নিউ অরল্যান্স, 2 জানুয়ারি:চলছিল নতুন বছরের উৎসব । প্রবল গতিতে ধেয়ে এল ট্রাক । আচমকাই ঢুকে পড়ল ভিড়ের মধ্যে। মেক্সিকোর উপকূলে খুব কাছে মিসিসিপি নদীর ধারের আমেরিকার নিউ অরল্যান্স শহর মুহূর্তে হয়ে উঠল 'মৃত্যুপুরী'। মৃতের সংখ্যা 15 ছাড়িয়েছে। আমেরিকা তথা বিশ্বের অন্যতম সেরা গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এই হামলাকে নাশকতা বলেই মনে করছে। নাশকতার বিষয়টি মাথায় রেখেই তদন্ত শুরু হয়েছে। পাশাপাশি জঙ্গি হানার বদলে যাওয়া রূপ ভাবাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তাবড় তাবড় গোয়েন্দা সংস্থার কেষ্টবিষ্টুদের।
'লোন উলফ' ও জঙ্গি আন্দোলনের বদলে যাওয়া ধারা
'লোন উলফ' শব্দটির সঙ্গে বিশ্বের পরিচয় বছর দশেক আগে । সহজ করে বললে মাত্র একজন জঙ্গি যখন কোনও আঘাত হানে, তখন তাকে বলা হয় 'লোন উলফ'। ধরা পড়ার ভয় এড়াতে বা নাশকতার ছক যাতে বানচাল না হয়ে যায় তা নিশ্চিত করতেই একাধিকের বদলে একজন জঙ্গিকে কোনও 'মিশনে' পাঠায় জঙ্গি সংগঠনগুলি। আর একজনকেই যখন আঘাত হানতে হয় তখন বাকি বন্দোবস্তও সেভাবেই করা হয়। ঠিক এই দিক থেকে এই ধরনের হানায় গাড়ির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হয় ।
সঙ্গে গাড়ি থাকা মানে গতিতে সওয়ার হয়ে টার্গেটের কাছাকাছি তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাওযা। তাছাড়া গাড়ির ভিতর থেকে আঘাত হানা অনেকটাই সোজা । জঙ্গি হামলা আটকাতে যদি পুলিশ বা কোনও নিরাপত্তা বাহিনী গুলিও চালায়, তাহলেও অন্তত কিছুটা সময় মেলে গাড়িতে থাকলে। হেঁটে গেলে সেই সুযোগ অনেকটাই কম। প্যারিসের কাছে নিস শহরে 2015 সালের 14 জুলাই বাস্তিল দিবসে এভাবেই ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়ে ট্রাক । প্রাণ যায় কমপক্ষে 84 জনের । তবে গাড়ি নিয়ে হামলার তালিকাটা আরও বড় । গত দু'মাসে তিনবার গাড়ি নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে বিশ্বের তিনটি আলাদা জায়গায়। এমন কায়দায় হামলা আগে কোথায় কোথায় হয়েছে-
ম্যাগদেবর্গ (জার্মানি), 20 ডিসেম্বর 2024— বডদিনের কেনাকাটা চলছিল । ঠিক সেই সময় একটি বাজারে গাড়ি নিয়ে এক ব্যক্তি ঢুকে পড়ল। তাতে কমপক্ষে 7 জনের প্রাণ গেল । আহত হলেন কমপক্ষে 200 জন। তাদের মধ্যে অনেক ভারতীয়ও ছিলেন । ঘটনায় গাড়ির চালককে গ্রেফতার করে পুলিশ । জানা যায়, বছর পঞ্চাশের ওই ব্যক্তি সৌদি আরবের চিকিৎসক । ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করে বেশ কয়েক বছর আগে একটি চরম ডানপন্থী দলের সদস্য হয় সে।
জুহাই (চিন) 11 নভেম্বর, 2024—দক্ষিণ চিনের একটি স্পোর্টস কমপ্লেক্সে ঢুকে পড়ে গাড়ি। সামনে শুধু কালো মাথার ভিড় দেখেও গাড়ির গতি কমাননি বছর 62-র চালক। একের পর মানুষের দেহের উপর দিয়ে প্রবল গতিতে এগিয়ে যেতে থাকে ট্রাক । সরকারি হিসেবেই 35 জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে । শেষমেশ নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে হার মানে চালক। অপরাধের কথাও স্বীকার করে সে । জানা যায় সম্প্রতি তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল । সেই মানসিক চাপ থেকেই এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে সে । তবে এই ঘটনা যে নিছক বৈবাহিক সম্পর্ক ভাঙার হতাশা থেকে তৈরি, তা নাও হতে পারে । ঘটনার সঙ্গে কোনও জঙ্গি-সংগঠনের যোগ আছে কি না, তা নিয়ে এখনও সংশয় কাটছে না চিনের তদন্ত সংস্থার শীর্ষ কর্তাদের ।