কলকাতা, 12 নভেম্বর: 'সাজানো বাগান' রেখে চিরতরে বিদায় নিলেন বাঞ্ছারাম। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে রবীন্দ্র সদনে হাজির ছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বাংলার নাট্যজগতে এবং সিনেমার ইতিহাসে তাঁর অবদান বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, "আমার আগের প্রজন্মের যাঁরা নাটককার তাঁদের মধ্যে অন্যতম তিনজন বা ত্রয়ী বাদল সরকার, মোহিত চট্টোপাধ্যায় এবং মনোজ মিত্র। প্রথম দু'জন আগেই মারা গিয়েছেন। আর এবার প্রয়াত হলেন মনোজ মিত্র।"
ব্রাত্য বসু আরও বলেন, "বাংলা থিয়েটারের আজ এক অপূরণীয় ক্ষতি হল। প্রায় ষাট বছর ধরে মনোজ মিত্র নাটক লিখছেন ৷ সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার ছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের আরও বড় কোনও পুরস্কার তাঁর পাওয়া উচিত ছিল। পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ পুরস্কার বঙ্গবিভূষণ আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর হাতে তুলে দিয়েছেন। আমি আশা করব কেন্দ্রীয় সরকারও তাঁর ক্ষেত্রে মরণোত্তর অনুরূপ কিছু ভাববেন।"
মনোজ মিত্রকে মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়া উচিত (ইটিভি ভারত) শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "মনোজ মিত্রর সাজানো বাগান নাটকের শেষ দৃশ্যে দেখা যায় বাঞ্ছারামের যখন একশো ছুঁই ছুঁই বয়স তখন সে আত্মহত্যার কথা ভাবে। কিন্তু সে পারে না। কেননা তাঁর পুতি জন্ম নিয়েছে। আগামী প্রজন্মকে পরিচর্যা করার জন্য সে ফের বেঁচে থাকে। একইভাবে তাঁর নাটক আগামী প্রজন্মের জন্য সম্পদ হয়ে থাকবে।"
মনোজ মিত্রর সিনেমা প্রসঙ্গে ব্রাত্য বসু বলেন, "বাঞ্ছারামের বাগান থেকে তাঁর সিনেমায় অভিনয় শুরু হয়। নাটকটি দেখার পর তপন সিনহা ছবিটি বানান। এরপরে বেশ কয়েকটি ছবিতে তপন সিনহা মনোজ মিত্রকে দিয়ে অভিনয় করিয়েছেন। 'আদালত একটি মেয়ে', 'বৈদুর্য রহস্য'। আমরা তাঁকে সত্যজিৎ রায়ের 'ঘরে বাইরে' ছবিতে দেখেছি। অঞ্জন চৌধুরীর 'শত্রু'তেও অভিনয় করেন তিনি।
কিন্তু অঞ্জন চৌধুরীর'র এই ছবিতে অভিনয়ের পরেই মেইনস্ট্রিম বাংলা সিনেমা তাঁকে টাইপ কাস্ট করে ফেলে। কমেডি বা ভিলেনের চরিত্রেই শুধুমাত্র ভাবতে শুরু করে। যেটা উৎপল দত্তর ক্ষেত্রেও হয়েছিল। উৎপল দত্তকে কখনও মহাজন তো কখনও জোতদারের রোল দেওয়া হয়েছে। আর তাঁর পদবী সবসময়ই ঘোষাল। এরকম আরও অনেকের ক্ষেত্রেই হয়েছে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। যাঁর ব্যতিক্রম নন মনোজ মিত্রও। সবশেষে তিনি বলেন, " পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অ্যাকাডেমির প্রাক্তন সভাপতি, সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমির পুরস্কারপ্রাপ্ত, বঙ্গবিভূষণ মনোজ মিত্র বাংলা থিয়েটারের এক অমূল্য এবং চিরস্থায়ী জ্যোতিষ্ক।"