ঢাকা, 10 অগস্ট: গত 5 অগস্ট পতন হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ৷ আর তারপর থেকেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা চলছে ৷ জানা গিয়েছে, এর মধ্যে 52টি জেলায় অন্তত 205টি হামলার ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে ৷ আর এই প্রতিটি ক্ষেত্রেই হামলার টার্গেট ছিলেন সে দেশের সংখ্যালঘুরা ৷ এমনটাই জানিয়েছে হিংসা-কবলিত দেশের দুটি সংখ্যালঘু সংগঠন ৷
শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নিয়েছেন 84 বছর বয়সি নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনুস ৷ এরপরই তাঁকে একটি খোলা চিঠি দিয়েছে 'বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ' এবং 'বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ' ৷ জানা গিয়েছে, সোমবার থেকে 52টি জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের উপর কমপক্ষে 205টি হামলা হয়েছে ৷
হিন্দু ঐক্য পরিষদের তিন সভাপতির একজন নির্মল রোজারিও বলেন, "আমরা সুরক্ষা চাই কারণ আমাদের জীবন বিপর্যয়পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আমরা রাতে জাগছি ৷ বাড়ি এবং মন্দির পাহারা দিচ্ছি। আমি আমার জীবনে এমন কিছু দেখিনি। আমরা সরকারের কাছে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনরুদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি।"
পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে দাবি করে রোজারিও ইউনুসকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে হিংসা বন্ধ করে সংকট সমাধানের আহ্বানও জানিয়েছেন ৷ বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে ইউনুসকে ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থান থেকে জন্ম নেওয়া এক নতুন যুগের নেতা হিসেবে স্বাগত জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, "জনগণের বিজয় যখন তার গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তখন আমরা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে লক্ষ্য করছি, একটি মহল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন হিংসা চালিয়ে এই অর্জনকে কলঙ্কিত করার ষড়যন্ত্র করছে।"
এতে আরও বলা হয়েছে, চলমান সাম্প্রদায়িক হিংসা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মধ্যে ব্যাপক ভয়, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছে ৷ এর ফলে আন্তর্জাতিক নিন্দাও শুরু হয়েছে। অবিলম্বে এই পরিস্থিতির অবসানের দাবি জানিয়েছে ঐক্য পরিষদ। ঐক্য পরিষদের সদস্য কাজল দেবনাথ বলেন, "যারা সংখ্যালঘুদের উপর হামলার সঙ্গে জড়িত তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। রাজনৈতিক কারণে কোনও সংখ্যালঘু ব্যক্তির ওপর হামলা হলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। যে কেউ অপরাধ করলে তার বিচার হওয়া উচিত, কিন্তু বাড়িঘর পুড়িয়ে লুটপাট করে বিচার হবে না।"
অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্য এখন অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন বলে দাবি করে তিনি বলেন, "আমিও বন্ধুর বাড়িতে থাকতে বাধ্য হচ্ছি।" বৃহস্পতিবার, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, "তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসার মধ্যে যে কোনও বর্ণভিত্তিক হামলার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। নিশ্চিতভাবেই, আমরা যে কোনও জাতিগত ভিত্তিক আক্রমণ বা সহিংসতার জাতিগত উসকানির বিরুদ্ধে দাঁড়াই ৷"