পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / lifestyle

চুরুলিয়ার ভট্টাচার্য পরিবারের কালীপুজো প্রাঙ্গণই বিদ্রোহী কবির 'তারা ক্ষ্যাপা' হওয়ার আঁতুড়ঘর

কীভাবে শ্যামাসঙ্গীতের রচনার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন বিদ্রোহী কবি নজরুল ? তারক চট্টোপাধ্যায়ের বিশেষ প্রতিবেদন ৷

KALI PUJA 2024
বিদ্রোহী কবির শ্যামাসঙ্গীতের অনুপ্রেরণা (ইটিভি ভারত)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 30, 2024, 6:58 PM IST

Updated : Oct 30, 2024, 7:44 PM IST

আসানসোল, 30 অক্টোবর:'আমি সাধ করে মোর গৌরী মায়ের নাম রেখেছি কালী, পাছে লোকের দৃষ্টি লাগে মাখিয়ে দিলাম কালি...'৷ 'আমার হৃদয় হবে রাঙাজবা দেহ বিল্বদল, মুক্তি পাবো ছুঁয়ে মুক্তকেশীর চরণতল...' ৷ হিন্দু না-হয়েও এ রকম হাজার হাজার শ্যামাসঙ্গীত রচনা করেছেন বিদ্রোহ কবি কাজী নজরুল ইসলাম ৷ শুধু তাই নয়, এই সব গানের সুরও দিয়েছেন নিজেই ৷ ভিন্ন ধর্মের হয়েও কীভাবে শ্যামাসঙ্গীত রচনার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন বিদ্রোহী কবি ? সে কথাই তুলে ধরল ইটিভি ভারত ৷

আসানসোলের জামুড়িয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম চুরুলিয়ায় দরিদ্র পরিবারে জন্ম বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের। ছোটবেলায় নজরুল পরিচিত ছিলেন 'তারা ক্ষ্যাপা' নামে। এই চুরুলিয়া গ্রামের ভট্টাচার্য পরিবারের কালীপুজো থেকেই নজরুল পেয়েছিলেন শ্যামাসঙ্গীত লেখার অনুপ্রেরণা। দরিদ্র পরিবারে জন্ম 'দুখু মিঞা' নজরুলের। বাবা ছিলেন মসজিদের ইমাম। চুরুলিয়ায় মুসলমান পরিবারে জন্ম নিয়েও নজরুল হয়ে উঠেছিলেন কালীপ্রেমী। লিখেছেন প্রচুর শ্যামাসঙ্গীত।

নজরুলের শ্যামাসঙ্গীত লেখার অনুপ্রেরণা (ইটিভি ভারত)

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, নজরুলের জন্মের আগে তাঁর বাবা মায়ের বেশ কয়েকটি সন্তান মারা যায় ৷ তখন চুরুলিয়ার তন্ত্রসাধক ভট্টাচার্য পরিবারের পরামর্শে তারাপীঠে যান নজরুলের পরিবার। এরপরেই নজরুলের জন্ম হয় ৷ পরিবারের লোকেরা মনে করেন, তারা মায়ের কৃপাতেই নজরুল জন্মের পরে সুস্থ ছিলেন। তাই তাঁর নাম দেওয়া হয় 'তারা ক্ষ্যাপা'।

চুরুলিয়া গ্রামে ভট্টাচার্য পরিবারের কালীপুজো প্রায় 350 বছরের পুরোনো। মন্দিরের পুরোহিত অশোক কুমার ভট্টাচার্য জানান "এখানে তন্ত্র মতে কালীপুজো হয়। শুধু তাই নয়, মন্দিরে উচ্চারিত মন্ত্র কারোর শোনার অধিকার নেই। সেই কারণে মন্দিরে মধ্যরাত্রিতে যখন কালীপুজো শুরু হয়, তখন মন্দির চত্বরে শ্যামাসঙ্গীত গাওয়া হয়। বাজানো হয় উচ্চস্বরে ঢাক।"

চুরুলিয়ার 350 বছরের কালীপুজো (ইটিভি ভারত)

কিশোর বয়স থেকেই নজরুল ইসলাম ভট্টাচার্য পরিবারের কালীপুজোয় যেতেন ৷ পুজো দেখতেন। সারারাত বসে থাকতেন। শ্যামাসঙ্গীত শুনতেন। যাত্রার আসরে যাত্রা দেখতেন। চুরুলিয়ার গ্রামবাসীদের মতে এই ভট্টাচার্য পরিবারের কালীপুজো থেকেই নজরুলের কিশোরবেলা থেকেই মা কালীর প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ে এবং তিনি শ্যামাসঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হন।

ভট্টাচার্য পরিবারের প্রবীণ সদস্য নাড়ুগোপাল ভট্টাচার্য বলেন, "ভট্টাচার্য পরিবারের এই কালীমন্দিরে বসেই নজরুল অনেক শ্যামাসঙ্গীত রচনা করেছেন এবং তিনি নিজেও এখানে শ্যামাসঙ্গীত গিয়ে গিছেন।" যুগ পেরিয়েছে, সময় পেরিয়েছে। কিন্তু ভট্টাচার্য পরিবারের কালী পুজোয় সেই পারিবারিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আজও অক্ষুন্ন। এই কালী মন্দিরে গিয়ে দেখা গেল, কাজী নজরুলের পরিবারের সদস্য তথা সম্পর্কে নজরুলের নাতি সুবর্ণ কাজী সেখানে গিয়ে নজরুলের রচিত শ্যামাসঙ্গীত গাইছেন।

চুরুলিয়ার ভট্টাচার্ষ পরিবারের কালীপুজো (ইটিভি ভারত)

সুবর্ণ কাজে জানান, "কাজী নজরুল ইসলাম এক বিস্ময় এবং তিনি ঈশ্বরেরই উপহার। তিনি মুসলিম হয়েও সাধক রামপ্রসাদের পরে এত নির্ভূল শ্যামাসঙ্গীত রচনা করেছেন। তবে নজরুল জীবনে যাই করেছেন, তার সম্পূর্ণটাই কিন্তু এই চুরুলিয়া গ্রামের অনুপ্রেরণা থেকেই।"

পড়ুন:কালীর সঙ্গে পূজিত হন শ্রীকৃষ্ণও, কৃষ্ণকালী ঘিরে উন্মাদনা

Last Updated : Oct 30, 2024, 7:44 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details