2010 সাল থেকে ইরানের বিরুদ্ধে হত্যা, ড্রোন হামলা এবং সাইবার আক্রমণ-সহ অন্তত দুই ডজন হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল ৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিশানা করা হয়েছে তেহরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত কোনও কিছুকে, যাকে ইজরায়েল তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি বলে মনে করে । 2022 সালে ইরানের ক্রমবর্ধমান উন্নত ড্রোন কর্মসূচির অংশ ছিল এমন দুটি কেন্দ্র ড্রোন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ।
2010 সাল থেকে ইরানের উপর ইজরায়েলের আক্রমণের একটি টাইমলাইন নীচে দেওয়া হল...
12 জানুয়ারি, 2010: তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক মাসুদ আলি মোহাম্মদী একটি মোটরসাইকেলে রাখা রিমোট-নিয়ন্ত্রিত বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন । তিনি কাজে যাওয়ার জন্য উত্তর তেহরানের বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ডিভাইসটির বিস্ফোরণ ঘটে । সরকার আলি মোহাম্মদীকে একজন পরমাণু বিজ্ঞানী হিসেবে বর্ণনা করলেও বলেছে যে, তিনি ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার জন্য কাজ করেননি । ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে ।
29 নভেম্বর, 2010: তেহরানের শাহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পারমাণবিক ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি অধ্যাপক মাজিদ শারিয়ারি কর্মস্থলে যাওয়ার পথে তাঁর গাড়িতে নিহত হন । বিস্ফোরণে তাঁর স্ত্রী আহত হন । ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান আলি আকবর সালেহি বলেন যে, শারিয়ারি দেশের অন্যতম বড় পারমাণবিক প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, কিন্তু এর থেকে বিস্তারিত কিছু তিনি বলেননি । হত্যাকাণ্ডের বিবরণ ভিন্ন । একজন পশ্চিমী গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞ বলেন যে, গাড়িতে আগে থেকেই একটি বিস্ফোরক লাগানো হয়েছিল এবং দূর থেকে সেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয় ৷ ইরানি মিডিয়া জানিয়েছে যে, একই দিনে মোটরবাইকে থাকা ব্যক্তিরা শারিয়ারি এবং আরেক বিজ্ঞানী ফেরেদুন আব্বাসি দাভানির গাড়িতে বোমা লাগিয়েছিল ।
23 জুলাই, 2011: তেহরানে একটি মোটরসাইকেলে থাকা দুই বন্দুকধারী গুলি করে হত্যা করে জাতীয় নিরাপত্তা গবেষণা কেন্দ্রে কর্মরত একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার দারিয়াস রেজাইনেজাদকে । রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রাথমিকভাবে ওই ব্যক্তিকে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডরিয়াস রেজাই হিসেবে শনাক্ত করে । কয়েক ঘণ্টা পর রাষ্ট্রীয় মিডিয়া সেই স্বীকারোক্তি থেকে পিছু হটে এবং বলে যে, হত্যা করা হয়েছে ইলেকট্রনিক্সের ছাত্র দারিয়াস রেজাইনেজাদকে । উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাফারালি বারাতলু দাবি করেন যে, তিনি পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত নন । কিন্তু একজন বিদেশি সরকারি কর্মকর্তা এবং রাষ্ট্রসংঘের একজন প্রাক্তন পারমাণবিক পরিদর্শক অভিযোগ করেছেন যে, রেজাইনেজাদ হাই-ভোল্টেজের সুইচগুলিতে কাজ করছিলেন, যেগুলি পারমাণবিক ওয়ারহেড ট্রিগার করে বিস্ফোরণ শুরু করার প্রয়োজনীয় পার্টস । ইরান এই হত্যাকাণ্ডের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েলকে দায়ী করেছে ।
11 জানুয়ারি, 2012:কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক মোস্তফা আহমাদি রোশন উত্তর তেহরানে তাঁর গাড়িতে বিস্ফোরণে নিহত হন । একটি মোটরবাইকে চড়ে দুইজন তাঁর গাড়িতে বোমা রেখেছিল ৷ বিস্ফোরণে রোশন ও তাঁর গাড়ির চালকের মৃত্যু হয় এবং ঘটনাস্থলে অন্তত দুইজন আহত হন বলে জানা যায় । নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আহমাদি রোশনকে চিহ্নিত করে ইরান । তারা এই হত্যার জন্য ইজরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে । তেহরানের ডেপুটি গভর্নর সাফারালি বারাতলু দাবি করেন, "বোমাটি একটি চুম্বক ছিল এবং এটি পূর্বে বিজ্ঞানীদের হত্যার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল ৷ এটা ইজরায়েলীদেরই কাজ ।"
31 জানুয়ারি, 2018:একটি মোসাদ দল তেহরানের একটি গুদামে অভিযান চালায়, যেখানে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির একটি বিশাল সংরক্ষণাগার রয়েছে । দলটি প্রায় 50,000টি পৃষ্ঠা এবং 163টি কমপ্যাক্ট ডিস্ক দেশের বাইরে পাচার করে । 30 এপ্রিল ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছিলেন যে, ইজরায়েল প্রায় 100,000 গোপন ফাইল পেয়েছে ৷
2 জুলাই, 2020: একটি বিস্ফোরণ নাতাঞ্জে ইরানের প্রধান পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ সাইটের ব্যাপক ক্ষতি করে এবং প্রোগ্রামটিকে কয়েক মাস পিছিয়ে দেয় । বিস্ফোরণটি উন্নত আইআর-4 এবং আইআর-6 সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদনকারী একটি কারখানাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা 2015 পারমাণবিক চুক্তির অধীনে অনুমোদিত আইআর-1 সেন্ট্রিফিউজের থেকে দ্রুত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারে
27 নভেম্বর, 2020:তেহরানের প্রায় 40 মাইল পূর্বে রাস্তার ধারে হামলায় একজন বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ নিহত হন । পশ্চিমী এবং ইজরায়েলি গোয়েন্দারা দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করছিলেন যে, ফাখরিজাদেহ ইরানের গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির জনক । তাঁকে প্রায়শই আমেরিকান পারমাণবিক বোমার জনক জে রবার্ট ওপেনহাইমারের সঙ্গে তুলনা করা হয় । তিনি তাঁর কেরিয়ারের বেশিরভাগ সময় নিজের লো প্রোফাইল বজায় রেখে চলতেন । 2007 সালে রাষ্ট্রসংঘ এবং 2008 সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত ইরানেও তাঁর নাম বিশেষ পরিচিত ছিল না ।