নিউইয়র্ক, 24 সেপ্টেম্বর: রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনের নথিতে নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার সংক্রান্ত বিশদ অনুচ্ছেদের অন্তর্ভুক্তিকে স্বাগত জানাল দিল্লি ৷ এ বিষয়ে বিদেশসচিব বিক্রম মিশ্রির প্রতিক্রিয়া, "শুরুটা বেশ ভালোই হয়েছে"৷
আন্তর্জাতিক মঞ্চে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্ব আরও বাড়াতে দীর্ঘদিন ধরে সেখানে কিছু পরিবর্তনের পক্ষে সওয়াল করে আসছে বেশ কিছু দেশ ৷ অবশেষে রবিবার নিরাপত্তা পরিষদকে আরও প্রতিনিধিমূলক, স্বচ্ছ, দক্ষ, কার্যকর, গণতান্ত্রিক করে তোলার প্রতিশ্রুতি দেওয়া 'প্যাক্ট অফ দ্য ফিউচার'কে সর্বসম্মতিতে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব নেতারা ৷
ভারত এটিকে কীভাবে দেখছে, এই প্রশ্নের জবাবে বিদেশসচিব বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছেন, যদিও এই বিষয়ে আরও বিস্তর আলোচনার প্রয়োজনীয়তা ছিল, তবে এই মুহূর্তে যে পরিবর্তন হয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ তাঁর কথায়, "এই প্রথম রাষ্ট্রসংঘের কোনও শীর্ষ সম্মেলনের নথিতে নিরাপত্তা পরিষদ নিয়ে একটি বিস্তর অনুচ্ছেদের উল্লেখ করা হয়েছে ৷ সুতরাং, এতদিন ধরে আমরা যা চাইছিলাম, তার সবটা হয়নি ঠিকই, তবে যেটুকু পরিবর্তন হয়েছে, তা ভালো ৷" মিশ্রি আরও বলেন, "কিন্তু এই সবে শুরু ৷ এখনও আমরা সেই অনুচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা শুরু করিনি ৷ যদিও পরিবর্তনের পক্ষে সকলেই সমর্থন জানিয়েছেন ৷"
উল্লেখ্য়, তিন দিনের মার্কিন সফর সেরে ইতিমধ্যেই দেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ সফরের শেষ কর্মসূচি হিসাবে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেন মোদি ৷ নিজের ভাষণে শান্তির বার্তা দিয়েছেন তিনি ৷ মোদির সফর শেষে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন বিদেশসচিব ৷
এই 3 দিনের সফরে ডেলাওয়ারে কোয়াডের বৈঠকে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী ৷ পাশাপাশি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সারেন তিনি ৷ সেখান থেকে লং আইল্যান্ডে প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে কথাও বলেন ৷ মিশ্রির কথায়, "সফর সফল হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ৷"
প্রসঙ্গত, নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে সরব ভারত ৷ দেশের তরফে দাবি, 15টি দেশ নিয়ে 1945 সালে তৈরি হওয়া এই পরিষদের বেশকিছু পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে ৷ বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এই পরিবর্তনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে ৷ সেই সঙ্গে, নিরাপত্তা পরিষদে আমেরিকার স্থায়ী পদের পক্ষেও সওয়াল করে প্রধানমন্ত্রী মোদি ৷ অপরদিকে, এই পরিষদে ভারতের স্থায়ী পদের পক্ষে পালটা সওয়াল করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৷
একদিকে ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ ৷ অন্যদিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ৷ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলির মধ্যে একটি বিভেদের সৃষ্টি করেছে পশ্চিমি দুনিয়ার এই দুই যুদ্ধ ৷ এই বিভেদ আরও প্রবল হয়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যখন এই যুদ্ধে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ৷
এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে ৷ যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, অর্থনীতি, রাজনৈতিক পরিবেশের উপর ৷ রবিবার রাষ্ট্রসংঘে তাঁর ভাষণে মোদি স্পষ্ট জানান, বিশ্বে শান্তি ও উন্নয়নের জন্য নিরাপত্তা পরিষদে সংস্কার অপরিহার্য ৷
রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস জানান, এই বৈঠকে সকল নেতাদের আহ্বানের মূল উদ্দেশ্য় হল, মূল্যবোধের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও বৈধ, ন্যায্য এবং কার্যকর করতে গভীর সংস্কারের বিষয়ে বিবেচনা করা ।