখ্যাত চন্দননগরে-
তৎকালীন সময় চন্দননগরের জমিদার ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ। তবে তখন চন্দননগরের নাম ছিল ফরাসডাঙা। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করলেন। ঠিক তখন ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীও চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন। তবে চন্দননগরে দুর্গাপুজোর মতোই চারদিন পুজো হলেও কৃষ্ণনগরে মাত্র একদিন জগদ্ধাত্রী পুজো হয়ে থাকে।"