পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / lifestyle

পলাশীর যুদ্ধের সাক্ষী দেবসরকার বাড়ি, জানুন 280 বছরের পুজোর বিশেষত্ব

280 বছর ধরে দেব সরকার বাড়িতে হয়ে আসছে দুর্গাপুজো ৷ পলাশীর যুদ্ধের সাক্ষী দেবসরকার বাড়ি ৷ ইটিভি ভারত তুলে ধরল পুজোর বিশেষত্ব ৷

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 5 hours ago

DURGA PUJA 2024
ইটিভি ভারত তুলে ধরল পুজোর বিশেষত্ব (ইটিভি ভারত)

ফলতা, 8 অক্টোবর:আর কিছু সময় পরই মা দুর্গার আরাধনায় মেতে উঠবে বাঙালিরা ৷ দুর্গাপুজোর ইতিহাসের দিকে তাকালে চোখের সামনে ভেসে ওঠে অতীতের কাহিনি ৷ এ যেন জীবন্ত এক গল্প ৷ 280 বছর ধরে আজও উমার আরাধনায় মেতে ওঠে ফলতার মালা গ্রামের দেবসরকার বাড়ি ৷

পুজোর ইতিকথা:পলাশীর যুদ্ধের প্রাক্কালে মালার দেবসরকার বংশের উত্থান ঘটে । আনুমানিক 350 বছর আগে বিহারীলাল দেব ব্যাবসায়িক সূত্রে ফলতার মালা গ্রামে আসেন। তিনি ছিলেন কলকাতার সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়িক পরিবারের সদস্য। তিনি মালা নিবাসী নাগ বংশের মেয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং মালা গ্রামেই নিজ বসতি নির্মাণ করেন। রাজ প্রাসাদের মতো বড় বাড়িটা ছিল জলাশয় দ্বারা বেষ্টিত। সামনের অংশ ছিল উন্মুক্ত। এই কারণে শত্রুপক্ষ এই বাড়িতে সহজে আক্রমণ করতে পারতেন ৷ কলকাতা থেকে দক্ষিণবঙ্গের সুন্দরবনের লাট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল ব্যবসা বাণিজ্য।

পলাশীর যুদ্ধের সাক্ষী দেবসরকার বাড়ি (ইটিভি ভারত)

গাঙ্গেয় জমিতে ধানের সুফলের জন্য ফলতায় বিশাল ধানের আড়ত ছিল এবং ধান ব্যবসার মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। বিহারীলাল দেব প্রতিষ্ঠা করেন কুলদেবতা শ্রী শ্রী লক্ষ্মীজনার্দন জিউর মন্দির। পরে ব্যাবসা এবং জমিদারী বৃদ্ধির পর বিহারীলাল দেবের পুত্র কালিকৃষ্ণ দেব 1152 বঙ্গাব্দে প্রথম এই অঞ্চলে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। পরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি 'সরকার' উপাধিতে ভূষিত করেন।

জানুন 280 বছরের পুজোর বিশেষত্ব (নিজস্ব ছবি)

একসময় সাতদিন ব্যাপী যাত্রাপালা ও কবিগান হত ৷ মহিলাদের মনোরঞ্জনের আলাদা ব্যবস্থা থাকত ভিতর মহলে। একসময় ইংরেজ সাহেবরা নিমন্ত্রিত থাকতেন এই দুর্গোৎসবে। চারণকবি মুকুন্দ দাস একসময় পালাগান করেছিলেন এই দেব সরকার বাড়িতে। এবছর এই পুজো 280তম বর্ষে পদার্পণ করল। এই বংশের নবম পুরুষ পর্যন্ত এই ঐতিহ্য বংশ পরম্পরায় বজায় রেখে চলেছে।

পুজোর বিশেষত্ব:প্রতিবছর জন্মাষ্টমীর পরের দিন অর্থাৎ নন্দোৎসবের দিন প্রাচীন কাঠামোর উপর 'কাঠামো পুজো' করা হয়। এখানে প্রতিমা এক চালার উপর হয়। একটি সুপ্রাচীন বেলগাছে দেবীর বোধন হয়। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত 131 কিলো চালের নৈবেদ্য হয় এবং বলি প্রথার প্রচলন রয়েছে। দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে দেবসরকার বংশের সমস্ত পরিবার-পরিজন দেশ-বিদেশ থেকে মালা গ্রামে আসেন। এবছরেও নবমীর সন্ধায় থাকছে কিছু বিশেষ চমক ৷

দেব সরকার বাড়ির দুর্গা প্রতিমা (নিজস্ব ছবি)

পুজোপাট:মল্লিকপুরের চক্রবর্তী পরিবার এই দেবসরকার বংশের কুলোপুরোহিত ছিলেন ৷ কিন্তু পরবর্তীকালে, বেলসিংহার মৈত্র পরিবার এই পুজোর পৌরহিত্য করেন। বর্তমানে, মৃৎশিল্পী শ্রীকান্ত চিত্রকর ৷ তিনিই বংশপরম্পরায় এখানে মূর্তি নির্মাণ করেন। আর ঢুলিদাররা বংশপরম্পরায় চাঁদপালার অদূরে সন্তোষপুর থেকে আসেন। প্রাচীন যুগ থেকেই গ্রামের সাধারণ মানুষ এই দুর্গোৎসবের আনন্দ আস্বাদন করতেন।

ABOUT THE AUTHOR

...view details