কলকাতা, 19 নভেম্বর: কিংবদন্তী সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার সলিল চৌধুরীর আজ 99তম জন্মবার্ষিকী। 1925 সালে আজকের দিনেই দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার রাজপুর-সোনারপুর অঞ্চলের গাজিপুরে জন্ম হয় তাঁর। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তাঁর নাম চির উজ্জ্বল হয়ে থাকবে ভারতবাসীর মনে।
সলিল চৌধুরী প্রায় 75টির বেশি হিন্দি চলচ্চিত্র, 40টির বেশি বাংলা চলচ্চিত্র, প্রায় 26টি মালয়ালম চলচ্চিত্র, এবং বেশ কিছু মারাঠী, তামিল, তেলুগু, কন্নড়, গুজরাতি, ওড়িয়া এবং অসমীয়া ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে লতা মঙ্গেশকর, মান্না দে, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় এমনকী বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও গান গেয়েছেন তাঁর কথায় ও সুরে।
স্বনামধন্য শিল্পীর জন্মদিনে ইটিভি ভারতের কাছে পুরনো স্মৃতি ভাগ করে নিলেন অভিনেতা, সঙ্গীত শিল্পী তথা চলচ্চিত্র পরিচালক বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "আমার খুব ফেভারিট মিউজিক ডিরেক্টর সলিল চৌধুরী। মুম্বইতেই আলাপ। তারপর থেকেই একটা যোগসূত্র শুরু হয় আমাদের। আমি পুজোর গান গাইতাম সেই সময়। নচিকেতা ঘোষের সুরে গেয়েছি, অমল মুখোপাধ্যায়ের সুরে গেয়েছি। এমনকী এইচএমভি থেকে আমাকে সলিল চৌধুরীর সুরে গান করার কথা বলা হয়। আমি গেয়েছিলাম। চারটে গান গেয়েছিলাম ওঁর সুরে। 'যায় যায় দিন বসে বসে দিন...', 'বাজে ঝনন ঝনন...', 'ঝর ঝর মোর বক্ষের কাছে এসে থেমে গেছে...', 'তুমি আর কি বেদন মোরে হানবে...' গানগুলো খুব হিট হয়েছিল তখন।"
তিনি আরও বলেন, "প্রায়ই গল্প আড্ডা হত আমাদের। আমার বাড়িতে পার্টি হলেও আসতেন সলিল দা। গানও গাইতেন। সুন্দর সম্পর্ক ছিল আমাদের। সলিল দা একজন জিনিয়াস। ভীষণ গুণী বললে কম বলা হবে ৷ হেমন্তদার সঙ্গে সলিল চৌধুরীর গানগুলি অমর হয়ে আছে। 'রানার...', 'পালকি চলে', 'অবাক পৃথিবী'- গানগুলি চির অমর। তাঁর সব গানই অমর।"
অভিনেতা আরও বলেন, "আমারও গানের 'যায় যায় দিন বসে বসে দিন'- গানটার রিমিক্স হয়ে গিয়েছে শুনলাম। ওই গানটায় ওঁর স্ত্রী সবিতা চৌধুরীও গলা দিয়েছিলেন আমার সঙ্গে।" এরপরেই বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় ভাগ করে নেন রাহুল দেব বর্মন এবং সলিল চৌধুরীকে ঘিরে একটি স্মৃতি। তিনি বলেন, "আর ডি বর্মন আমার হিন্দি ছবির গানে সুর করেছিলেন। উনি প্রায়ই রেকর্ডিং-এ সলিল দা'কে নিয়ে আসতেন। আর ডি আমাকে বলেছিলেন, সলিল'দা হলেন সুরের খাজানা ৷ উনি সুরের জাদুকর, অনেক গাইডেন্স পাই সলিল দা'র কাছ থেকে। উনি পাশে বসে থাকলে ভরসা পাই।..."
বিশ্বজিতের কথায়, "বম্বের মিউজিশিয়ানরা সলিল চৌধুরীকে যমের মতো ভয় পেতেন। কোনও নোটেশন না দেখেই বাজিয়ে দিতে পারতেন পিয়ানো। ওঁর গানের একটা নিজস্ব স্টাইল ছিল। শুনলেই বোঝা যেত ওটা সলিল চৌধুরীর গান।লতা মঙ্গেশকর থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়- যাঁকে দিয়েই গান গাইয়েছেন সবই হিট হয়। প্রথম আধুনিক এবং জীবনমুখী গান উনিই তৈরি করেন। বাংলা র্যাপেরও স্রষ্টা উনিই।"
প্রসঙ্গত, সলিল চৌধুরীর জন্মদিন উপলক্ষে কলকাতায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে গানও গাইতে শোনা গিয়েছিল কিংবদন্তী বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে। তিনি বলেন, "খুব মনে পড়ে সলিল দা'কে। আমি কেন কোনও সঙ্গীত প্রেমীই ভুলবেন না তাঁকে। সঙ্গীতের অন্য দিশা দেখিয়ে দিয়েছিলেন সলিল চৌধুরী। ফিল্ম ডিরেকশনও করেন সলিল দা। সর্বগুণ সম্পন্ন ছিলেন। সলিল দা ভারতীয় গণনাট্য সংঘ বা আইপিটিএ-তে (Indian Peoples Theater Association) যোগ দেন। সেই সময় তিনি গণসঙ্গীত লিখতেন এবং সুর করা শুরু করেন। এমন সব গান উনি রচনা করেছেন সেই সময়, যেগুলি চিরকাল মানুষ গাইবে। সঙ্গীতের দুনিয়ায় উনি নীল ধ্রুবতারা হয়ে জ্বলজ্বল করবেন চিরকাল।"