হায়দরাবাদ, 28 সেপ্টেম্বর:ইজরায়েলের তরফে শনিবারই দাবি করা হয়েছে হিজবুল প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে নিকেশ করা হয়েছে ৷ তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও একাধিক বিখ্যাত অপারেশন এবং গুপ্তহত্যার নজির রেখেছে ইজরায়েল যা গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে ৷ এক নজরে ইজরায়েলি অপারেশন এবং হত্যাকাণ্ডের তালিকা দেখে নিন-
অ্যাডলফ আইচম্যান:হিটলার জমানার মধ্যগগনে 6 মিলিয়ন ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় অ্যাডলফ আইচমানের সরাসরি ভূমিকা ছিল বলে মনে করেন অনেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি অবশ্য মিত্রবাহিনীর হাতে বন্দী হয়েছিলেন ৷ পরে আর্জেন্টিনায় পালিয়ে যান। প্রায় এক ডজন মোসাদের এজেন্ট এর সঙ্গে জড়িত ছিল ৷ ইজরায়েলে বিচার করা হয়েছিল তার ৷ 1962 সালে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল আইচম্যানকে।
মোসাদের অপারেশন: 11 জন ইজরায়েলি ক্রীড়াবিদকে অপহরণ ও হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অভিযান চালানো হয় ৷ 1972 সালের সেপ্টেম্বরে মিউনিখ অলিম্পিকে প্যালেস্তাইন জঙ্গিরা এই অপহরণ করে। 16 অক্টোবর, 1972-এ দুই মোসাদ এজেন্ট পিএলও ইতালি প্রতিনিধি আবদেল ওয়ায়েল জাওয়াইটারকে গুলি করে ৷ 1973 সালের 9 এপ্রিল মোসাদ এবং আইডিএফ বেইরুটে একটি যৌথ অভিযান শুরু করে যার মধ্যে একটি মিসাইল বোট এবং নৌকার ছোট বহর যা লেবাননের সমুদ্র সৈকতে ঘুরছিল ৷ এরা ফাতাহর গোয়েন্দা শাখার প্রধান মহম্মদ ইউসুফ আল-নাজ্জার (আবু ইউসুফ)-কে বের করে নিয়ে যায় ৷ যারাই ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর পরিচালিত করে ৷ এহুদ বারাক, যিনি পরে প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন কমান্ডো অভিযানের নেতৃত্ব দেন। 27 জুন, 1976, একটি বিমান ফ্রান্স এয়ারবাস A300 248 জন যাত্রী নিয়ে ছিনতাই হয়৷ পপুলার ফ্রন্ট ফর লিবারেশন অফ প্যালেস্তাইন–এক্সটারনাল অপারেশনস এবং দুই জার্মান বিপ্লবী সেলের সদস্যরা। ছিনতাইকারীরা 40 জনের মুক্তি দাবি করেছিল পণবন্দীদের বিনিময়ে।
আবু জিহাদ (1988):খলিল আল-ওয়াজির, আরব বিশ্বে আবু জিহাদ নামে বেশি পরিচিত ছিলেন । প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও)-র অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্বও বটে ৷ বছরের পর বছর ধরে, তিনি পিএলও চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাতের ডেপুটি ছিলেন। তাঁকে গুলি করা হয়েছিল ৷ তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসে ইসরায়েলি এজেন্টদের একটি কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়েছে। 1988 ইজরায়েল লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে একাধিক আক্রমণে তার জড়িত থাকার অভিযোগ করেছে।
আব্বাস আল-মুসাভি:হিজবুল্লা মহাসচিব ছিলেন আব্বাস আল-মুসাভি ৷ ইজরায়েলের আইডিএফ হেলিকপ্টার যাওয়ার সময় তাঁর কনভয়কে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ চালালে নিহত হন তিনি ৷ ঘটনায় আরও 6 জন নিহত হয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী এবং ছেলে-সহ। মুসাভি, যিনি হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি-জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন 1991 সালে তাঁর হত্যার দিন পর্যন্ত।
ফাথি শাকাকি:প্যালেস্তাইন ইসলামিক জিহাদের নেতা। ইজরায়েলের অভিযোগ, তিনি ইজরায়েলে সাধারণ মানুষ এবং সেনাদের উপর একাধিক হামলার জন্য দায়ী। তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল 1995 সালের 26 অক্টোবর মাল্টায় ৷
ইয়াহিয়া আইয়াশ:ইসলামি জঙ্গিদের একটি শাখার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ৷ তৎকালীন পিএলও-শাসিত প্যালেস্তাইনে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হয় ইয়াহিয়া আইয়াশ ওরফে দ্য ইঞ্জিনিয়ার ৷ জানা যায়, 1996 সালের 5 জানুয়ারি তাঁর নিজের মোবাইল ফোনটিই হাতে বিস্ফোরণ হয়। তার জেরেই তার মৃত্যু হয় ৷ এর পাল্টা হামাস ফেব্রুয়ারি মাসে 9 দিনে ইজরায়েলের তিনটি শহরে আত্মঘাতী হামলা চালায় ৷ 59 জন নিহত হয় সে সময় ৷
শেখ আহমেদ ইয়াসিন:হামাসের আধ্যাত্মিক নেতা ছিলেন শেখ আহমেদ ইয়াসিন ৷ 2004 সালের 22 মার্চ হেলিকপ্টারে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয় ৷ গাজা শহরে তিনি একটি মসজিদ থেকে যাচ্ছিলেন ৷ 2003 সালে হামাসের বাড়িতে থাকা অবস্থায় ইজরায়েল তাকে হত্যার চেষ্টা করে ৷ তার মৃত্যুতে ব্যাপক প্রতিবাদ হয় ৷
আবদেল-আজিজ আল-রান্টিসি:গাজায় একটি গাড়িতে ইজরায়েলি হেলিকপ্টার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ৷ হামাস নেতা আবদেল-আজিজ আল-রান্টিসিকে 17 এপ্রিল, 2004-এ হত্যা করা হয়। তার দুই দেহরক্ষীও নিহত হয়। হামাস নেতৃত্ব এরপরই আত্মগোপন করে ৷ এমনকী রান্টিসির উত্তরসূরির পরিচয়ও গোপন রাখা হয়। হামাস নেতা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তার হত্যাকাণ্ড ঘটে ৷ আহমেদ ইয়াসিনের পরই দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি ৷
আদনান আল-ঘৌল:ইজরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের অন্যতম বোমারু নিহত হয় ৷ 2004 সালের 21 অক্টোবর গাজায় হত্যা করা হয় তাকে। আদনান ঘৌল হামাসের সেনাবাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড বলে পরিচিত ছিল ৷
ইমাদ মুগনিয়েহ (2008):12 ফেব্রুয়ারি, 2008 ইমাদ মুগনিয়াহ সম্ভবত মোসাদ এবং ইজরায়েলের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী ছিলেন গত কয়েক দশক ধরে। বড় সন্ত্রাসী হামলারও পরিকল্পনা করেছিলেন ৷ বিশেষ করে গাড়িতে বোমা হামলা ৷ হিজবুল্লার একজন শীর্ষস্থানীয় সামরিক কমান্ডারও ছিলেন ৷ একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করা হয় ৷ 2008 সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিখোঁজ ছিল ৷
নিজার রায়ান (2009):হামাসের সবচেয়ে কট্টরপন্থী নেতা হিসাবে বিবেচিত একজন ধর্মগুরু ৷ ইজরায়েলে নতুন করে আত্মঘাতী বোমা হামলার হুমকি দিয়েছিলেন ৷ জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে বোমা হামলায় তার স্ত্রী ও সাত সন্তানও নিহত হয় 1 জানুয়ারি, 2009।
মাহমুদ আল-মাবুহের হত্যা (2010):2010 সালের জানুয়ারিতে, হামাস সামরিক কমান্ডার মাহমুদ আল মাভুহকে দুবাইয়ের একটি হোটেলের ঘরে হত্যা করা হয় ৷
মহম্মাদ আল-জাওয়ারি (2016):15 ডিসেম্বর, 2016 তারিখে, মহম্মদ আল-জাওয়ারিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল ৷ তিউনিসিয়ার স্ফ্যাক্সে তার বাসভবনে বুলেটের বৃষ্টি হয়। জাওয়ারী ছিলেন একজন অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার যিনি হামাসের জন্য ড্রোন তৈরি করেছিলেন এবং সম্ভবত হিজবুল্লার জন্যও।