নয়াদিল্লি, 30 জানুয়ারি:জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধির 77তম মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার ৷ দেশের সীমা ছাড়িয়ে এদিন তাঁকে স্মরণ করছে সারা বিশ্ব ৷ কারণ, তাঁর ভাবনাচিন্তা ও দর্শন ভারত ভূখণ্ড পেরিয়ে অন্য দেশগুলিকেও প্রভাবিত করেছে ৷
মহাত্মার সত্য ও অহিংসার পথে চলার দর্শন পৃথিবীজুড়ে সেইসব মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে, যাঁরা নিপীড়নের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার, সাম্য এবং মুক্তির লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন ৷ আজ, তাঁর প্রয়াণ দিবসে সেরকম চারজনের কথা স্মরণ করছে ইটিভি ভারত ৷
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র
বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ ৷ সমাজে বর্ণবৈষম্যবাদের শিকার আমেরিকার বহু অশ্বেতাঙ্গ নাগরিক ৷ তাঁদের সমানাধিকারের জন্য লড়ছেন এক তরুণ ব্যাপটিস্ট মন্ত্রী । নাম মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ৷ মহাত্মা গান্ধিকে তিনি দেখেননি ৷ কিন্তু তাঁর কথায় মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র নিজের লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা পেলেন ৷ যেন তাঁর জন্যই কথাগুলি বলেছেন মহাত্মা ৷ চিরাচরিত পড়াশোনার সময় মার্টিন লুথার গান্ধির বিষয়ে জনতে পারেন ৷ অন্ধকারের মধ্যে তাঁকে আলো দেখালেন ভারতের এই স্বাধীনতা সংগ্রামী ৷ পরে তিনি মহাত্মার সম্পর্কে বলেছিলেন, "আমাদের অহিংস সামাজিক বদলের যে প্রযুক্তি, তার আলো দেখিয়েছিলেন গান্ধিই ৷" আদর্শ ভালোবাসার প্রতিফলন তিনি খুঁজে পেলেন মহাত্মা গান্ধির সত্যাগ্রহের মধ্যে ৷ ভালোবাসা সেখানে প্রতিশোধে বিশ্বাস করে না ৷ সেখানে সত্যের শক্তি দিয়ে নিপীড়িতদের বাঁচিয়ে তোলে ভালোবাসা ৷ ওয়াশিংটনে 'দ্য মন্টোগোমারি বাস বয়কট' মিছিলটি ছিল গান্ধির অহিংস আন্দোলনের দ্বারা অনুপ্রাণিত ৷
নেলসন ম্যান্ডেলা
দক্ষিণ আফ্রিকার শসিত মানুষের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাও মহাত্মা গান্ধির ভাবাধারায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন ৷ জীবনের প্রথম দিকে আইনজীবী ও সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করার সময় গান্ধির অহিংস আন্দোলনের ভাবাদর্শের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় ৷ মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধিও দক্ষিণ আফ্রিকায় আইনজীবী হিসাবেই তাঁর জীবন শুরু করেছিলেন ৷ সেখানেই তিনি বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অহিংস পন্থা অবলম্বন করেছিলেন ৷
অশ্বেতাঙ্গদের সমানাধিকারের লড়াইয়ে নেলসন ম্যান্ডেলার পথ মহাত্মা গান্ধির থেকে কিছুটা আলাদা ছিল ৷ ম্যান্ডেলা মহাত্মার অহিংস আন্দোলনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধতাকে পছন্দ করতেন ৷ কিন্তু পাশাপাশি তিনি এও বিশ্বাস করতেন যে বর্ণবৈষম্যবাদের নিষ্ঠুর নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে আরও বাস্তবিক করে তুলতে হবে ৷ তিনি একসময় বলেছিলেন, "গান্ধি সবসময় আমার অনুপ্রেরণার উৎস। কিন্তু আমি জানতাম আমাদের সংগ্রামটাকে অন্য পথে পরিচালিত করতে হবে ৷"
এই লড়াইয়ে ম্যান্ডেলার জীবনের 27টি বছর কারাগারের অন্ধকারে কেটে গিয়েছে ৷ কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও তিনি কখনও গান্ধির আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি ৷ জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি বিভক্ত রাষ্ট্রকে সত্য ও ক্ষমার মাধ্যমে জুড়তে চেয়েছিলেন, যা ছিল গান্ধির বিশ্বাস ৷ প্রেসিডেন্ট ম্যান্ডেলার জমানা ছিল সুবিচার ও সমানাধিকারের প্রতি দায়বদ্ধ ৷ ম্যান্ডেলার মধ্যে বিশ্ব শুধু একজন নেতাকেই দেখেনি, তাঁর মধ্যে স্বয়ং গান্ধি বেঁচে ছিলেন, যিনি ঘৃণা ও বিভাজন মুক্ত বিশ্বের স্বপ্ন দেখতেন ৷