হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াকে তেহরানে বুধবার হত্যা করা হয়েছে । 1980-র দশকের শেষের দিকে হামাসে প্রথম যোগদান ও পরবর্তী দশকগুলিতে শীর্ষস্থানে পৌঁছানোর পর হানিয়া এই গোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের সিনিয়র নেতা ছিলেন । হানিয়া দীর্ঘদিন ধরে এই জঙ্গি গোষ্ঠীর রাজনৈতিক নেতা ছিলেন ।
1962 সালের 29 জানুয়ারি ইসমাইল হানিয়া গাজা উপত্যকার শাতি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন । বহু বছর ধরে গাজার ঘনবসতিপূর্ণ উপকূলীয় ছিটমহলকে কেন্দ্র করে ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে । প্যালেস্তাইনের বাসিন্দাদের রাষ্ট্রের জন্য লড়াইয়ের জেরে তৈরি হওয়া যে দুর্দশা ও বাধার সম্মুখীন হতে হয়, হানিয়া শরণার্থী শিবিরে বেড়ে ওঠার সময় তা প্রত্যক্ষ করেছেন । একজনকেই বিয়ে করে তিনি 13 জন সন্তানের পিতা হয়েছেন ৷
তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ইউএনআরডাব্লুএ দ্বারা পরিচালিত সংস্থা থেকে হয়েছে ৷ ইউএনআরডাব্লুএ হল ইউনাইটেড নেশনস রিলিভ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস ৷ গাজার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আরবি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন ৷ সেখানেই তিনি হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন । উপরন্তু, মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গেও তার সম্পর্ক ছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিষদের সংগঠনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ।
শৈশব এবং রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া
আশকেলনের (এখন ইজরায়েলে অবস্থিত) আশেপাশে তাঁদের গ্রাম ছিল ৷ 1948 সালে সেখান থেকে উৎখাত হন তাঁর প্যালেস্তানীয় আরব পিতামাতা ৷ সেই মা-বাবার সন্তান হানিয়া গাজা উপত্যকার আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে জন্ম নেন এবং সেখানেই বেড়ে ওঠেন ।
হানিয়া প্যালেস্তাইনের শরণার্থীদের জন্য তৈরি ইউনাইটেড নেশনস রিলিভ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি পরিচালিত স্কুলে পড়াশোনা করেছেন ৷ ওই স্কুলই পড়ুয়াদের খাবার ও চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে থাকে ৷ হানিয়া 1981 সালে গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি সাহিত্য অধ্যয়ন শুরু করেন । উপরন্তু, তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে যুক্ত একটি ইসলামী ছাত্র সংগঠনের সভাপতি হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন ।
1988 সালে ইসলামপন্থী সংগঠন হামাস যখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তখন হানিয়া ছিলেন তার কনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন । তিনি গ্রুপের আধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন । 1988 সালে হানিয়াকে ইজরায়েলি কর্তৃপক্ষ আটক করে এবং প্রথম ইন্তিফাদাতে (ইজরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ) জড়িত থাকার কারণে ছয় মাস বন্দি করে রাখে ।
1989 সালে তাঁকে আরও একবার হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল এবং 1992 সাল পর্যন্ত সেখানে তিনি ছিলেন ৷ এর পর তাঁকে ও প্রায় 400 জন ইসলামপন্থীকে ইজরায়েল দক্ষিণ লেবাননে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল । 1993 সালে হানিয়া অসলো চুক্তির পর গাজায় ফিরে যান । দেশে ফিরে তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নিযুক্ত হন ।
রাজনৈতিক সক্রিয়তা ও হামাস
প্যালেস্তাইনের একটি জঙ্গি ও রাজনৈতিক সংগঠন হামাসের উত্থান হানিয়ার রাজনৈতিক গতিপথের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে । 1980-র দশকের শেষদিকে হামাস যখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তখন এর লক্ষ্য ছিল ইজরায়েলি দখলদারিত্বের বিরোধিতা করা এবং সুবিধাবঞ্চিত প্যালেস্তিনীয়দের সাহায্য করা ।
1990-এর দশকের গোড়ার দিকে হানিয়া হামাসের দাতব্য প্রচেষ্টার মাধ্যমে ওই সংগঠনের সঙ্গে সংযুক্ত হন ও পরবর্তীকালে এর রাজনৈতিক শাখার সঙ্গে জড়িয়ে যান ৷ নিজের আনুগত্য ও কাজ দেখিয়েই হামাসের শীর্ষস্থানে পৌঁছে যান হানিয়া ৷
একনজরে ইসমাইল হানিয়ার জীবন
1987-1988: প্রথম ইন্তিফাদার সময় হামাসে যোগদান ৷
1988: ছ’মাসের জেল ।
1989: তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত ।
1992: কারাগার থেকে মুক্তি ও লেবাননে নির্বাসিত ।
ডিসেম্বর 1993: গাজায় ফিরে আসেন ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নিযুক্ত হন ।
1997: হামাসের নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের সহকারী হন ।
সেপ্টেম্বর 2003: গাজা শহরে ইজরায়েলি বিমান হামলার সময় হানিয়া ও ইয়াসিন সামান্য আহত হন ।
এপ্রিল 2004: হামাসের আগের দুই নেতার মৃত্যুর পর হানিয়াকে মাহমুদ জাহহার ও সাইদ আল-সিয়ামের সঙ্গে একটি গোপন ‘সম্মিলিত নেতৃত্বের’ অংশ হিসেবে নিযুক্ত করা হয় ।
26 জানুয়ারি, 2006: প্যালেস্তাইনের আইনসভা নির্বাচনে হামাস ব্যাপক বিজয় লাভ করে । হামাস 76টি আসন জেতে এবং 132 আসন বিশিষ্ট প্যালেস্তানীয় আইন পরিষদে ফাতাহ 43টি আসন পায় ৷ ফলে হামাস সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে ।